ডেস্ক নিউজ : চলতি বছরের ঈদুল আজহার ছুটি ছিল ব্যতিক্রমী। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে টানা ১০ দিনের ছুটিতে কক্সবাজার ছিল পর্যটকে টইটম্বুর। ঈদের দিন ও পরদিন কিছুটা কম পর্যটক এলেও পরবর্তী দিনগুলোতে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক সমুদ্রসৈকতে ভিড় জমান।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের টানা ছুটিতে কক্সবাজারে গত ৮ দিনে ভ্রমণ করে ৮ লাখের বেশি পর্যটকের। যারা সমুদ্রের নোনাজলের পাশাপাশি মেতেছিলেন জেড স্কী, বিচ বাইক ও ঘোড়ার পিঠে। আর প্রিয় মুহুর্তগুলো বন্দি করেছেন ক্যামেরার ফ্রেমে। যার কারণে ব্যস্ততার শেষ ছিল না সৈকতপাড়ের ব্যবসায়ীদের। একই সঙ্গে ব্যস্ততা কম ছিল না শামুক-ঝিনুক, শুঁটকি, আচার, গহনা ও বার্মিজ পণ্যের দোকানে। আর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও ঘুরে বেড়িয়েছেন মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি, দরিয়ানগর, মিনি বান্দরবান, ইনানী, পাতুয়ারটেক, টেকনাফ সৈকত, রামুর বৌদ্ধ বিহার, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির ও চকরিয়ার ডুলহাজারা সাফারি পার্কে। সেখানে জমজমাট ছিল পর্যটন ব্যবসা।
সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের ফটোগ্রাফার নুর হোসেন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। যার কারণে ভালো ব্যবসা হচ্ছে। প্রতিদিনই ২ থেকে ৩ হাজার আয় করছি পর্যটকদের ছবি তুলে। এখন আমার মতো সৈকতপাড়ের ৭’শ ফটোগ্রাফারের একই অবস্থা।’জেড স্কী চাল সোনা মিয়া বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৭০টি মতো জেড স্কী রয়েছে। ঈদের ছুটিতে আগত পর্যটকরা জেড স্কীতে চড়ে সমুদ্র উপভোগ করছে। যার কারণে আমাদের ব্যবসা ভালো। প্রতিদিনই ৩০ হাজার টাকার ওপরে ব্যবসা হচ্ছে।’
বিচ বাইক চালক রাসেল বলেন, ‘পর্যটক আসাতে আমাদের বিচ বাইকের ব্যবসা ভালো হচ্ছে। পর্যটকরা বিচ বাইকে চড়ছে এবং প্রতি রাইডে ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।’সৈকতের পাড় ঘেঁষে রয়েছে সহ্রসাধিক বার্মিজ পণ্যের দোকান। রয়েছে শামুক-ঝিনুক, শুঁটকি কিংবা চটপটির দোকান। এসব দোকানেও ছিল পর্যটকের সরগরম। গেল ৮দিন সৈকতের ৩টি পয়েন্টের দোকানগুলোতে চলে রমরমা ব্যবসা।
লাবনী পয়েন্টের আনন্দ চটপটির স্বত্বাধিকারী আমান উল্লাহ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে ব্যবসা বেশ ভালো হয়েছে। প্রতিদিনই ২৫ হাজার টাকার ওপরে চটপটি ফুসকা বিক্রি করেছি।’লাবনী পয়েন্টের ছাতা মার্কেটের শাওন বার্মিজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পর্যটকের আগমনে ব্যবসা চাঙ্গা হয়। প্রতিদিনই ৮০ থেকে ১ লাখ টাকার বার্মিজ পণ্য বিক্রি করছি পর্যটকদের কাছে। গত ৮ দিনে প্রায় ৮ লাখ টাকার মতো ব্যবসা হয়েছে।’
মোরশেদ আচার বিতানের স্বত্বাধিকারী মো. মোরশেদ কামাল বলেন, ‘পর্যটকরা কক্সবাজার ঘুরতে আসলেই আত্মীয়-স্বজনদের জন্য বার্মিজ আচার নিয়ে যান। তার আচার বিক্রির ব্যবসা ভালো হয়েছে। গত ৮দিনে ৩ লাখ টাকার বার্মিজ আচার পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেছি।’সুগন্ধা পয়েন্টের শামুক-ঝিনুক বিক্রেতা সালামত উল্লাহ বলেন, অবশ্যই ঈদের ছুটিতে ভালো ব্যবসা হয়েছে। যেটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে। প্রতিদিনই ৩০ হাজার টাকার ওপরে ব্যবসা করেছি। সুগন্ধা পয়েন্টে ৫শ’র ওপরে দোকান রয়েছে, সবাই জমজমাট ব্যবসা করেছে ঈদের টানা ছুটিতে।
এদিকে কক্সবাজারে রয়েছে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। টানা ছুটিতে হোটেলগুলো ছিল পর্যটকে ঠাসা। আর প্রত্যাশা চেয়ে বেশি ব্যবসা হয়েছে বলছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, এবারই প্রথমবারের মতো ছিল ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটি। এমন লম্বা ছুটি আগে কোনোদিন হয়নি। ঈদের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু বন্ধ ছিল যার কারণে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়েছে। কক্সবাজারের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে লাইটিং, পরিবেশ কিংবা আইন শৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে, যার কারণে ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই পর্যটক বরণে প্রস্তুত ছিল। আর ঈদের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন হয়েছে এবং পর্যটকরাও বেশ আনন্দঘন মুহূর্ত কাটিয়েছে। গত ৮ দিনের প্রায় ৮ লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন।
কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মুকিম খান বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাত বলতে ৫ টি খাতকে বিবেচনা করা যেতে পারে। এর মধ্যে আবাসিক খাত হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, খাবারের রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য, সৈকতের কিটকট, বাইক, ঘোড়া, ফটোগ্রাফার, হকার সহ বিভিন্ন খাত, শুঁটকি, বামির্জ সহ নানা ধরনের দোকান এবং দূর পাল্লা পরিবহণ ও অভ্যন্তরের যোগাযোগের যান খাত রয়েছে। পর্যটক ভ্রমণে আসার সঠিক পরিসংখ্যান যেমন ধারণার উপর নির্ভর। পর্যটন খাতে ব্যবসাও ধারণা করে বলা হয়ে থাকে।
মুকিন খান বলেন, আমরা জরিপ করে দেখেছি কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা এই ৫ টি খাতে কমপক্ষে গড়ে ১০ হাজারের বেশি টাকা খরচ করেন। এবার ছুটিতে ৮ লাখ পর্যটক ভ্রমণে আসলে কমপক্ষে ৮ শত কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়েছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। তবে সরকারিভাবে আবাসিক হোটেলের ডাটা অনলাইনে সংগ্রহ করে কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের প্রস্তাব দেন চেম্বারের পরিচালক মুকিম খান।
কিউএনবি/আয়শা/১৫ জুন ২০২৫, /রাত ১০:০৪