বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

আইসিসি বিচারকদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫
  • ৩৯ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আবারও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। এবার তাদের নিশানায় পড়েছেন চারজন বিচারক, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমোদন দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ নিষেধাজ্ঞার কথা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইসিসি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিষ্ঠান, যা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত, অভিযোগ ও বিচার পরিচালনার অবাধ ক্ষমতা দাবি করছে। এটি আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি।’

নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া চার বিচারক হলেন-

  • সলোমি বালুংগি বসা (উগান্ডা);
  • লুস দেল কারমেন ইবানেজ কারানজা (পেরু);
  • রেইন আলাপিনি গাঁসু (বেনিন);
  • বেটি হোলার (স্লোভেনিয়া)।

নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের সব সম্পদ ও সম্পত্তি জব্দ করা হবে এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে কোনো আর্থিক বা পেশাদার সম্পর্ক রাখতে পারবে না।

কোন তদন্তের কারণে এই পদক্ষেপ?

১. আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ তদন্তঃ বিচারক বসা ও কারানজা ২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী ও সিআইএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তের অনুমোদন দিয়েছিলেন।আফগানিস্তান আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র হওয়ায় আদালত নিজেকে এখতিয়ারভুক্ত মনে করে।

২. ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলাঃ বিচারক গাঁসু ও হোলার ২০২৪ সালের নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন।

এ মামলায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলার অভিযোগ রয়েছে, যাকে জাতিসংঘের কিছু বিশেষজ্ঞ ‘গণহত্যার লক্ষণ’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

আইসিসির প্রতিক্রিয়া

এদিকে আইসিসি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে খর্ব করার চেষ্টা। এটি তাদের উৎসাহিত করে যারা মনে করে তারা কোনো জবাবদিহিতার আওতায় পড়বে না।’

আগের ঘটনা

এর আগে, ২০১৯ ও ২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন প্রধান প্রসিকিউটর ফাতু বেনসৌদা এবং আরেক কর্মকর্তা ফাকিসো মোচোচোকোকো তখন নিষেধাজ্ঞার শিকার হন।

তবে, ২০২১-২০২৪ সালে বাইডেন প্রশাসন এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।

এবার দ্বিতীয় মেয়াদে আবার প্রেসিডেন্ট হয়ে ট্রাম্প ‘বিস্তৃত নির্বাহী আদেশ’ জারি করেন, যেখানে যে কেউ আইসিসির তদন্তে সহায়তা করলে তার ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়।

এতে আইসিসি প্রসিকিউটর করিম খান-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, যিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তাকে তদন্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আইসিসিকে ভয়ভীতি দেখানোর কৌশল এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে আন্তর্জাতিক বিচারের ন্যায্যতা ও কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। 

কারণ:

  • আইসিসির আদেশ কার্যকর করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।
  • যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল আইসিসির সদস্য নয়, তাই তারা আইসিসির এখতিয়ার মানে না।
  • কিন্তু আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিন সদস্য হওয়ায় আদালত তাদের ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের তদন্তে আইনগতভাবে সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্ক পুনরায় দৃঢ়ীকরণ

এদিকে এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট জানান দিল যে, ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক তদন্ত থেকে রক্ষার জন্য তারা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক এবং আইনি দুই পথেই তা ঠেকানোর চেষ্টা করছে।

মুলত যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। আইসিসি তার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারবে কিনা—তা নির্ভর করবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ার ওপর। সূত্র: আল-জাজিরা

 

 

কিউএনবি/অনিমা/০৬ জুন ২০২৫, /দুপুর ২:২২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit