বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন

মারচে লিউস কিস্কু এখনও গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের চুল-দাড়ি কাটেন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫
  • ২১ Time View

মোঃ আফজাল হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি : মারচে লিউস কিস্কু। বয়স ৩৮ বছর। পিতা-মৃত চরকা কিস্কু। জন্ম সূত্রে বসবাস দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামে। স্ত্রী বাহামনি মুর্মু এর বয় ২৮ এবং একমাত্র ছেলে মতিরাম কিস্কুর বয়স মাত্র ১ বছর। স্ত্রী বাহামনি মুর্মু কৃষি কাজ করেন। এই সূর্য্যপাড়া গ্রামে প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষই ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর। ২৫ বছর বয়সে সেলুনে চুল কাটার কাজ সেখেন মারচে লিউস কিস্কু। এরপর নিজেই একটি ছোট্ট বাঁশ-বেড়ার চালা দিয়ে আয়না টানিয়ে বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া মোড়ে শুরু করেন সেলুন ব্যবসা। কিন্তু গ্রামের লোকসংখ্যা কম হওয়ায় তেমন আয় রোজগার হচ্ছিল না তার। সারাদিন দোকানে বসে থেকে যেটুকু অর্থ আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। তাই শুরু করেন ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে গ্রামের সব বয়সী মানুষের চুল এবং বড়দের দাঁড়ি ও গোঁফ সেভ করার কাজ।

এজন্য তিনি নিজেই একটি প্লাস্টিকের চেয়ার এবং ব্যাগে তার চুল ও দাঁড়ি কাটার যন্ত্রপাতি সঙ্গে রাখেন। প্রথম দিকে আশ পাশের গ্রামে গিয়ে সারাদিন কাজ করে যায় হতো তা দিয়ে কোনভাবে সংসার চলে যেতো। কিন্তু এখন মারচে লিউস কিস্কু কাজের পরিধি বৃদ্ধি করে সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত অন্তত ৪ থেকে ৬ টি গ্রামের মানুষের চুল ও দাঁড়ি কেটে মোটামুটি তার দিনের রোজগার হয়ে যায়। উপজেলার বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামের মানেস হেম্ব্রমের খোলানে গ্রামের লোকজনের চুল কাটার সময় দেখা মেলে মারচে লিউস কিস্কুর। রাজেন কিস্কু নামের একজন গ্রাহকের চুল কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। চুল ও দাঁড়ি কাটার অপেক্ষায় রয়েছে আরো দুইজন শিশুসহ চারজন। মারচে লিউস কিস্কুর গ্রাহক মানেস হেম্ব্রম বলেন, আগে আশ পাশের হাটে কিংবা ফুলবাড়ী গিয়ে চুল ও দাঁড়ি কাটতে হতো। এতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হতো বাড়ীর শিশু-কিশোরদের চুল কাটা নিয়ে। কিন্তু এখন মারচে লিউস কিস্কু সেলুনের কাজ শেখে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল ও দাঁড়ি কাটার কাজ করায় তার যেমন আয়ের পথ হয়েছে, তেমনি গ্রামের মানুষেরও অর্থ ও সময় দু’টোই বেঁচে যাচ্ছে। পাতরাজ কিস্কু বলেন, আগে ফুলবাড়ী পৌরশহরের সেলুনে গিয়ে চুল ও দাঁড়ি কাটতে হতো।

এতে অনেক বেশি টাকা ব্যয় হতো। এছাড়াও ছিল যাতায়াত ভাড়া। কিন্তুমারচে লিউস কিস্কুর এখন গ্রামে এসে চুল ও দাঁড়ি কেটে দেওয়ায় যাতায়াত ভাড়ার অর্থ যেমন বেঁচে যাচ্ছে তেমনি অল্প টাকায় নিজের চুল ও দাঁড়িয়ে কেটে নেওয়া যাচ্ছে। মারচে লিউস কিস্কু বলেন, ছোটকাল থেকেই কৃষি কাজে তার মন বসতো না। এজন্য তিনি ভিন্ন পেশার খোঁজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন সেলুনের কাজ শিখবেন। যোগাযোগ করেন ফুলবাড়ী পৌরশহরের এক সেলুনের দোকানে। কাজ সেখানো বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন ওই সেলুন মালিক। কিন্তু টাকার অভাবে সেখানে কাজ শেখা হয়নি মারচে লিউস কিস্কুর। এর ছয় মাস পরেই তার বন্ধু লেজারুস কিস্কু ভারতের মুম্বাই থেকে সেলুনের কাজ শিখে ফিরে আসে গ্রামে।

পরে সেলুনের দোকান দেন উপজেলার আটপুকুর হাটে। সেই বন্ধুর কাছে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার এই দুইদিন কাজ শেখেন মারচে লিউস কিস্কু। ছয় মাস কাজ শেখার পর নিজের গ্রামের মোড়ে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার বসিয়ে শুরু করেন সেলুনের ব্যবসা। কিন্তু এতে তেমন আয় রোজগার না হওয়ায় শুরু করেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে চুল ও দাড়ি কাটার কাজ। এতে বড়দের চুল কাটার মজুরি ৩০ টাকা. দাঁড়ি কাটা ২০ টাকা এবং বাচ্চাদের চুল কাটা ২০ টাকা নিয়ে থাকেন। তবে অনেকেই এর চেয়ে কমও মজুরি দিয়ে থাকেন। এতে করে দিনে গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়ে থাকে। এছাড়াও তার স্ত্রীও কৃষি কাজ করায় সেখান থেকেও বাড়তি আয় আসে। সব মিলিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে তাদের সংসার সাচ্ছন্দেই চলে যাচ্ছে।

কিউএনবি/অনিমা/২৪ মে ২০২৫, /সন্ধ্যা ৬:৫৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit