সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন

জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস নিয়ে মুখোমুখি হাসনাত-আসিফ মাহমুদ

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫
  • ১২৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বই লিখেছেন। বইটি প্রকাশের পর পরই এ নিয়ে শুরু হয়েছে বির্তক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

জানা গেছে, বইয়ের একটি অংশে গত বছরের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়নের পরে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছিলেন বলে উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এই উপদেষ্টা। বে বিষয়টি নাকচ করেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

রোববার (১৬ মার্চ) আব্দুল্লাহ হিল বাকি (রুদ্র নাঈম) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে ওই বইয়ের একটি অংশ পোস্ট করেন।

আসিফ মাহমুদের বই থেকে উদ্ধৃত করে ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘একটা পর্যায়ে শাহবাগ থেকে গণভবনের দিকে রওনা দিলাম। সবাই আমাদের রিকশা ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কারওয়ান বাজার মেট্রোস্টেশনের নিচে থাকা অবস্থায় ফোনে খবর পেলাম, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। মুশফিকুল ফজল আনসারীর পরিচিত আশিক খবরটা দিলেন। বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করলাম।’

“ডয়চে ভেলের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ স্বপন ফোন করে যখন প্রশ্ন করলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, আপনাদের মন্তব্য কী?’ তখন নিশ্চিত হলাম, শেখ হাসিনা সত্যিই পালিয়ে গেছেন। এরপর নানা জায়গা থেকে বন্যার মতো ফোন আসতে লাগল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও যোগাযোগ করা হচ্ছিল। তারা বলল, সেনাবাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বসতে চায়। আমাদেরও খোঁজা হচ্ছে। আমি বললাম, আমরা ক্যান্টনমেন্টে যাব না। দেশের ভাগ্য ক্যান্টনমেন্ট থেকে নয়, নির্ধারিত হবে জনতার মঞ্চ থেকে।”

“আমাদের মিছিলের বড় অংশটা সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে ঢুকল। আরেকটা অংশ গেল গণভবনের দিকে। খবর এলো, মানুষ গণভবনে ঢুকে পড়েছে, গণভবন দখল হয়ে গেছে। সংসদ ভবন এলাকায় অনেক মানুষের মধ্যে পড়ে গেলাম। সংসদ ভবনের সামনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমি আর নাহিদ ভাই বক্তব্য দিলাম। পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ আমাদের বক্তব্য শুনল। আমরা ভাবলাম, এমন বিভ্রান্তিকর অবস্থায় আমাদের দিক থেকে একটা বক্তব্য যাওয়া উচিত।”

বইয়ে আসিফ মাহমুদ লেখেন, “আমরা কারওয়ান বাজারে বার্তা সংস্থা এএফপির কার্যালয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সংসদ ভবন এলাকা থেকে বের হওয়া ছিল কঠিন। আমাদের পেয়ে লোকজন আনন্দ উদ্‌যাপন করছিল। কোনোভাবেই আমাদের ছাড়ছিল না। জনসমুদ্রের কারণে রাস্তা দিয়ে এগোনো কঠিন হয়ে পড়েছিল। কেউ একজন একটা সিএনজি নিয়ে এলো। সিএনজিতে করে কারওয়ান বাজারে এএফপির কার্যালয়ে যাওয়ার পথে ফার্মগেটে যানজটে আটকে যাই। অগত্যা নেমে হেঁটে এগোতে থাকি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “খবর পেলাম, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। সেখানে ক্ষমতা পালাবদলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। মনে হয়েছিল, এমন একটা ঐতিহাসিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের সব সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে প্রবীণ রাজনীতিবিদেরা ঠিক কাজ করছেন না। ব্যাপারটা আমাদের ভালো লাগেনি। অনেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ বলেন, যারা সেখানে যাবেন, তাদের জাতীয় বেইমান ঘোষণা করা হোক। আমরা বললাম, এখন এসবের দরকার নেই, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। কীভাবে কী হবে, সরকার গঠিত হবে, তার রূপরেখা তৈরি করে আমরা একটা সংবাদ সম্মেলনের পরিকল্পনা করলাম।”

আব্দুল্লাহ হিল বাকি আরও উল্লেখ করেন, “চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে গিয়ে শুনলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। শুনে আমার মনটা খুবই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহকে ফোন করে বললাম, ক্যান্টনমেন্টে গেলে আপনাদেরও জাতীয় বেইমান ঘোষণা করা হবে।”

শেষে তিনি অন্তর্বর্তীকালী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার লেখা ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইটির নাম উল্লেখ করেন।

তবে শেষ অংশে আসিফ মাহমুদের বইয়ের লেখাটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। ওই পোস্টের কমেন্টে তিনি লেখেন, ‘লাস্ট প্যারাটা ফেব্রিকেটেড। জাস্ট ডিসটোরশন অফ হিস্ট্রি। আমরা ক্যান্টেনমেন্ট যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারওয়ান বাজার থেকে জোনায়েদ সাকি ভাই আমাকে গাড়িতে তুলেন। গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল। আসিফ প্রথমে কল দিয়ে বলে এএফপির অফিসে যেতে।’

হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রস করে গাড়ি পৌঁছালে আমি নেমে যাই। তখন আসিফ কল করে বলে আপনি চ্যানেল২৪ অফিসে আসেন। সাথে সাথে আমি সারজিসকে কল দিই। সারজিস তখন বাংলামোটরের দিকে ছিল। ওখান থেকে সারজিসকে সাথে নিয়ে আমরা চ্যানেল২৪ অফিসে যাই। ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে আমার সাথে গাড়িতে কে ছিল। আর গাড়ি বাংলামোটর থেকে কোন দিকে যাচ্ছিল।’

এরপরে হাসনাত আব্দুল্লাহ একটি ভিডিও লিংক সংযুক্ত করেন। ওই ভিডিওতে সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকীর সঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও আরও কয়েকজনকে দেখা যায়।

কিউএনবি/অনিমা/১৬ মার্চ ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:৩৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit