বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:০২ অপরাহ্ন

দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ সুমন পলাতক থেকেও নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিগ্নে

মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫
  • ১০৩ Time View

মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : দূর্নীতির বরপুত্র কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছদিকুজ্জামান খান সুমন পলাতক থেকেও দৌলতপুর কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিগ্নে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক অবস্থায় আত্মগোপনে থেকেও দৌলতপুর কলেজে অনার্স শাখায় নিয়োগ নেওয়া শিক্ষকদের অবৈধ পন্থায় বেতন ছাড় করানো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন আগের মতই। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের সময়ে এমন কর্মকান্ডে দৌলতপুর কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একইসাথে তারা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, দৌলতপুর কলেজে অনার্স শাখায় নিয়োগ পাওয়া ৮ জন শিক্ষকের কাছ থেকে ২ কোটি টাকার অর্থ বাণিজ্য করে অবৈধ পন্থায় তাদের বেতন ছাড় করানোর চেষ্টা করছেন পলাতক থাকা অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমন। ইতিমধ্যে বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে হালিমা খাতুনকে অবৈধ নিয়োগ দেখিয়ে তার বেতন ছাড় করানো কার্যক্রম সম্পন্নও করেছেন বলে কলেজ সূত্র জানিয়েছে। একইভাবে ইংরেজি বিভাগের অনার্স শাখার শিক্ষক কামরুন নাহারেরও বেতন ছাড় করানোর কার্যক্রম চলমান রেখেছেন বলে জানাগেছে।

দৌলতপুর কলেজ সূত্রে জানাগেছে, দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ছাদিকুজ্জামান খান সুমন অনার্স শাখায় বিভিন্ন বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া ১১ জন শিক্ষকের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের প্যাটার্ন বর্হিভূত ও অবৈধভাবে বেতন ছাড় করিয়েছেন। শিক্ষা দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এবং দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার সুবাদে অধ্যক্ষ সুমন অবৈধভাবে ১১ জন অনার্স শাখার শিক্ষকের বেতন ছাড় করানোর পর এবার একইভাবে আরো ৮ জন অনার্স শাখার শিক্ষকদের বেতন ছাড় করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দৌলতপুর কলেজের বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি,ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স (সম্মান) শাখায় প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া মো. রবিউল ইসলাম, আয়েশা খাতুন, মো. রঞ্জু আহমেদ,মো. গোলাম মোর্শেদ, মোসা. মুনিরা নাসরিন, মোছা. রাবেয়া খাতুন, কামরুন নাহার ও মোছা. হালিমা খাতুনের কাছ থেকে বেতন করানোর শর্তে ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের সরকার পরিবর্তন হলেও দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমন পলাতক থেকেও বৈষম্যমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে। তাই তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও অবৈধভাবে ছাড় করা শিক্ষকদের বেতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দৌলতপুর কলেজ প্রশাসন। একইসাথে নতুন করে অবৈধভাবে কারো বেতন ছাড় না হয় সে বিষয়টিও নজরে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রদর্শক মো. জহুরুল আলম বলেন, বিগত সরকারের সময় দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ ও দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ছাদিকুজ্জামান খান সুমন অনার্স শাখায় বিভিন্ন বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া ১১ জন শিক্ষকের কাছে মোটা অংকের অর্র্থ বাণিজ্য করে তাদের প্যাটার্ন বর্হিভূত ও অবৈধভাবে বেতন ছাড় করিয়েছেন। একইভাবে বর্তমান সরকারের সময়েও আরো ৮জন অনার্স শাখার শিক্ষকদের অবৈধভাবে বেতন ছাড় করাতে ব্যস্ত রয়েছেন। এরমধ্যে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগে অনার্স শাখায় নিয়োগ পাওয়া ২ জন শিক্ষকের ইনডেক্স নম্বরও পড়েছে শুনেছি। এসব অবৈধ কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জড়িত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অবৈধ পন্থায় হওয়া শিক্ষকদের বেতন বন্ধ সহ তদন্ত করে পলাতক অধ্যক্ষ সুমনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।অভিযোগের বিষয়ে জানতে দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের কাছে ফোন দিলে তাঁর মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমি তেমন কিছু জানিনা।এমপিও’র কপি আমার হাতে আসলে আপনাকে জানাতে পারবো।

অবৈধ নিয়োগ ও বেতনের বিষয়ে দৌলতপুর কলেজের পরিচালনা পরিষদের সদস্য আরিফুল ইসলাম নান্নু বলেন, অনার্স শাখায় নিয়োগ নেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের দু’জন শিক্ষকের বেতন করানোর চেষ্টা করছেন পলাতক অধ্যক্ষ সুমন।অবৈধভাবে পন্থায় করানো বেতন বন্ধের বিষয়টি কলেজের গভর্নিং কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং তদন্ত করে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।উল্লেখ্য, ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ছাদিকুজ্জামান খান সুমন প্রশাসন ও জনতার রোশানলে পড়েন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি ওই রাতেই গা ঢাকা দেন। তবে পলাতক থেকেও তিনি শিক্ষা দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিউএনবি/অনিমা/০৪ মার্চ ২০২৫,/সকাল ১০:১১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit