মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

১৩৯ মিনিটে বদলে গেল সব, খাবার না খেয়েই বেরিয়ে যেতে হয় জেলেনস্কিকে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৩ মার্চ, ২০২৫
  • ৫৭ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হোয়াইট হাউসের শেফরা গত শুক্রবার ওয়েস্ট উইংয়ে রোজমেরি চিকেন, সেলারি রুট পিউরি এবং কলার্ড গ্রিনসের প্লেট সাজাচ্ছিলেন। কিন্তু তখনই ওভাল অফিস থেকে উত্তপ্ত কণ্ঠস্বর ভেসে আসতে শুরু করে।

ভেতরে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য ফুটে উঠল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাদের অতিথি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করছিলেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সম্পর্কের অভূতপূর্ব সংকট যেন এক মুহূর্তে বিস্ফোরিত হলো।

ইউক্রেনের সমর্থকদের জন্য এটি ছিল এক বিপর্যয়কর মুহূর্ত। মাত্র দশ মিনিটের ব্যবধানে দুই একরোখা নেতার মধ্যকার বৈঠক কীভাবে ভণ্ডুল হতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠল ঘটনাটি।

তবে এমন পরিস্থিতি একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। আলোচনার লক্ষ্য ছিল বিরল খনিজসম্পদের ওপর একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করা। কিন্তু আলোচনার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ভাবছিলেন, এ উত্তপ্ত সম্পর্ক অবশেষে সফলতায় নাকি আরও গভীর সংকটে গড়াবে।

জেলেনস্কিকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে কীভাবে আচরণ করা উচিত। ট্রাম্প তোষামোদকারীদের প্রতি সংবেদনশীল এবং তিনি কীভাবে উপস্থাপিত হচ্ছেন, তা নিয়েও বেশ সচেতন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, যেন তিনি আলোচনাকে খনিজ চুক্তির ওপর সীমাবদ্ধ রাখেন এবং বিতর্কে না জড়ান।

রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, আমি সকালে তাকে বলেছিলাম, টোপ কেটো না। মিডিয়া বা অন্য কেউ যেন তোমাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তর্কে জড়াতে বাধ্য করতে না পারে। তিনি আজ সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চান।

এ সপ্তাহে অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারাও হোয়াইট হাউসে আসার আগে জেলেনস্কিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। অন্যদিকে, কিছু মার্কিন কর্মকর্তা চেয়েছিলেন জেলেনস্কি যেন এ সফর থেকে বিরত থাকেন। তাদের মতে, ওয়াশিংটনে বর্তমানে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এমনিতেই নাজুক, আরেকটি ভুল পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

তবুও, শুক্রবার যখন জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসের প্রবেশদ্বার পেরোলেন, তখন খুব কম লোকই কল্পনা করতে পেরেছিল, পরবর্তী ১৩৯ মিনিট কতটা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠবে। যদিও কিছু মানুষ শুরু থেকেই সমস্যার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন। জেলেনস্কির কালো এসইউভি থেকে নামার সময় ট্রাম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য উত্তেজনাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিলেন।

কিন্তু কিছু মার্কিন কর্মকর্তা দূর থেকেই একটি সমস্যা শনাক্ত করলেন, তা হল জেলেনস্কির পোশাক। তার সেই চিরাচরিত পোশাক ম্লান সবুজ সামরিক শার্ট ও প্যান্ট পরে এসেছিলেন তিনি। ট্রাম্প বিদ্রুপের সুরে বললেন, ওহ, তোমরা সবাই বেশ সেজেগুজে এসেছো।

ওভাল অফিসের বৈঠক উত্তপ্ত বিতর্কে রূপ নেওয়ার আগে, একটি ডানপন্থি গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদক জেলেনস্কিকে প্রশ্ন করেন, আপনি কেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অফিসে স্যুট পরেননি? জেলেনস্কি ইংরেজিতে জবাব দেন, এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমি পোশাক পরব, হ্যাঁ। হয়ত তোমার মতো কিছু, হয়ত আরও ভালো কিছু। আমি জানি না, দেখা যাবে। হয়ত কিছু সস্তা। ধন্যবাদ।

গত মাসে হোয়াইট হাউসে আসা অন্যান্য বিদেশি নেতাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, জেলেনস্কি খালি হাতে আসেননি। তিনি ইউক্রেনের বিখ্যাত বক্সার অলেক্সান্ডার উসিকের ইউএফসি বেল্ট নিয়ে এসেছিলেন।

সোনালি রঙের এই বেল্ট, যা আলোচনার সময় পাশের টেবিলে রাখা ছিল, আলোয় ঝলমল করছিল। তবে এটি বৈঠকের আলোচনায় তেমন গুরুত্ব পায়নি।

বৈঠকের প্রথম ৪০ মিনিটে, ট্রাম্প বাহ্যিকভাবে কোনো বিরূপ মনোভাব দেখাননি। তারা মূলত সেই খনিজ চুক্তি নিয়েই আলোচনা করছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল।

এমনকি ইস্ট রুমে একটি দীর্ঘ কাঠের টেবিল চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই চুক্তি আর বাস্তবে রূপ নেয়নি।

 

কিউএনবি/আয়শা/০৩ মার্চ ২০২৫,/বিকাল ৫:১৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit