আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। সেখানে অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই তিনি বলেন, ‘আপনি ২০ লাখ মানুষকে বলতে পারেন না যে, ‘ঠিক আছে, এখন আপনাদের সরে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো অস্থাবর সম্পত্তি নয়, এটা একটা রাজনৈতিক সমস্যা। এটা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে।’ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের মিশর ও জর্ডানের মতো দেশগুলোতে স্থানান্তরের যে কথা বলছেন, তার বিরোধীতা করেছেন ম্যাক্রোঁ। সেই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনিদের তাদের জন্মভূমিতে থাকার ইচ্ছাকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজা পুনর্নির্মাণের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টার অর্থ এই নয় যে আপনার কোনো মানুষ বা দেশের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব থাকা উচিত।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার মধ্যদিয়ে গাজায় সংঘাতের শুরু হলে ফ্রান্স ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে জানায়, তাদের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ রয়েছে। তবে তবে ম্যাক্রোঁ বেশ কয়েকবার ইসরাইলি সামরিক অভিযান এবং নীতির সমালোচনা করেছেন। নিজের ওই অবস্থানের কথা উল্লেখ করে সাক্ষাৎকারে ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘আমি সর্বদা (ইসরাইলি) প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে আমার দ্বিমত পোষণ করেছি। আমি মনে করি না যে, বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে এত বড় অভিযান চালানো সঠিক সমাধান।’
ফ্রান্স ২০২৪ সালের অক্টোবরে ইসরাইল বাহিনীর কাছে অস্ত্র রফতানি স্থগিত করে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশকেও একই পদক্ষেপ অনুসরণ করার আহ্বান জানায়। ইসরাইলের ১৫ মাসের সামরিক আগ্রাসনে সাজানো-গোছানো গাজা এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপ। গত মাসে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে এক যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই ফিরছেন ফিলিস্তিনিরা। নিজেদের মাতৃভূমিকে নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
কিন্তু ফিলিস্তিনিদের সেই স্বপ্নপূরণে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অধিকৃত গাজাকে এবার পুরোপুরি দখলের পায়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা দখল করে পুনর্নির্মাণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। আর গাজাবাসীকে জর্ডান ও মিশরের মতো দেশগুলোতে পুনর্বাসন করা হবে।
জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর হোয়াইট হাউস সফরকালে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু বাদশাহ তা মানতে রাজি হননি। বলেছেন, তার দেশ ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সায় দেবে না। বরং ফিলিস্তিনিদের না সরিয়েই গাজাকে নতুন করে সাজানো যেতে পারে।
ট্রাম্পের গাজা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রস্তাব তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এরই মধ্যে তাদের অসন্তোষ জানিয়েছে। পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে আরব দেশগুলো। মিশর ও জর্ডান বলছে, ফিলিস্তিনিদের না সরিয়েই কিভাবে গাজার পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণ করা যায় সেই পরিকল্পনা তৈরি করছে তারা এবং তা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
কিউএনবি/আয়শা/১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৩:১৮