বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৮ অপরাহ্ন

ট্রাম্প কি ভারতের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখবেন?

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত ৬ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়া পর থেকেই বাকি দুনিয়ায় যে দেশটি সবচেয়ে বেশি উল্লাসে ফেটে পড়েছিল, তা নিঃসন্দেহে ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হবু মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উচ্ছ্বসিত অভিবাদন জানাতে ও নতুন অংশীদারির অঙ্গীকার করতে এতটুকুও দেরি করেননি।

কিন্তু ট্রাম্পের বিজয়ের পর দিল্লিতে যে ধরনের উৎসাহ দেখা যাচ্ছিল এবং বিশেষ করে ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো ভারত-মার্কিন সমীকরণের যে নতুন সম্ভাবনায় বুক বাঁধছিলেন তা এখন অনেকটাই স্তিমিত। বরং আগামী দিনে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতার অলিন্দে আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মেঘ ক্রমশ ঘনিয়ে উঠেছে।

ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী মোদিকে দেখা যায়নি, সেখানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সরাসরি মোদিকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কিনা, তা নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। মোদি ও ট্রাম্পের যে ‘পার্সোনাল কেমিস্ট্রি’ নিয়ে ভারতের মিডিয়াতে গত কয়েক বছর ধরে বিপুল পরিমাণ নিউজপ্রিন্ট আর এয়ারটাইম খরচ হয়েছে, এরপর আম ভারতীয়দের জন্য এটা একটা বড় ধাক্কা তো বটেই!

এদিকে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনে ভারতের পাশাপাশি অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগ বাড়ছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোতেও। বিশেষ করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কী হতে যাচ্ছে ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি। কেননা, বিগত দিনে দেখা গেছে, ভারতকে গুরুত্ব দিয়েই এই দেশ দুটিতে প্রয়োগ করা হতো মার্কিন নীতি। যদিও বাইডেন জমানায় এই নীতির কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। 

যার ফলে নতুন করে আবারও আলোচনায় উঠে আসছে ট্রাম্প জমানায় বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নাক গলানো’ কমবে নাকি অপরিবর্তনীয় থাকবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে যে প্রসঙ্গটি দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বার বার প্রকাশ্য বিরোধের কারণ হয়েছে – তা হলো বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার আমলকে দিল্লি আগাগোড়া ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল’ বাংলাদেশ বলে বর্ণনা করে এসেছে, যে মূল্যায়নের সঙ্গে আমেরিকা কখনোই একমত ছিল না। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবক্ষয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে – আর তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধ সামনেও এসেছে বহুবার।

গত আগস্টে ঢাকায় নাটকীয়ভাবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই বিরোধ তুঙ্গে পৌঁছেছিল যথারীতি। তবে ভারত এখন আশা করছে, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার ‘অতি সক্রিয়তা’ অনেকটাই কমে আসবে। কারণ সুদূর দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশে কী ঘটছে না ঘটছে তা নিয়ে নতুন প্রশাসন হয়তো তেমন মাথা ঘামাবে না।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে দিল্লিতে বলেছিলেন, এখন আমরা সবাই সম্ভবত এক নতুন যুগের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। আমেরিকা তার নিজের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে বিদেশনীতি তৈরি করবে এবার, গোটা বিশ্বের ভালোমন্দ নিয়ে অত মাথা ঘামাতে যাবে না।

ফলে বাংলাদেশ নিয়েও আমেরিকা এখন অনেক নিস্পৃহতা দেখাবে– এবং সেটা ঘরের পাশে ভারতকে সেখানে আবার আগের মতো প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দেবে – ভারত এমনটাই প্রত্যাশা করছে বলে দিল্লিতে পর্যবেক্ষকরা ব্যাখ্যা করছেন।

ওয়াশিংটনে নতুন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আর সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গে তার প্রথম বৈঠকেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন এস জয়শঙ্কর।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে। তবে এখানে তার বিস্তারিত প্রকাশ করাটা সমীচীন হবে না।

তবে বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম দিন থেকেই আবার ভারতের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলতে শুরু করবে – এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই বলেই মনে করছেন জেএনইউ-তে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ।

বিবিসিকে ড. ভরদ্বাজ বলছিলেন, কাল থেকেই বাংলাদেশ নিয়ে দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আর কোনো মতভেদ কিংবা দৃষ্টিভঙ্গীর ফারাক থাকবে না – আমার মনে হয় না ভারতও সেরকম কিছু আশা করছে বলে।

তিনি বলছেন, তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যে নির্যাতনের প্রশ্নে ভারত গত বেশ কিছুদিন ধরে সরব, কিংবা বাংলাদেশের মাটিতে ইদানীং যে ধরনের ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ দিল্লিকে উদ্বিগ্ন রেখেছে – সেগুলোতে অন্তত ট্রাম্প প্রশাসন ইতিবাচক ভূমিকা নেবে বলে অবশ্যই আশা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র তিনদিন আগে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার আমেরিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিন্দু ভোটারদের একটা খুব বড় অংশের সমর্থনও পেয়েছেন তিনি।

বাইডেন জমানায় বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত ও আমেরিকার মতপার্থক্য এতটাই তীব্র আকার নিয়েছিল যে বিষয়টা তার চেয়ে তলানিতে যাওয়া বোধহয় সম্ভব নয়।

ট্রাম্প প্রশাসনে সেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে বাধ্য – আপাতত এটাই দিল্লিতে ক্ষমতার অলিন্দে গভীর বিশ্বাস।

সম্পর্ক তাহলে কোন পথে?

চার দিনের ব্যস্ত ওয়াশিংটনের সফর সেরে বুধবার দেশে ফেরার আগে জয়শঙ্করকে ভারতীয় একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে একেবারে সামনের সারিতে, প্রায় ট্রাম্পের মুখোমুখি আসনটা তিনি পেলেন কীভাবে?

জয়শঙ্কর জবাব দেন, অনুষ্ঠানে যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ প্রতিনিধি, তিনি যে এটুকু খাতিরদারি পাবেন এটাই কি স্বাভাবিক নয়?

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট, মোদি আর ট্রাম্পের ব্যক্তিগত রসায়ন আর সৌহার্দ্যপূর্ণ সমীকরণকে তারা এবারও খুব বড় করে দেখাতে চাইছেন, যার প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও পড়বে বলে ভারত বোঝাতে চাইছে।

নতুন মার্কিন প্রশাসনে যে একটা উদ্দীপনা ও প্রাণশক্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে, তারও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জয়শঙ্কর। মোদি ৩.০ যে ট্রাম্প ২.০-র সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছে, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ভারতের বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও পররাষ্ট্রনীতির পর্যবেক্ষক প্রভু চাওলা অবশ্য বিষয়টাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে চান।

তার ভাষ্য, আমি মনে করি না পার্সোনাল কেমিস্ট্রির এখানে তেমন কোনো ভূমিকা থাকবে। ট্রাম্প আসলে ভারতকে বলতে চাইছেন আমেরিকার সঙ্গে তোমরা ডিল করো অন্য দেশের সঙ্গে তোমাদের কী সম্পর্ক সেটা ভুলে গিয়ে – নইলে পরিণাম ভোগার জন্য প্রস্তুত থাকো।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৪ জানুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৩:২০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit