শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন

সদকায়ে জারিয়ার নেকি মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬০ Time View

ডেস্ক নিউজ : মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে অত্যন্ত মায়ামমতা ও ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, দান করেছেন সৃষ্টির সেরা মাখলুকাতের সর্বোচ্চ সম্মান। তিনি সৃষ্টি করেছেন মানবজাতিকে তাঁর ইবাদতের জন্য, স্রষ্টার বড়ত্ব, মহিমা ও গুণকীর্তন করার জন্য। আর মানবজাতির সব প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ। তিনি বান্দার সব ইবাদতের বিনিময়, সন্তুষ্টি ও পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। এই পৃথিবী হলো মানবজাতির আখেরাতের সব সুখশান্তি, ইজ্জত-সম্মান কামাই করার স্থান। মহান আল্লাহতায়ালা প্রতিটি মানবজাতিকে মৃত্যু পর্যন্ত সেই সুবর্ণ সুযোগ দিয়েছেন। পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়, এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে একদিন সবাইকে চিরস্থায়ী গন্তব্যের দিকে যেতে হবে। মৃত্যুর পর মানুষের একমাত্র আমলই তার সঙ্গী হবে। অপরাপর সবাই তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কেয়ামতের দিন কঠিন সময়ে তারাই মুক্তিও সফলকাম হবে, যাদের সৎ আমলের পাল্লা ভারী হবে। আর মৃত্যুর পরও সৎ আমলের পাল্লা ভারী হতে পারে একমাত্র ‘সদকায়ে জারিয়া’র মাধ্যমে। বিশ্বনবী মানবতার কান্ডারি মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর তার সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তবে শুধু তিনটি আমলের নেকি চালু থাকে। (যা কবরে মৃত ব্যক্তির আমলনামায় সংযোজন হতে থাকে) ক. সদকায়ে জারিয়া, খ. মৃত ব্যক্তি কর্তৃক রেখে যাওয়া এলেম, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়, গ. সুসন্তান, যে পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম শরিফ) বিধায় প্রত্যেক মুসলমানের উচিত সদকায়ে জারিয়ার আমলের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন : একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আমলনামায় যা থেকে নেকি যোগ হবে, তা হলো যদি সে শিক্ষা অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেয় ও প্রচার করে অথবা সৎ সন্তান রেখে যায়, যারা ভালো কাজ করে।

ধর্মীয় ও মানবকল্যাণ জনক লিখিত বই রেখে যায়। মসজিদ, মাদরাসা ও মুসাফিরের জন্য সরাইখানা নির্মাণ করে। অথবা নদী খনন করে দেয়, অথবা জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তার সম্পদ থেকে দান করে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ) মহান রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা বান্দার জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। অতএব যারা নিজের জান ও মাল, আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেবে, তারা নিঃসন্দেহে জান্নাতের মালিক হয়ে যাবে। সদকায়ে জারিয়া, একটি প্রবহমান নদীর মতো, যার পানি কখনো শেষ হয় না। যেমন মসজিদ নির্মাণ করা, আল্লাহতায়ালা মসজিদ নির্মাণকারীর জন্য জান্নাত নির্মাণ করে দেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যত লাখো-কোটি মুসল্লি এতে নামাজ আদায় করবে, কোরআন তেলাওয়াত জিকির-আজকার ধর্মীয় ওয়াজ-নসিহতসহ যত প্রকারের নেকির কাজ এতে সংঘটিত হবে, সবার কবুল নামাজ, তেলাওয়াত ও যাবতীয় আমলের সওয়াব এই দানকারী ব্যক্তি, মৃত্যুর পরও প্রাপ্ত হতে থাকবেন।

এমনিভাবে এতিমখানা, মাদরাসা নির্মাণ করে যাওয়া বা তাতে অংশগ্রহণ করা। রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট ও হাসপাতাল নির্মাণ করে যাওয়া, এর দ্বারা যত মানুষ উপকৃত হবে কেয়ামত পর্যন্ত সবার নেকি এই দাতাপ্রাপ্ত হবেন। কোনো এতিম, গরিব, অসহায় ছাত্রকে এলমে দীন শিক্ষা করতে সহযোগিতা করে যাওয়া, মানুষকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করে যাওয়া, বিপদগ্রস্ত, অভাবগ্রস্ত মানবতার কল্যাণে সহযোগিতা করে যাওয়া। ক্ষুধার্ত, বস্ত্রহীন মানুষকে সাহায্য করা। করোনা মহামারির মতো ভয়াবহ বিপর্যয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাওয়া। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, ঝড়, তুফান ও ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে মানুষকে সাহায্য করা। এমনিভাবে ছায়াদার ফলদার বৃক্ষরোপণ করে যাওয়া, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়। সর্বোপরি মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেওয়া। অর্থাৎ এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন, তার মৃত্যুর পর যখন মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হবে এবং দোয়া করবে, তার সবকিছুই নেক আমল হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত তার আমলনামায় সংযোজিত হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সেভাবে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

কিউএনবি/অনিমা/২২ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ৮:৪৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit