ডেস্ক নিউজ : নিউইয়র্কস অঞ্চলে ৩ লাখের অধিক প্রবাসী থাকলেও এখন পর্যন্ত নিজস্ব একটি কমিউনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা পায়নি। গত দেড় দশক থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই অভাব পূরণের অঙ্গিকার করা হয়। কিন্তু সেই অঙ্গিকার পূরণে আন্তরিক কোনো উদ্যোগ কেউই নেননি। একইভাবে, বিরাট এই জনগোষ্ঠীর অবস্থান বহুজাতিক সমাজে দৃশ্যমান করতে ‘বাংলাদেশ প্যারেড’ আয়োজনেও সক্ষম হয়নি বৃহৎ সংগঠনের দাবিদার এই সোসাইটি। এবার এই ব্যর্থতা ঘুচাতে চায় নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম এবং সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র নবনির্বাচিত কার্যকরী কমিটি। প্রথম মাসিক সভায় বহুল প্রত্যাশিত কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তক গৃহীত হয়েছে। এর অন্যতম বাংলাদেশ সেন্টার/বাংলাদেশ ভবন ক্রয় করা। এই প্রকল্পটি কুইন্স এলাকায় বাস্তবায়নের বিষয়ে উপস্থিত সকলে মতামত দেন। এছাড়া বর্তমান কার্যকরী পরিষদ এই প্রকল্পটি অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে চান বলেও সকলে উল্লেখ করেন। আর এই প্রকল্পের তহবিল সংগ্রহের অভিপ্রায়ে প্রজেক্ট প্রোফাইল তৈরি করে ‘বিশেষ ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠান’ করার সিদ্ধান্তও হয়েছে। ভবন ক্রয়ের পর সেখানে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে সিটি প্রশাসনের সার্বিক সহায়তা গ্রহণেও কার্পণ্য করা হবে না বলে উল্লেখ করেন কর্মকর্তারা।
নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন এলমহার্স্টে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর পরিচলনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র সহ সভাপতি- মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ সভাপতি-কামরুজ্জামান কামরুল, সহ সাধারণ সম্পাদক- আবুল কালাম ভুইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক- ডিউক খান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক- অনিক রাজ, জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক- রিজু মোহাম্মদ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক- জামিল আনসারী, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- আশ্রাব আলী খান লিটন, স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদক- মোহাম্মদ হাসান (জিলানী), কার্যকরি সদস্য- হারুন চেয়ারম্যান, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী, মোহাম্মদ সিদ্দিক পাটোয়ারী, মুনসুর আহমদ ও হাছান খান।
সমাজকল্যাণ সম্পাদক জামিল আনসারী কর্তৃক পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সভায় সংগঠনের প্রয়াত সকল সাবেক কর্মকর্তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। সকলকে ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরুতেই দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম। এরপর একে একে কার্যকরী কমিটির সকল কর্মকর্তা সংগঠনের আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন।
এ সময় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান একুশে ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান শহীদ দিবস পালনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা, ইফতার ও দোয়া মাহফিল আগামী ৯ মার্চ রোববার নিউইয়র্কের জয়া পার্টি হলে আয়োজনের বিষয়েও সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়াও নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী সিটির আরো দুটিসহ বাংলাদেশী অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় পৃথকভাবে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নীতিগতভাবে গ্রহণ করা হয়। কার্যকরী পরিষদের পরবর্তী সভায় তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও সভায় জানানো হয়।
বাংলাদেশের কৃষ্টি, কালচার ও সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে নিউইয়র্কে ‘বাংলাদেশ ডে প্যারেড’ আয়োজনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত বাংলা স্কুলকে আরো যুগোপযোগী করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সাথে সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বাংলা স্কুলের আরো কয়েকটি শাখা খোলার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় এই সভায়। স্কুল ও শিক্ষা সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয় সবকিছু পর্যালোচনা করে আগামী কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে রিপোর্ট পেশ করতে।
বাংলাদেশের সোসাইটির বার্ষিক ক্যালেন্ডার প্রণয়নের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। দীর্ঘদিন থেকে নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব বিল্ডিং কর্তৃক বাংলাদেশ সোসাইটির ভবনের উপর মোটা অংকের আরোপিত জরিমানা পরিশোধের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বিষয়টি সুরাহা করতে সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিউএনবি/অনিমা/০৮ জানুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৩:০১