সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম

জানা গেল বিশ্বে সামরিক শক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান কত

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে সামরিক শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম। সামরিক খাত নিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণা করে, বিশ্বে সুপরিচিত এমন একটি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রতি বছর সামরিক শক্তির বিচার করে একটি তালিকা বা ইনডেক্স প্রকাশ করে। এতে বিশ্বে ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তির বিচার করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানের তথ্যে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪০তম, অর্থাৎ গত এক বছরে বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সংসদে জানানো হয়েছিল, সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ভারতসহ সমরাস্ত্র শিল্পে উন্নত বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র কেনা হচ্ছে। বিমান, ট্যাংক, সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেমসহ ‘অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের’ কথা জানানো হয়েছিল সেসময়।

অস্ত্রের জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই চীনের ওপর নির্ভরশীল। তবে সম্প্রতি তুরস্কসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ত্র আমদানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২৮তম।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাণ্ডারে কী ধরনের সমরাস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম রয়েছে, সেসব অস্ত্র কোন কোন দেশ থেকে কেনা হয়েছে এবং অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় – সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার বাংলাদেশের বিমানবাহিনীতে দুই ধরনের মানে আধুনিক এবং স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার, উড়োযানের উপস্থিতি আছে বলে জানাচ্ছে সামরিক তথ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়্যারপাওয়ার বাংলাদেশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বহরে ২১২টি বিমান আছে, যেখানে যুদ্ধ বিমান রয়েছে ৪৪টি।

এর মধ্যে চীনের নির্মিত এফ সেভেন যুদ্ধবিমান আছে ৩৬টি। এই মডেলগুলো কিছুটা পুরনো। আর সোভিয়েত ইউনিয়নে তৈরি আটটি মিগ-টোয়েন্টি নাইন রয়েছে বহরে।

এছাড়াও আছে ১৪টি ইয়াক-১৩০ বিমান, যেগুলো প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হলেও হালকা আক্রমণ চালানোর উপযোগী। রাশিয়া থেকে বিমানগুলো কেনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।

চীনের এফটি সেভেন প্রশিক্ষণ যুদ্ধ বিমান, যুক্তরাষ্ট্রের লকহিডের দুটি সিরিজের কৌশলগত পরিবহন বিমানও আছে বাহিনীতে। বিমানবাহিনীর বহরে হেলিকপ্টার রয়েছে ৭৩টি। এর মধ্যে রাশিয়ার এমআই সিরিজের ৩৬টি হেলিকপ্টার আছে। সাথে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত সেসনা, বেলের বিভিন্ন মডেলের হেলিকপ্টার আছে ২৪টি।

এর পাশাপাশি ফ্রান্স, ইতালি, চেকোস্লোভাকিয়া (চেক রিপাবলিক) থেকে কেনা কিছু প্রশিক্ষণ বিমান ও হেলিকপ্টারও ব্যবহার করে বাংলাদেশ।

ড্রোন

আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ড্রোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে ৪৪টি ড্রোন রয়েছে বলে জানাচ্ছে ওয়্যারপাওয়ার বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩৬টিই স্লোভেনিয়ায় নির্মিত ব্রামর সি ফোর আই। তুরস্কের তৈরি বায়রাক্টার টিবি টু আছে ছয়টি। গত বছরই এগুলো যুক্ত হয়। তবে ২০২২ সালে প্রথমবারের মত সামরিক অস্ত্র বহনে ও হামলায় সক্ষম ড্রোন কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

ড্রোনের পাশাপাশি তুরস্ক থেকে কামানের গোলা, রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সাঁজোয়া যান, মাইন থেকে সুরক্ষাকারী যানও কিনেছে বাংলাদেশ। এদিকে, তুরস্কের বায়রাক্টার ছাড়াও ইতালির সিলক্স ফ্যালকো সিরিজের দুটি ড্রোনও আছে বাংলাদেশের বহরে।

সাবমেরিন এবং যুদ্ধজাহাজ

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে সাবমেরিন রয়েছে দু’টি। দুটিই চীনের তৈরি এবং ২০১৭ সালে এগুলো নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়। ওয়্যারপাওয়ার বাংলাদেশে এই সাবমেরিনগুলোকে ‘অ্যাটাক সাবমেরিন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোতে আক্রমণের জন্য টর্পেডোর পাশাপাশি নৌ মাইনও ব্যবহার করা যায়।

এছাড়া, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার অনুযায়ী, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে নৌযান রয়েছে ১১৭ টি। এর মধ্যে সাতটি ফ্রিগেট বা রণতরী আছে বাংলাদেশের। সাথে আরো আছে ছয়টি কর্ভেট যুদ্ধজাহাজ। ফ্রিগেটগুলোর চারটির নির্মাতা চীন, দুইটির যুক্তরাষ্ট্র আর একটি দক্ষিণ কোরিয়ার। কর্ভেট জাহাজগুলোর মধ্যে চারটি চীনের, দুটি যুক্তরাজ্যের।

ট্যাংক, কামান এবং মাল্টিপল রকেট লঞ্চার

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে রয়েছে ৩২০টি ট্যাঙ্ক। ওয়্যার পাওয়ার বাংলাদেশ থেকে জানা যাচ্ছে এর মধ্যে অন্তত ২৮১ টি চীনের তৈরি। সবচেয়ে বেশি আছে টাইপ ফিফটি নাইন দুর্জয় ট্যাংক। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চীন থেকে কিট (সরঞ্জাম) এনে ট্যাংকগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এছাড়া আর্মড পারসোনেল ক্যারিয়ার বা এপিসি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কে তৈরি এপিসি ব্যবহার করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে ৪৬৪টি কামান রয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার। এর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে ২৭টি।

বাংলাদেশের অ্যান্টি এয়ার ক্রাফট গান বা বিমান বিধ্বংসী কামানের উৎস দুটি দেশ। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডের একটি এবং চীনের চারটি সিরিজের কামান রয়েছে। আর ওয়্যারপাওয়ার বাংলাদেশ-এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কাছে মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম (এমএলআরএস) আছে ৭৭টি। এর মধ্যে চীনের তৈরি ৪৯ টি এবং তুরস্কের দুই ধরনের মোট ২৮ টি এমএলআরএস রয়েছে তাদের ভাণ্ডারে।

মাল্টিপল রকেট লঞ্চার বা মোবাইল রকেট প্রজেক্টর হচ্ছে এমন একটি স্বয়ংক্রিয় সামরিক অস্ত্র, যা দিয়ে এক সাথে কয়েকটি রকেট বা বোমা নিক্ষেপ করা যায়।

পাকিস্তান পর্বে ১৯৬৭ সালে চীনের সহায়তায় ঢাকার অদূরে গাজীপুরে একটি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বা সমরাস্ত্র কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৭০ সালে সেটি উদ্বোধন করা হয়।

বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কারণে নির্মাণকাজ ব্যাহত হয় এবং চীনা দল কারখানা ত্যাগ করে।’ ১৯৭৫ সালের ৩১শে অগাস্ট চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

তারপরের বছর চীনা কারিগরি দল কারখানাটিকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং আরো এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৭ সাল থেকে কারখানাটি নিয়মিত উৎপাদনের জন্য চালু হয়।

সমরাস্ত্র কারখানার সাবেক ডেপুটি কমান্ড্যান্ট অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেন, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ দুটিই তৈরি হয় এই ফ্যাক্টরিতে। তিনি বলেন, ‘স্মল আর্মস এবং রাইফেল সমরাস্ত্র কারখানায় তৈরি হয়।’ সেনাবাহিনীর প্রধান বা বহুল ব্যবহৃত অস্ত্র এই রাইফেল। এসবের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ চীন থেকে আসে। গোলাবারুদ তৈরিতে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ বলেও জানান সরোয়ার।

যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়

বাংলাদেশের কোন ডিফাইনড্ এনিমি (নির্দিষ্ট শত্রু) নেই বলে মনে করেন একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইসফাক ইলাহী চৌধুরী। সে কারণে আপাতত সংঘাতের শংকা না থাকলেও ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অস্ত্রভাণ্ডার আপডেট করছে। তিনি বলেন, ‘অস্ত্রের জন্য অতিমাত্রায় চীন নির্ভরতা কাটিয়ে ডাইভার্সিফাই (বৈচিত্র্য) করা হচ্ছে।’

‘চীনের অস্ত্রের মান খারাপ নয়’ মন্তব্য করে ইসফাক বলেন, ‘তবে, দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারযোগ্যতার ক্ষেত্রে মার্কিন বা অন্যান্য পশ্চিমা অস্ত্র এখনো এগিয়ে আছে।’ এছাড়া চীনের সমরাস্ত্রের দাম তুলনামূলক কম।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা বায়েজিদ সারোয়ার বলেন, ‘আগে যেসব কারণে চীনের অস্ত্রের প্রতি ঝুঁকতে হয়েছিল তার অন্যতম আর্থিক সক্ষমতা। এখন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি টাকা দিয়ে পশ্চিমা অস্ত্র কেনার সামর্থ্যও বাড়ছে।’

আর্থিক সক্ষমতা ছাড়াও সমরাস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয় সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন দুই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। সেগুলোর অন্যতম হলো-

• রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও স্পেয়ার পার্টস্ (যন্ত্রাংশ) এর সহজলভ্যতা

• পটেনশিয়াল অ্যাডভার্সারি বা সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ এবং তাদের রণকৌশল

• প্রতিপক্ষের কাছে যে ধরনের অস্ত্র আছে সেগুলো মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র

এছাড়া, ‘গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করা যাবে না এমন অস্ত্র কেনা হয় না’ এবং ‘সাধারণত, প্রতিবেশীর কাছ থেকে অস্ত্র কেনা হয় না’ বলে জানান বায়েজিদ সারোয়ার। বাংলাদেশের চলতি অর্থ বছরের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে এ খাতে। — সূত্র– বিবিসি বাংলা

কিউএনবি/অনিমা/০৪ জানুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৩:২৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit