বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৯ অপরাহ্ন

প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে হাসিনাকে যে পরামর্শ সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬৭ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে তাকে ফেতর চেয়ে নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। নয়াদিল্লিও সেই চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেছে।

গণআন্দোলন দমনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মানুষ হত্যার নির্দেশ প্রদানের অভিযোগে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারা দেশে শতাধিক মামলা হয়েছে। তিনি দেশে ফিরে এলেই তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একাধিকবার প্রকাশ্যে এই ঘোষণা দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে হাসিনা কী করতে পারেন— সে সম্পর্কিত পরামর্শ তাকে দিয়েছেন বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মহেশ সাচদেব। ভারতী সংবাদমাধ্যম এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাচদেব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তিটি রয়েছে, সেটি অনেক সতর্কভাবে করা। এ চুক্তিটি রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রত্যপর্ণ প্রত্যাখ্যান করে, কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে ফোকাস করে। তো, এখন চুক্তির এসব সতর্কতা ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির বর্তমান সরকারের প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। আদালতে তিনি লিখিতভাবে আবেদন জানাতে পারেন যে, ভারতের সরকার তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হবে।’

সাবেক ভারতীয় এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আবার ভারতের বাংলাদেশের সরকারকে জানাতে পারে যে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হলে তার সঙ্গে ন্যায়বিচার হবে কি না— সে সম্পর্কে নিশ্চিত নয় তারা। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে ভারতের অনেক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আছে এবং নয়াদিল্লির বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ইউরোপ বলেছে, ভারতের বিচার ব্যবস্থা ও কারাগারগুলোর মান নিয়ে তাদের সংশয় রয়েছে। তো এখন এ পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দি প্রত্যার্পণ সংক্রান্ত প্রথম খসড়া ‍চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৩ সালে। পরে ২০১৬ সালে চুক্তিটির সংশোধিত সংস্করণে স্বাক্ষর করে নয়াদিল্লি এবং ঢাকা। মূলত দুই দেশের সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদে সংশ্লিষ্টদের বিনিময়ের উদ্দেশ্যেই চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছিল ভারত এবং বাংলাদেশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক নোট প্রদান করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই নোট গ্রহণ করেছে বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে মহেশ সাচদেব বলেন, ‘প্রথমত, কূটনৈতিক নোট হলো দুই দেশের সরকারের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের যোগাযোগ মাধ্যম। এটি কেবল একটা নথিগত রেকর্ড। এটা অনেকটা এমন…মনে করুন আপনি অন্য কোনো দেশে কোনো সঙ্গিত কনসার্ট বা টুর্নামেন্ট উপভোগ করতে গেছেন, সেখানে হয়তো কোনো কিছু আপনার ভালো লাগল না এবং সেই ভালো না লাগার ব্যাপারটি আপনি সেই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানালেন। দুই দেশের সরকারের যোগাযোগের জন্য এর চেয়ে উচ্চতর অনেক পন্থা বা মাধ্যম রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার পুরোভাগে রয়েছে শেখ হাসিনার অবস্থান। প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্যও ব্যাপারটি অস্বস্তিকর। তবে মহেশ সাচদেব মনে করেন, বাংলাদেশ যদি অপেক্ষাকৃত উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক পন্থা অনুসরণ করে শেখ হাসিনাকে ফেরত চায়, তাহলেও কিছু অনতিক্রম্য কূটনৈতিক জটিলতার কারণে ভারতের পক্ষে সেই অনুরোধ রাখা কঠিন হবে।’

সাবেক ভারতীয় এই রাষ্ট্রদূত বলেন ‘কিছুদিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন। আমার ধারণা, তার সেই সফরে এ ব্যাপারগুলো আলোচনা হয়েছে। তারপরও আমি বলছি— বাংলাদেশ যে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইছে— এটা তো নতুন নয়, গত আগস্টে বাংলাদেশে সরকার পতন এবং নতুন সরকার গঠনের পর থেকে দু’দেশের মধ্যেই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখানে যে ব্যাপারটি লক্ষ্যনীয়, তা হলো শেখ হাসিনার ভারতে আসার অনুমতি চেয়েছিল বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে। অর্থাৎ, দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে তিনি এসেছিলেন। আমার মনে হয় যে বাংলাদেশের সরকারে বর্তমানে এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা তাদের হৃদয়ের কথা শুনতে ইচ্ছুক নন। কারণ তারা খুব ভালো করেই জানেন যে হাসিনা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে গেলে সেখানে চরম অরাজকতা শুরু হবে।’

কিউএনবি/অনিমা/২৪ ডিসেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৪:১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit