আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসও ভাঙচুরের শিকার হয়। মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা কাচ ও পদদলিত পতাকার মধ্যে পড়ে ছিল ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছিঁড়ে যাওয়া পোস্টারও। গত সেপ্টেম্বরে বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত লেবাননের হিজবুল্লাহ আন্দোলনের নেতা হাসান নাসরাল্লাহর ছেঁড়া ছবিও লুটিয়ে ছিল সেখানে। দূতাবাসের বাইরের দিকটা সুদৃশ্য করার জন্য লাগানো ফিরোজা রঙের টাইলস অক্ষত ছিল।
প্রসঙ্গত ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ হলো ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি নেটওয়ার্ক। ইরানের নেতৃত্বে থাকা এই জোটে রয়েছে হামাস, হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি ও ইরাকি শিয়া মিলিশিয়ারা।
খামেনিকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘যত বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন, প্রতিরোধ তত শক্তিশালী হবে।
গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ইরান সরাসরি সমর্থন না করলেও প্রশংসা করেছিল। এই ঘটনা ওই অঞ্চলকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে বর্তমানে অঙ্কটা বদলেছে। শত্রুদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাল্টাহামলা কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে, যেখানে ইরান অনেকটাই ‘ব্যাকফুটে’ পিছিয়ে রয়েছে।
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জেমস জেফরি এখন গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারে কাজ করেন। তার মতে, ‘তাসের ঘরের মতো সব একের পর পড়ে যাচ্ছে। ইরানের অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স ইসরায়েল ভেঙে দিয়েছিল, আর সিরিয়ার ঘটনায় তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ছাড়া এই অঞ্চলে কিন্তু ইরানের আর কোনো প্রকৃত প্রতিনিধি নেই।’
ইরান এখনো প্রতিবেশী ইরাকের শক্তিশালী মিলিশিয়াদের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে জেফরির মতে, ‘এটা একটা আঞ্চলিক আধিপত্যের নজিরবিহীন পতন।’
ইসরায়েল নিজস্ব পরিকল্পনায় মধ্যপ্রাচ্যের রূপান্তর চায়
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে শেষবার জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল ১ ডিসেম্বর, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে। সেই সময় সিরিয়ার রাজধানীর দিকে অগ্রসর হওয়া বিদ্রোহীদের ‘গুঁড়িয়ে দেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তবে ছবিটা এই মুহূর্তে ভিন্ন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, দেশ ছেড়ে পালানোর পর আপাতত রাশিয়ায় রয়েছেন বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেইন আকবরি আসাদকে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের সম্মুখভাগ’ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আসাদের হঠাৎ পতনের পর ইরানকে তার (আসাদ প্রশাসনের) সমর্থনে যুদ্ধ করতে অসমর্থ ও অনিচ্ছুক বলে মনে হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সে’ থাকা একমাত্র দেশও ইরানের হাত থেকে ফসকে গিয়েছে।
আসাদের পতনে ইসরায়েল যেভাবে লাভবান
ইরান যেভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে
ইরান কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলে প্রভাব বজায় রাখার পাশাপাশি ইসরায়েলি হামলার প্রতিরোধ করতে মিলিশিয়াদের একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এটা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের সময় থেকেই চলে আসছে।
ইরাকের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধ বাধলে বাশার আল-আসাদের বাবা হাফিজ আল-আসাদ ইরানকে সমর্থন করেছিলেন। ইরানের শিয়া ধর্মগুরু ও আসাদের জোট মূলত সুন্নিপ্রধান মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভিত শক্ত করতে সাহায্য করেছিল। মিত্র ইরানের কাছে লেবাননে হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সহায়তা পৌঁছানোর জন্য সিরিয়া ছিল গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুট।
বাশার আল-আসাদকে সাহায্য করতে এর আগেও ইরান এগিয়ে এসেছিল। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গণ-অভ্যুত্থান গৃহযুদ্ধে রূপ নেওয়ার পর যখন তাকে (বাশার আল-আসাদ) দুর্বল বলে মনে হচ্ছিল, সেই সময় যোদ্ধা, জ্বালানি ও অস্ত্র সরবরাহ করেছিল তেহরান। ‘সামরিক উপদেষ্টা’ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সেখানে দুই হাজারেরও বেশি ইরানি সেনা ও জেনারেল নিহত হন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক ড. সানাম ভাকিল বলেন, ‘আমরা জানি (২০১১ সাল থেকে) সিরিয়ায় তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি ডলার অর্থ ব্যয় করেছে ইরান।’
এখন যে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইরান ভবিষ্যতে লেবাননে হিজবুল্লাহকে পুনরায় সহায়তার চেষ্টা করতে পারত সেটা ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। এর নেপথ্যে ড. ভাকিল যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন, ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স এমন একটা সুবিধাবাদী নেটওয়ার্ক, যা ইরানকে কৌশলগত গভীরতা দেওয়া এবং সে দেশকে সরাসরি আঘাত ও আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। কৌশল হিসেবে এটা স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে।’
ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপ শুধু যে আসাদের পতনের দ্বারাই প্রভাবিত হবে এমনটা নয়। ইরানের নিজস্ব সামরিক বাহিনী চলতি বছর ইসরায়েলের সঙ্গে প্রথম সরাসরি সংঘর্ষে যে দক্ষতা দেখিয়েছিল, সাম্প্রতিক ঘটনায় তার চাইতেও খারাপ অবস্থায় দেখা গিয়েছে তাদের। এই বাস্তবতাও কিন্তু সে দেশের আগামী পদক্ষেপকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করা হয়।
গত অক্টোবরে ইরান ইসরায়েলকে নিশানা করে যেসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছিল, তার বেশির ভাগই প্রতিহত করা হয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র বেশ কয়েকটা বিমানঘাঁটির ক্ষতি করতে পেরেছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেফরি বলেন, ‘(ইরানের) ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি শুধু কাগুজে বাঘ বলে প্রমাণিত হয়েছে।’
অন্যদিকে গত জুলাই মাসে তেহরানে হামাসের সাবেক নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যাকাণ্ডও ইরানের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।
আসাদের পতনে রাশিয়ার মর্যাদায় আঘাত লেগেছে?
ইরানের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
টিকে থাকাই এখন এই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অগ্রাধিকার হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ড. ভাকিল বলেন, ‘ট্রাম্পের পক্ষ থেকে যে চাপ রয়েছে সেটা থেকে বাঁচতে অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের অবশিষ্টাংশকে শক্তিশালী করা ও আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুনরায় বিনিয়োগ করতে চাইবে তারা (ইরান)।’
ডেনিস হোরাক কানাডিয়ান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে ইরানে তিন বছর কাটিয়েছিলেন। তার কথায়, ‘এদের (ইনার) অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে এবং তারা অনেক কিছুই করতে পারে।’ তিনি মনে করেন, ইরান এখনো মজবুত। তার যুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধলে উপসাগরীয় আরবদেশগুলোর বিরুদ্ধে ইরান তার সেই শক্তি ব্যবহার করতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। ইরানকে কাগুজে বাঘ হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি।
তবে আন্তর্জাতিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে ইরান। একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন, যাকে এর আগে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছিল। আবার অন্যদিকে আছে ইসরায়েল, যে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে—তাও প্রমাণ করে দিয়েছে।
ড. ভাকিল বলেন, ‘ইরান নিশ্চিতভাবেই তার প্রতিরক্ষানীতির পুনর্মূল্যায়ন করবে, যা মূলত অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারা নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি বিবেচনা করবে এবং সরকারকে আরো বেশি নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ওই খাতে বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন কিনা সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
পারমাণবিক ক্ষমতা
ইরান জোর দিয়ে বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। পারমাণবিক কার্যক্রমের ওপর লাগাম টানার বিনিময়ে তাদের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভাবছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে সতর্কতার সঙ্গে আলোচনার পরও ২০১৫ সালে চুক্তি থেকে সরে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, এরপর ইরান পরমাণু কর্মসূচিতে আরো এগিয়েছে।
ওই চুক্তির আওতায় ইরানকে ৩.৬৭ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়। স্বল্পসমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানি উৎপাদন করার কাজে ব্যবহার করা যায়। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) বলছে, ইরান এখন উল্লেখযোগ্যভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করে ফেলেছে।
বাইডেন প্রশাসন ওই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তার ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই নিষেধাজ্ঞাই বহাল রয়েছে। ইরান জানিয়েছে, ট্রাম্পের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার জবাবে তারা এই কাজ (ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার বাড়ানো) করেছে।
আসাদের পতনে বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য
প্রসঙ্গত, পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র-গ্রেড ইউরেনিয়াম ৯০ শতাংশ বা তারও বেশি সমৃদ্ধ। আইএইএপ্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, আঞ্চলিক সমীকরণ পরিবর্তনের কারণেই ইরান এসব করছে। রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট থিংকট্যাংকের পারমাণবিক ক্ষমতা বিস্তারসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ দারিয়া দোলজিকোভা বলেন, ‘এটা সত্যিই উদ্বেগজনক। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ২০১৫ সালে যেখানে ছিল, তার তুলনায় এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গায় রয়েছে।’
ধারণা করা হচ্ছে, ইরান সিদ্ধান্ত নিলে এক সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্রের জন্য পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে। যদিও সেক্ষেত্রে তাদের একটা যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতে হবে এবং সরবরাহব্যবস্থাও স্থাপন করতে হবে, যার জন্য কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ডলজিকোভা বলেন, ‘লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে—এমন পরমাণু অস্ত্র তৈরির কতটা কাছাকাছি রয়েছে ইরান, তা আমরা জানি না। কিন্তু এরই মধ্যে এসব অস্ত্রের নির্মাণ নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে ফেলেছে তারা। গবেষণার মাধ্যমে অর্জিত সেই জ্ঞান ইরান থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’
এদিকে পশ্চিমাদেশগুলোও উদ্বেগে আছে। ইসরায়েলি ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ ও তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. রাজ জিম্মত বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ট্রাম্প ইরানের ওপর তার সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশল আরো একবার চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আমি মনে করি, তিনি ইরানকে নতুন করে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করবেন, যাতে ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে রাশ টানার জন্য রাজি করানো যায়।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্ত্বেও ড. জিম্মত মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করেন এবং ইরান কিভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানায় সেটা দেখার জন্য ইসরায়েল অপেক্ষা করবে। ইরান পূর্ণমাত্রার সংঘর্ষ উসকে দিতে চায় বলে মনে হয় না। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নাসের হাদিয়ান বলেন, ‘আমি মনে করি, একজন ব্যবসায়ী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করবেন। যদি তা না হয়, তাহলে আলোচনার বসার জন্য (ডোনাল্ড ট্রাম্প) সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করবেন।’
অধ্যাপক নাসের হাদিয়ানের বিশ্বাস, সংঘাতের চেয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিনি বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করতে গেলে বিষয়টা বিগড়ে যেতে পারে, যুদ্ধও ডেকে আনতে পারে, যেটা কোনো পক্ষই চায় না।’
‘উত্তেজনা বাড়ছে’
ইরানের সামনে বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সর্বোচ্চ নেতার উত্তরাধিকার বেছে নিতে হবে তাদের। ড. ভাকিল বলেন, ‘খামেনিই তার উত্তরাধিকার ও ক্ষমতা হস্তান্তরসংক্রান্ত দুশ্চিন্ত নিয়েই ঘুমাতে যান। ইরানকে একটা স্থিতিশীল জায়গায় রেখে যেতে চান তিনি।’
সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে অভিযুক্ত মাহসা আমিনি নামের এক তরুণীর মৃত্যুর পর ২০২২ সালে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ইরান সরকারকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ইরানের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখনো জনসাধারণের ক্রোধ রয়েছে। নাগরিকদের অভিযোগ, ইরান বেকারত্ব ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মতো সমস্যার সঙ্গে লড়ছে। অথচ দেশের সম্পদ অন্য দেশের সংঘাতে ঢালা হচ্ছে।
ইরানের তরুণ প্রজন্ম ক্রমেই ইসলামি বিপ্লব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। শাসকগোষ্ঠীর আরোপিত সামাজিক বিধি-নিষেধ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেকেই মুখ খুলছেন। প্রতিদিনই নারীরা ইরানের শাসকদের জারি করা বিধি-নিষেধকে উপেক্ষা করছেন। নিজেদের চুল না ঢেকেই বের হয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন তবে তার মানে এই নয় যে সিরিয়ার মতো ইরানের শাসনব্যবস্থারও পতন ঘটবে। এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা, যারা কাছ থেকে সে দেশকে পর্যবেক্ষণ করছেন।
জেফরি বলেন, ‘আমি মনে করি না, ইরানের জনগণ আবার জেগে উঠবে। কারণ ইরান তার সাম্রাজ্য ইতিমধ্যে হারিয়েছে, যা এমনিতেও জনপ্রিয় ছিল না।’
এ ছাড়া হোরাক মনে করেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টায় ভিন্নমত পোষণকারীদের প্রতি ইরানের সরকারের সহনশীলতা আরো কমে আসবে। হিজাব না পরা নারীদের শাস্তি আরো জোরদার করার তাদের নতুন ও দীর্ঘ পরিকল্পিত আইন শিগগিরই আসতে চলেছে। তবে হোরাক মনে করেন না যে ইরানের বর্তমান সরকার এই মুহূর্তে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইরানের লাখো নাগরিক যেমন এটা সমর্থন করে না, তেমনই সেখানকারই লাখ লাখ নাগরিক এখনো এটা সমর্থন করেন। আমি মনে করি না যে শিগগিরই শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে।’
কিন্তু দেশের ভেতরে ক্ষোভের পরিবেশ, সিরিয়ায় তাদের নড়বড়ে অবস্থান ও তার আঞ্চলিক প্রভাব ইরানের শাসকদের সামনের পথকে যে বেশ জটিল করে তুলেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
কিউএনবি/আয়শা/১৫ ডিসেম্বর ২০২৪,/রাত ১০:৫৪