বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০৫:০৪ অপরাহ্ন

মুসলিম ব্যবসায়ীর যেমন গুণ থাকা উচিত

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইসলাম ব্যবসাকে নিছক একটি দুনিয়াবি কাজ হিসেবেই দেখে না, একে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত গণ্য করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সত্যবাদী, আমানতদার ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক (উঁচু স্তরের সত্যবাদী) ও শহীদদের সঙ্গে হাশরের মাঠে উঠবে।

(তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)

এর চেয়ে বড় সুসংবাদ একজন মুসলিম ব্যবসায়ীর জন্য আর কিছু হতে পারে না। কিয়ামতের মাঠে আম্বিয়ায়ে কিরাম, সিদ্দিক ও শুহাদায়ে কিরামের সঙ্গে থাকবে, এর চেয়ে আর বড় পাওয়ার কী আছে!

নবীজি (সা.) নবুয়তেপূর্ব কালে সর্বোত্তম ব্যবসায়ী ছিলেন

নবীজি (সা.) স্বয়ং নবুয়তের গুরুদায়িত্ব লাভের পূর্বে ব্যবসা করেছেন।

হাদিস শরিফে এসেছে, মক্কা বিজয়ের দিন নবী করিম (সা.) মক্কা শরিফে কোথাও উপবিষ্ট ছিলেন। এ অবস্থায় এক লোক এসে বলল, আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি আপনার সঙ্গে একসময় ব্যবসা করেছিলাম। ওই লোক তখনো ইসলাম গ্রহণ করেনি। নবী করিম (সা.) তাকে বলেন, হ্যাঁ, আমার স্মরণ আছে, তুমি আমার ব্যাবসায়িক অংশীদার ছিলে।

তখন লোকটি বলল, আপনি এমন এক অংশীদার ছিলেন, এমন ভালো অংশীদার আমি জীবনে কখনো পাইনি, কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না এবং আমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেননি।

(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৬; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৩৬৯৪৮)

এ ছাড়া খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে নবীজি (সা.)-এর অংশীদারে ব্যবসা করা এবং দক্ষতা ও আমানতদারির সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার ঘটনা তো সবারই জানা। খাদিজা (রা.) তার এই আমানতদারিতে মুগ্ধ হয়েই নিজ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

(দেখুন—সিরাতে ইবনে হিশাম : ১/১৮৮-১৮৯)

ব্যবসায়ীদের প্রতি ইসলামের অনুপম নির্দেশনা

নবীজি (সা.) সব ক্ষেত্রেই আমাদের যে সোনালি নীতি ও জ্যোতির্ময় দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, এর কোনো তুলনাই হয় না।

আজ আমাদের ওপর যে ব্রিটিশ আইন চাপানো আছে, তার সঙ্গে ইসলামের এসব জ্যোতির্ময় নীতিকে মেলান, আকাশ-পাতাল ব্যবধান পাবেন। কেনাবেচার ক্ষেত্রে ব্রিটিশদের একটা নীতি রয়েছে, তা হলো ‘Caveat Emptor’ যার অর্থ হলো ‘ক্রেতা সাবধান থাকো’, অর্থাৎ ক্রেতার দায়িত্ব হলো, সে পণ্য কেনার সময় সতর্কতার সঙ্গে দেখেশুনে কিনবে, কিন্তু বিক্রেতার দায়িত্ব নয় যে সে পণ্যের দোষত্রুটি বাতলে দেবে। এটি হলো একটি পশ্চিমা ব্যাবসায়িক নীতি। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে—‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে কোনো পণ্যের দোষত্রুটি লুকিয়ে ক্রেতার কাছে প্রকাশ না করে বিক্রি করবে, সে আজীবন আল্লাহর অসন্তুষ্টিতে নিপতিত থাকবে এবং ফেরেশতারা তাকে অভিশাপ দিতে থাকবেন।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪৭)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ায়, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়, আর পণ্য মজুদকারী ও সংকট সৃষ্টিকারী অভিশপ্ত হয়, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫৩)

এসব মূলনীতি রাসুল (সা.) আমাদের দিয়েছেন। এটি হলো আমাদের ইসলামের শিক্ষা। তাই এ কথা অন্তরে বসিয়ে নিতে হবে যে কেবল দুনিয়াবি রোজগারের আশায়ই ব্যবসা করছি না, বরং আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত করছি। আর এই ইবাদত এ জন্যই করছি, যাতে আমি নিজের রোজগারের পাশাপাশি আমার দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখতে পারি এবং আমার দেশ ও জাতিকে বিজাতীয় গোলামি থেকে উদ্ধার করতে পারি। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করব।

নৈরাশ্যের পথ ছেড়ে উদ্যমী হোন। নিরাশ হব না! নৈরাশ্যকে প্রশ্রয় দেব না। নৈরাশ্য তো কাফিরদের জন্য। একজন মুসলিম কখনো নিরাশ হতে পারে না। আমি আমার প্রচেষ্টা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চালিয়ে যেতে থাকব। ফলাফল তো আল্লাহ তাআলার হাতে। ফলাফলের ব্যাপারে চিন্তা না করে প্রচেষ্টা আমি চালিয়ে যাব। রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, যখন কিয়ামত সংঘটিত হতে দেখবে আর এমতাবস্থায় যার হাতে একটি চারাগাছ আছে, সে যেন তা রোপণ করে দেয়।

(মুসনাদে আহমাদ : হাদিস ১২৯০২)

এ হাদিসে মানুষকে এই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে মানুষ যেন নিরাশ না হয়ে তাদের সামর্থ্যের মধ্যে করণীয় কাজ যথাসম্ভব চালিয়ে যেতে থাকে। ফলাফল তো আল্লাহ তাআলার হাতে, তার অপেক্ষা না করে নিজের কাজ যথাসাধ্য চালিয়ে যাবে। যদি সঠিক নিয়তে ও সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করা হয়, তাহলে ইনশাআল্লাহ, অবশ্যই আল্লাহ ভালো ফল দেবেন।

কিউএনবি/অনিমা/০৮ ডিসেম্বর ২০২৪,/রাত ৯:৫৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit