মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন

যে মানত পূরণ করতে নেই

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৯ Time View

ডেস্ক নিউজ : মাওলানা নোমান বিল্লাহ

কেউ মানত করলে তা পালন করা ওয়াজিব। তবে মানত করার ব্যাপারে হাদিসে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার কাছে শর্ত দেয়া হয়। অনেকে আনন্দে এমন কাজ করতে চান। সেটা ভিন্ন বিষয়।
কিছু মানত আছে যা আদায় করা আবশ্যক নয়। তবে তার জন্য কাফ্ফারা আবশ্যক হয়। সেসবের কিছু উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হলো।
 
পাপ কাজের মানত করাকেউ যদি বলে, আমার এই ইচ্ছা পূরণ হলে আমি অমুক মাজারে দান করব। কিন্তু দেখা গেলো মাজারের টাকা হারাম কাজে ব্যবহৃত হয়। তাহলে সেই মাজারে দান করাও হারাম হবে। এজন্য এই মানত পূরণ করা আবশ্যক নয়। তবে তাকে কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।

অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করাকেউ যদি বলে, আমার এই ইচ্ছা পূরণ হলে আমি এই গাভিটি মানুষকে খাওয়াব। দেখা গেলো গাভিটি তার নিজের না। তাহলে এই মানত পূরণ করা আবশ্যক নয়। তবে তাকে কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।

 
এই দুটি বিষয়ে একটি হাদিস আছে। সেখানে জানা যায়, একবার এক আনসার নারী কাফেরদের হাতে বন্দি হন। তাদের আজবা নামে একটি উট ছিল। উটগুলোকে বাড়ির সামনে বিশ্রামে রাখা হতো।
 
নারী ছিলেন বাঁধা অবস্থায়। বন্ধন খুলে পালাতে গেলে তিনি উটের কাছে চলে যেতেন। উট আওয়াজ করে উঠলে তিনি আর পালাতে পারতেন না। একবার তিনি আজবার উটের কাছে পৌঁছানোর পরও উটটি কোনো আওয়াজ করল না। সে তার পিঠের ওপর বসে হাঁক দিলে উটটি চলতে থাকল।
 
সবাই তার পালানোর কথা টের পেয়ে তাকে খুঁজতে শুরু করল। কিন্তু আজবা তাদের ব্যর্থ করে দিল। সেই আনসার নারী আল্লাহর নামে মানত করল, আল্লাহ এই উটের সাহায্যে তাকে মুক্তি দিলেন, উটকে তিনি অবশ্যই কোরবানি দেবেন।
 
ওই নারী মদিনায় পৌঁছালে লোকজন তাকে দেখে বলল, এ তো রসুলুল্লাহর (স.) উট আজবা। তিনি জানালেন যে তিনি এমন একটা মানত করে ফেলেছেন যে আল্লাহ তাকে এই উটের মাধ্যমে রক্ষা করলেন, উটটিকে তিনি অবশ্যই আল্লাহর নামে কোরবানি দেবেন।
 
ঘটনাটি তারা নবীজি (স.)-এর কাছে গিয়ে বললেন। তিনি বললেন, কী মন্দ প্রতিদান সে উটটিকে দিতে চাইছে। সে আল্লাহর নামে মানত করেছে, আল্লাহ তাকে এ উটের মাধ্যমে রক্ষা করলে সে উটটিকেই কোরবানি করবে। জেনে রাখো, পাপের ব্যাপারে মানত করলে সে মানত পূরণ করতে নেই। আর বান্দা যার মালিক নয়, সে বস্তুর মানতও পূরণযোগ্য নয়। মূলত আল্লাহর নাফরমানির বিষয়ে মানত সংঘটিত হয় না। (মুসলিম ৪০৯৯)
 

মানত পূরণ না করে কাফ্ফারা দিতে হবে

মানতকারী ব্যক্তি নেক কাজ করতে সমর্থ না হলে বা পাপ কাজের মানত করলে তাকে কসম ভঙ্গের কাফ্ফারা (প্রতিবিধান) দিতে হবে।

 
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কেউ নাম উল্লেখ (নির্দিষ্ট) না করে মানত করলে, তার কাফ্ফারা শপথ ভঙ্গের কাফফারাওর অনুরূপ। কেউ পাপ কাজের মানত করলে তার কাফ্ফারা শপথ ভঙ্গের কাফফারার অনুরূপ। কেউ যদি এমন মানত করে যা পূর্ণ করা তার সামর্থ্যের বাইরে, তার কাফ্ফারা হবে শপথ ভঙ্গের কাফফারার অনুরূপ। কোনো ব্যক্তি যদি সামর্থ্য অনুযায়ী মানত করে তবে সে যেন তা পূরণ করে।’ (আবু দাউদ ৩৩২২)

না বুঝে মানত করা

কেউ যদি না বুঝে মানত করে বসে। তাহলে তার জন্য মানত পূরণ করা আবশ্যক নয়। কাফফারাও দিতে হবে না। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, কেউ যদি কোনো শব্দের অর্থ না জেনে তা উচ্চারণ করে তবে তার ওপর কোনো কিছু আবশ্যক হবে না, তবে অজ্ঞতার কারণে তাকে ভর্ৎসনা করা হবে।

 
আল্লামা ইজ্জ ইবনে আবদুস সালাম (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অর্থ না জেনে কোনো শব্দ উচ্চারণ করলে শব্দের দাবিগুলো তার ওপর ওয়াজিব হবে না।’ (কাওয়াইদুল আহকাম ২১৮)

এ জন্য কোনো অনারব ব্যক্তি যদি না বুঝে কোনো আরবি কুফরি বাক্য উচ্চারণ করে তবে তার ঈমান নষ্ট হবে না। তবে কুফরি বাক্য উচ্চারণের জন্য সে তওবা করবে। এ ছাড়া কোনো বিধান কার্যকর হওয়ার জন্য মানুষের ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি আবশ্যক, জ্ঞাত না হলে ব্যক্তির ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির কল্পনা করা যায় না।
 
যদি ব্যক্তি মানত সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এবং সে নেক কাজের মানত করে, তবে তা পূরণ করা ওয়াজিব। বিপরীতে কোনো পাপ কাজের মানত করলে তা পরিহার করা ওয়াজিব। কেননা রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের মানত করে সে যেন তা করে এবং যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজের মানত করে সে যেন তা না করে।’ (বুখারি ৬২০২)

 

কিউএনবি/আয়শা/১৭ অক্টোবর ২০২৪,/দুপুর ১:১২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit