বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

শর্ট ভিডিওর প্রতি আসক্তির ইহকালীন ও পরকালীন ক্ষতি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৪৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : মাওলানা নোমান বিল্লাহ

স্মার্টফোনের সবচেয়ে বেশি আসক্তি সৃষ্টি করে ছোট ছোট ভিডিও। যা শর্টস, রিলস ইত্যাদি নামে পরিচিত। এসব ভিডিও দেখতে দেখতে কখন সময় চলে যায় তার খেয়াল রাখেন না কেউ কেউ।

এক্ষেত্রে দেখা যায় একটি ভিডিও মানুষকে পরবর্তী ভিডিও দেখতে উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে, তা কেউ টেরই পাচ্ছে না; যা আমাদের সাময়িক আনন্দ দিয়ে মানসিক, শারীরিক, আর্থিক ও দীনি ক্ষতি সাধন করছে। নিম্নে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর রিলস কিংবা শর্টস ভিডিওর কিছু ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরা হলো:
সময় নষ্ট হয়: মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য দুনিয়ায় এসেছি। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই আমাদের অনন্তকালের প্রস্তুতি নিতে হবে। কিয়ামতের দিন মানুষকে তার গোটা জীবনের হিসাব দিতে হবে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শর্ট ভিডিওর আসক্তি মানুষের সেই মূল্যবান সময়গুলো হেলায় কাটাতে উৎসাহী করে। অথচ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, 

এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে দুটিতে বেশির ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর। (বুখারি ৬৪১২) শর্ট ভিডিও আমাদের এই দুটি নিয়ামতের ব্যাপারেই উদাসীন করে রাখে। দুনিয়াবি দিক থেকেও সময় মহামূল্যবান। এর অপব্যবহার মানুষের জন্য নানাবিধ অকল্যাণ বয়ে আনে।

ইবাদত থেকে বঞ্চিত হয়: শর্ট ভিডিওর আসক্তিতে ডুব দিলে অনেক সময় সময়জ্ঞান হারিয়ে যায়। ফলে কারো কারো ক্ষেত্রে নামাজের জামাত হারানো কিংবা গোটা নামাজের ওয়াক্ত হারানোর ঘটনা ঘটে, যা খুবই দুর্ভাগ্যের। এর পরিণতি জাহান্নাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, 

নবী ও হিদায়াতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো। সুতরাং তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। তবে যারা এরপর তওবা করে নিয়েছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তারাই তো জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি কোনো ধরনের জুলুম করা হবে না। (মারইয়াম ৫৯-৬০)

মনোযোগ কমে যায়: ছোট ভিডিওগুলোর দ্রুত পরিবর্তনশীল কনটেন্ট মস্তিষ্ককে দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে। এতে শিক্ষায় মনোযোগের ঘাটতি এবং কর্মক্ষেত্রে ফলপ্রসূতা কমে যায়। ইবাদতেও মনোযোগ থাকে না। অথচ ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য মনোযোগ শর্ত।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ খুশু খুজুর সঙ্গে ইবাদতকারীদের সুনাম করেছেন। আর হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জেনে রেখো, আল্লাহ গাফিল ও অমনোযোগী মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি ৩৪৭৯) মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা বাড়ে: শর্ট ভিডিওর কারণে অনেক সময় অন্যান্য মানুষের জীবন, সাফল্য বা ভ্রমণ দেখে নিজের জীবনকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। এই তুলনা মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা সৃষ্টি করতে পারে, যা আত্মবিশ্বাসের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মানুষ হতাশায় ভুগতে পারে। পাশাপাশি মানুষকে আল্লাহর শোকর করা থেকে বিরত রাখে।
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো (শোকর করো) তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য (আমার নিয়ামত) বৃদ্ধি করে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও (তবে জেনে রেখো, অকৃতজ্ঞদের জন্য), আমার শাস্তি অবশ্যই কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম ৭) ঘুমের সমস্যা: অনেকেই রাতে ঘুমানোর আগে শর্ট ভিডিও দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে ঘুমের আগে স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটায়, যা অনিদ্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর প্রভাব দৈনন্দিন কাজকর্মে যেমন পড়ে, ইবাদতেও পড়ে।
সম্পর্কের অবনতি: শর্ট ভিডিওর আসক্তি পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে, কারণ সময়ের অভাব ও আসক্তির কারণে মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে ফেলে। অথচ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখাও ইসলামের অংশ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(তারাই বিবেকবান) আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে আদেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুণ্ন রাখে এবং তাদের প্রতিপালককে ভয় করে আর ভয় করে কঠোর হিসাবকে।’ (সুরা রাদ ২১)

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৮ অক্টোবর ২০২৪,/রাত ১০:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit