এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাজরাখানা গ্রামের খালপাড়ার মাদক ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন পেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাদক ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন ওই গ্রামের শওকত আলীর ছেলে। স্থানীয় প্রভাবশালী এ মাদক কারবারি একটি সরকারি রাস্তা দখল করে রাস্তার মাটি কেটে নিয়েছে।
রাস্তাটি দখল করে মাটি কেটে নেওয়ায় গ্রামের ৭ টি পরিবারের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অবরুদ্ধ পরিবার গুলোর শিক্ষার্থীরা যেতে পারছেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মুমুর্ষ রোগী অসুস্থ মা ও শিশুদের নিয়েও পড়তে হচেছ বিপাকে। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধানের নির্দেশ দেন। এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রভাবে মাদক কারবারি ইসমাইল হোসেন রাস্তাটি দখল নিয়ে সেখান থেকে মাটি কেটে নিজ বাড়ির উঠানে ভরাট করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার বেশ কয়েকজন জানান ইসমাইল একজন শীর্ষ মাদক কারবারি। তার সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সখ্যতা রয়েছে। যে কারনে সে কারো ভয় পাচেছনা।
শুক্রবার (৬ সেপ্টম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, হাজরাখানা গ্রামের খালপাড়ার এই সরকারি সড়করে পাশেই কপোতাক্ষ নদ। নদের পশ্চিম এলাকার পানি বের হওয়ার জন্য একটি সরকারি খাল রয়েছে। এই খাল পাড়ে একটি সরকারি রাস্তা রয়েছে। এ রাস্তাটি ব্যবহার করেন ৭ টি পরিবারসহ গ্রামের শত শতমানুষ। বিশেষ করে সাতটি পরিবারের মইন রাস্তায় উঠার একমাত্র মাধ্যম এটি। সম্প্রতি অতিবর্ষায় রাস্তাটির কিছু অংশ ধসে পড়লে এলাকাবাসি সকলে মিলে রাস্তাটি মেরামত করতে গেলে ইসমাইল বাধা দেয়। শুধু বাধা দিয়েই ক্ষ্যান্ত থাকেনি ধসে যাওয়া স্থান থেকে মাটি কেটে নিজের বাড়িতে ভরাটের কাজ করছে। যে কারনে রাস্তাটি স¤পূর্ণ বিচিছন্ন হয়ে গেছে। এলাকার গণ্যমান্যরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তাদের উপরে ইসমাইল ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখি আচারণ ও গালিগালাজ দিতে থাকে।
এলাকার কয়েকজন জানান, এই রাস্তা দিয়ে গ্রামের খালপাড়ার মানুষ যাতায়াত করত। কিন্তু রাস্তাটি দখল করে নেওয়ায় পরিবারগুলো অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের লোকজনের যাতায়াতের বিকল্প কোন রাস্তা নেই। খালাপাড়ার আব্দুল হান্নান, রাসেদ হোসেন, আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, শৈশব থেকে তারা ওই রাস্তা দিয়ে আমরা যাতায়াত করে আসছি। সম্প্রতি বর্ষার পানিতে রাস্তা ধসে যায়। আমরা পাড়ার লোকজন মিলে রাস্তাটি মেরামত করতে গেলে একই এলাকার শওকত আলীর ছেলে মাদক ইসমাইল হোসেন রাস্তা মেরামতের কাজে বাধা দেয়। তিনি সরকারি রাস্তার জায়গা দখল নিয়ে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে থাকে। যারা রাস্তা মেরামতের কাজে অংশ নেন তাদেরকে মারপিট করে এবং রাস্তার এলাকায় আসলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে।
অবরুদ্ধ একটি পরিবারের সদস্য মোজাম্মেল হোসেন জানান, তারা রাস্তাটি মেরামত করার কাজে অংশ নেওয়ায় তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দিচেছ ইসমাইল হোসেন।এ বিষয়ে মোজাম্মেলসহ ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় একটি অভিযোগও করেছেন। অভিযোগ করার কারনে তার বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী সন্তানদের প্রাণনাশের হুমকি দিচেছ ইসমাইল হোসেন। মোজাম্মেল বলেন, আমার কলেজ পড়–য়া মেয়ে নিয়ে আমি শঙ্কিত। আমার মেয়ে ভয়ে বাড়ি থেকে বের হচেছ না।
নারায়নপুর ইউনিয়নের বিগত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী তুহিনুর রহমান বলেন, বিষয়টিখুবই মানবিক। আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে ইসমাইলকে রাস্তা মেরামত করার কাজে বাধা না দেওয়ার জন্যঅনুরোধ করলে সে আমাকে এবং আমার সাথে যারা ছিলেন তাদেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারমুখিআচারণ করে।ইসমাইল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে বলেন, আমি রাস্তা বন্ধ করেছি। কার সাধ্য আছে রাস্তা খুলে দিক। আমি সকলকে ম্যানেজ করে বাপের টাকা দিয়ে মাদক ব্যবসা করি। এটা আমার ব্যাপার। সে আরো বলেন আমি কারো কথায় চলিনা। আমার রাজ্যে আমিই রাজা।স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান বলেন, রাস্তাটি মেরামতের জন্য আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কেউ চাইলেই সরকারি জায়গা দখল নিতে পারবেনা। রাস্তা মেরমতের কাজ শুরু হয়েছে। অবশ্য ভুক্তভোগীরা বলছে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছি। তার পরেও সমাধান না হলে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করবো।
কিউএনবি/অনিমা/০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:২৬