বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০১:০৬ অপরাহ্ন

চৌগাছায় বলুহ মেলা বসতে শুরু করেছে দোকান-পাশারী

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) ।
  • Update Time : শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৫০ Time View

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ঐতিহ্যবাহী পীর বলুহর মেলার আর মাত্র কয়েক দিন বাকী। দিন এগিয়ে আসছে বাড়ছে এলাকায় ব্যবস্ততা। নতুন করে রওজা শরিফের সংস্কার রং চং ও ঝাড়া মুছার কাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ভিড় করতে শুরু করেছেন দেশের বিভিন্ন জেলার দোকানীরা। তারা পছন্দের স্থানে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসিয়ে অপেক্ষা করছেন মেলার জন্য। ভক্তরা এসে মাজারে অবস্থান করছেন।

উপজেলার বুক চিরে একে বেঁকে বয়ে চলা মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের পশ্চিম পাড়ে উঁচু মাটির ঢিবির ওপর হাজরাখানা গ্রামে এ অঞ্চলের বিখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (র.) এর রওজা শরীফ। প্রতি বছর বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামে বলুহর রওজা শরিফকে ঘিরে বসে মেলা। মেলা চলে ১০-১২ দিন। অন্যান্য বছরগুলোর মত এ বছরও মেলাকে সামনে রেখে এলাকায় বেড়েছে ব্যস্ততা। এলাকার জামাই-মেয়ে বাবার বাড়ীতে আসতে শুরু করেছেন। আত্মীয় বাড়ীতে বেড়াতে আসছে দূরের আত্মীয়রা।

সরেজমিনে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) হাজরাখানা গ্রামে গেলে চোখে পড়ে,পীরের রওজা শরিফ ঝাড়ামুছার কাজ শেষ হয়েছে। এ সময় কথা হয় রওজা শরিফের খাদেম জয়নাল সাহার সাথে। তিনি বলেন, পীর বলুহ দেওয়ান (র.) এ অঞ্চলের বিখ্যাত পীর ছিলেন। তার এই রওজাকে ঘিরে প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার ওরশ শুরু হয়। তা চলে ৪-৫ দিন। এ মাসের শেষ মঙ্গলবার রাত ১২টার পর পীরের রওজা শরীফ পানি দিয়ে ধুয়ে-মুছে শুরু হয় ওরশের কার্যক্রম। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পীরের রওজায় আসা খলিফাদের আপ্যায়নসহ নানা আয়োজন চলে। করা হয় মিলাদ দোয়, জিকির-অসগর ও ওয়াজ মাহফিল। শত শত বছর ধরে রওজাকে ঘিরে বসে মেলা।

যাকে আমরা বলুহর মেলা বলে থাকি। মেলাতে মিষ্টি-মিঠাই, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, শিশুদের রকমারী খেলনাসহ হরেক রকমের দোকান বসে। এ মেলায় সব বয়সের মানুষ আনন্দ উপভোগ করেন। তবে গ্রামের মানুষের প্রযোজনে বসতবাড়ি বাড়ী-ঘর নির্মাণ করায় জায়গায় আগের তুলনায় অনেক কুমে গেছে। এছাড়া পীরের রওজা শরীফের পাশেই নদ পারা-পারের জন্য স্থানীয়রা একটি বাঁশের সাঁকো তৈরী করে ছিলো। নদ খননের পর সেটিও আরা নেই। তাই এবছর নদ পারাপারে এরাকা বাসীর অনেক পথ ঘুরতে হবে। এদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে হাজরাখানা গ্রামসহ পাশের উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামে বইছে আনন্দের ফুয়ারা।

যাকে ঘিরে এতো আয়োজন তার স¤পর্কে অনেকে জানান। পীর বলুহ দেওয়ান (র.) জন্ম ঝিনাইদাহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ধুপাদি গ্রামে। হাজরাখানা গ্রাম তার মামার বাড়ি। পীর বলুহর বয়স ১০ বছর তখন তিনি গরু চরাতে পাশেই ব্যাদন বিলে যান। তিনি গরুগুলো একজনের ক্ষেতে দিয়ে বাবলা গাছের নিচে আরাম করতে থাকেন। জমির মালিক এই দৃশ্য দেখে গরুগুলো খোয়াড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বলুহ দেখার পর গরুগুলোকে বক বানিয়ে বাবলা গাছের মাথায় বসিয়ে রাখেন।

একদা সরিশার ধাদায় আগুণ ধরিয়ে দিলে তার মামা তাকে বকা-ঝকা করতে থাকে তখন তিনি বলেন, মামা ছাই বাতাসে উড়িয়ে নেন, দেখা যায় গাছ পুড়ে গেলেও ভিতরে থাকা সরিশার কিছুই হয়নি। এ ধরনের অসংখ্য অলৌকিক কাহিনীর ফলে ধীরে ধীরে পীর উপাধিতে ভূষিত হন বলুহ দেওয়ান (র.)। এ সময় কথা হয়, মেলায় বসানো বগুড়া জেলার দুপচা উপজেলার ধাপেরহাট গ্রামের ইশারত আলীর ছেলে দোকান উজ্জল হোসেন, একই এলাকার সোলাইমান হোসেনের ছেলে বুলবুল হোসেন ও ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে লিটন হোসেনের সাথে তারা জানান, আমরা প্রতি বছর এ মেলায় দোকান বসায়। এবার আগে ভাগেই এসেছি।

ওরশ শরীফে যোগদিতে আসা কুষ্টিয়ার আনোয়ারা খাতুন (৫০), শরিসাবাড়ীর চাইনা (৫০), ঝিনাইদাহের রাশেদাহ (৪৭), ঢাকা বিক্রমপুরের মামুন খান (৫৪), ঢাকা নারায়নাঞ্জের সোহেল পাগল (৪০), যশোর ঘোপের নূর ইসলাম (৬০), যশোর চুড়ামনকাঠির আব্দুর রহমান (৪০), কোটিয়া, ভেড়ামারার উম্মে হাবিবা (৪০), চৌগাছার মুক্তদাহ গ্রামের রেজাউল ইসলাম (৫০)। পীরের রওজায় এসে জিকির করছেন। তারা জানান তাদের প্রতিদিনের তিন বেলার খাবার দেওয়া হচ্ছে রওজা শরীফের পক্ষ থেকে।

হাজারাখানা গ্রামের বাসিন্দা নারায়নপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বিএম বাবুল আক্তার বলেন, আগামী কাল শনিবার গ্রামের লোকজন বসে মেলা পরিচালনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। প্রশাসনের নিকট ইতিমধ্যে মেলা অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কাল অনুমুত পত্র আমরা হাতে পাবো।

 

কিউএনবি/আয়শা/০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/দুপুর ২:২৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit