এম এ রহিম , চৌগাছা (যশোর) : চিকিৎসাসেবায় ১৬ বার দেশসেরা পুরস্কার পাওয়া যশোরের চৌগাছা মডেল হাসপাতালে জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে অর্ধেক জনবল দিয়ে চলছে এই হাসপাতালের কার্যক্রম। যার ফলে মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। চৌগাছা উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালের মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩২টি। খাতাকলমে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন যদিও এরমধ্যে ৬ জন রয়েছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কেউ কেউ আবার দেশের বাইরেও অবস্থান করছেন।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, সার্জারী, মেডিসিন, শিশু, অর্থো, কাডিও, চক্ষিু, ইএনটি, চর্মও যৌন এবং নবসৃষ্ট সহকারি সার্জন, আইএমও, প্যাথলজিষ্ট, এ্যানেসথেসিস্ট এমনকি আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারও নেই। ভারপ্রাপ্ত হয়ে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন ডা. ইমরান। এ হাসপাতালে এই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি অ্যানেসথেসিয়া, অর্থো ও শিশু বিশেষজ্ঞসহ ২১ জন মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া ২জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, প্রধান সহকারী, প্রধান সহকারী-কাম হিসাব রক্ষক, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী,হিসাব রক্ষক, এসব পদে ৭১টির মধ্যে ৩৭টি রয়েছে শূন্য। বর্তমানে জোড়াতালি দিয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছেন, বিগত দিনে চৌগাছা মডেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক চিকিৎসক ইমদাদুল হকের চেষ্টায় অন্তসত্ত্বাদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেন। মা ও প্রসূতিসেবায় অবদান রাখার ফলে ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এটি উপজেলা পর্যায়ে একটানা দেশসেরা হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৬ সালেও হাসপাতালটি অর্জন করে জাতীয় পুরস্কার। স্বাস্থ্যসেবায় সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করে পেয়েছে হেলথ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-২০১৮। তৎকালিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার গ্রহণ করেন তৎকালীন প্রতিষ্ঠান প্রধান সেলিনা বেগম।
দীর্ঘদিন গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় হাসপাতালটিতে গর্ভবতি মায়েদের সেবা দারুণ ভাবে ব্যহত হয়। পরে হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারা নামে একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) যোগদান করেছেন। তিনিই গর্ভবতি ময়েদের সেবা দিয়ে চলেছেন। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, শত শত রোগী লাইনে দাড়িয়ে আছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। ৩ নম্বর রুমে ডাঃ আল ইমরান রোগী দেখছেন। এ রুমের সামনে লাইনে দাড়িয়ে আছেন মা, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের শতশত রোগী। ১২ নম্বর রুমে রোগী দেখছেন ডাঃ সুরাইয়া। এ রুমের সামনে লাইনে দাড়িয়ে আছেন গর্ভবতি মা, গাইনি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন বয়সের শতশত নারী রোগী। এ ছাড়া ডেন্টাল সার্জন ডাঃ ইয়াসিন আরাফাত রোগী দেখার কাজে বস্ত সময় পার করছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারা ডেলিভারি ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এ সময় সেবা নিতে আসা উপজেলার কয়ারপাড়া গ্রামের মফিজুর রহমান, হাকিমপুর গ্রামের শাহিনুর রহমান, দুলালপুর গ্রামের আবুল বাশার, পৌর এলাকার মাওঃ রবিউল ইসলামসহ অনেকেই জানান, যেমন রোদের গরম তেমনি রোগীর ভিড়, প্রচন্ড গরমের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে আছি। অনেকে আবার লাইনে দাড়িয়ে থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে ডাক্তার না দেখিয়েই বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। তারা বলেন এখানে জরুরি মুহূর্তে সেবা পাওয়া কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুপুর একটার পর অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে সামান্য সমস্যায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন ক্লিনিকে দেশসেরা হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের ফলে সেই রকম চিকিৎসাসেবা নেই বলে তারা মন্তব্য করেন।
হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, অর্ধেক লোকবল নিয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। মোট লোকবল ২১০ জন। এরমধ্যে খাতা কলমে কর্মরত রয়েছেন ১৩৩ জন, ফাঁকা রয়েছে ৭৭ জন। কর্মরতদের মধ্যে অনেকে আবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত কেউ আবার অবস্থান করছেন দেশের বাইবে। তিনি আরও বলেন, এই লোকবলে কোয়ালিটি সার্ভিস দেওয়া সম্ভব নয়। রোগীদের সন্তুষ্টি সেবা দিতে হলে অবশ্যই শূন্যপদ গুলো পুরণ করতে হবে। ইতিমধ্যে শূন্য পদে লোকবল নিয়োগে অনলাইনে সফট কপি এবং হার্ডকপি উভয় প্রক্রিয়ায় আবেদন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বলেন, দেশে ডাক্তার ও হাসপাতালের সংখ্যার অনুপাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচজন করে ডাক্তার ভাগে পড়ে। চৌগাছায় তার ব্যতিক্রম। হঠাৎ করে অনেকে অন্যত্রে বদলী হয়ে গেছে। তাই শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে আমরা এ শূন্যতা পূরণের জন্য চেষ্টা অব্যহত রেখেছি।
কিউএনবি/আয়শা/১৬ এপ্রিল ২০২৪,/রাত ৮:১৪