রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৬ অপরাহ্ন

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার মর্যাদা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৯০ Time View

ডেস্ক নিউজ : দীর্ঘ একটি মাস পবিত্র মাহে রমজানে ইবাদত- বন্দেগি করে প্রত্যেক মুমিন হৃদয় প্রশান্তিতে ভরপুর। আল্লাহতায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। 

তিনি বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানব জাতিকে একমাত্র আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)। 

আল্লাহর একান্ত ইচ্ছা তাঁর প্রত্যেক বান্দা তাঁর ইবাদত সম্পন্ন করার মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন জীবনকে সরল সঠিক পথ সিরাতুল মুসতাকিমে গড়ে তুলবে। ইবাদত মূলত দুই প্রকার – ফরজ ইবাদত; যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি। নফল ইবাদত; যেমন নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ, দান-খয়রাত, নফল রোজা রাখা ইত্যাদি।

মানব জাতি মূলত তখনই মহান আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানিত ও প্রিয় হবে, যখন তার প্রতিটি কাজ হবে একমাত্র আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। সুখে-দুঃখে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, তাঁকেই ভালোবাসবে। তাঁরই নৈকট্য লাভের চেষ্টায় সব সময় ব্যস্ত থাকবে। ফরজ ইবাদত সুসম্পন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে নফল ইবাদতে অধিক মনোযোগী হবে। 

নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে নফল রোজা বান্দাকে অতি সহজেই মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। কারণ রোজা এমন একটি ইবাদত যা জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঢালস্বরূপ এবং এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ নিজেই দিয়ে থাকেন বলে হাদিসে কুদসিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

মাহে রমজান চলে যাওয়ার পরও বান্দা যেন সিয়াম সাধনা অব্যাহত রাখে সেজন্য প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজাঈদে মিলাদুন্নবীর রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান দিয়েছেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ফরজ নামাজের কমতিগুলো পূরণ করতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে রমজানের পূর্ণতা প্রদান করতে। 

রোজাদার যদি অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি পাপাচার-কামাচার প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে, তাহলে তার রোজার সওয়াব কমে যায়। আর কমতির সওয়াব পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজাসহ বছরজুড়ে রয়েছে নানা উপলক্ষে নফল রোজা। এ শাওয়ালের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহ কবুল করেন তখন তাকে অন্য নেক আমলের তৌফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার লক্ষণও বটে। 

রসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর ৮২২)। 

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে কোরআনুল কারিমে। সুরা আনয়ামের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করল সে ১০ গুণ সওয়াব পাবে।’ 

এ হিসেবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল সে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণ ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সওয়াব। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সওয়াব হবে। 

হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৬২) হজরত উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ 

তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখো, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১৫৭)

লেখক : খতিব, মনিপুর বাইতুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা

কিউএনবি/অনিমা/১৩ এপ্রিল ২০২৪/দুুপুর ১:৫৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit