স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর): যশোরের মনিরামপুরে গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে নির্বাচনী পরীক্ষায় নকলের অভিযোগে উত্তরপত্র(খাতা) নিয়ে নেওয়ায় বাড়িতে গিয়ে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেছে সাবিনা খাতুন নামে এক পরীক্ষার্থী। প্রতিবাদে গতকাল রোববার শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে বিক্ষুব্ধরা কলেজে ভাংচুর চালায়। এ সময় পুলিশি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। নিহত দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী সাবিনা খাতুন উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের আবদুল জলিলের মেয়ে।গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক চিন্ময় কুন্ডু সহ এলাকাবাসী জানান, দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয় শনিবার থেকে। এ দিন সকাল ১০ টায় শুরু হয় ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা।
কিন্তু নকল করার দায়ে সাবিনা খাতুন নামের ওই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র নিয়ে নেন কক্ষ পরিদর্শক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ইসরাইল হোসেন। কক্ষ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন জানান, দেড়ঘন্টা পর উত্তরপত্র পুনরায় তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে সাবিনা বাড়িতে গিয়ে অভিমানে ঘরের মধ্যে আড়ার সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে বিকেলের দিকে পুলিশ সাবিনার মরদেহ উদ্ধার করেন। মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী মাসুদ জানান, আত্মহত্যার আগে সাবিনা তার খাতায় সুইসাইডনোট লিখে যান। পুলিশ সেই সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করে। তাতে সাবিনা উল্লেখ করেন ‘আমার কিছু মনে থাকে না বলে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আগে আমি অল্প একটু কাগজে তথ্য লিখে পড়তে পড়তে পরীক্ষা কক্ষে যাই। পরীক্ষার মধ্যে কলেজের সমাজ-বিজ্ঞানের শিক্ষক ইসরাইল হোসেন দেখতে পেয়ে উত্তরপত্র নিয়ে দেড় ঘন্টা আটকে রাখেন। আমি তার কাছে ভুল স্বীকার করেছি। তারপরও আমাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। আমি লজ্জায় মুখ দেখাতে না পেরে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছি। ভুলত্রুটি মাফ করে দিও। আমার কাছে ফারহানা ২৫ টাকা ও সুবর্ণা পাঁচ টাকা পাবে। তোমরা দিয়ে দিও।
এ দিকে সাবিনার আত্মহত্যার জন্য দায়ি করে কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল রোববার সকাল ১০ টার পর থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী গোপালপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে তারা মিছিলসহকারে কলেজে গিয়ে ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। তবে এ সময় অধ্যক্ষ রেজাউল করিম কলেজে উপস্থিত ছিলেননা। মাধ্যমিক সেকশনের সহকারি প্রধান শিক্ষক পলাশ কুমার ঘোষ জানান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় গতকাল রোববার নির্ধারিত বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অধ্যক্ষ রেজাউল করিম জানান,তিনি তিনদিনের প্রশিক্ষনে যশোরে রয়েছেন। মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মেহেদী জানান, সাবিনার মরদেহ উদ্ধারের পর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাবার পর পরবর্তি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/অনিমা/৩১ মার্চ ২০২৪/বিকাল ৫:৫৬