সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৬ অপরাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেতু ভেঙ্গে ২৭ জন নিহতের ‘গুজব ভাইরাল’

বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ।    
  • Update Time : সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪
  • ৯৪ Time View
বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মিডিয়া ইন ডেভেলপমেন্ট (সাকমিড) নামে একটি এনজিও’র দেওয়া তথ্য মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৭৯ ভাগ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের তথ্য বিশ্বাস করে। ৮৬ জনের উপর জরিপ চালিয়ে গত জানুয়ারির শেষের দিকে প্রেস ক্লাবে হওয়া মতবিনিময় সভায় সাকমিড এ তথ্য তুলে ধরে।
সাকমিডের এ তথ্যেরই প্রতিফলন যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। গত দু’দিন ধরে ফেসবুকে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য বিশ্বাস করে ভাইরাল করেছেন হাজারো ব্যবহারকারি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সেতু ভেঙ্গে ২৭ জনের মৃত্যু ও ৪৩ জন আহতের মিথ্যা তথ্যের এ গুজব গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়। রবিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনেকেই এ তথ্য দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। আবার কমেন্টে অনেকে মিথ্যা তথ্য বা গুজব বলার পরও বেশিরভাগই লেখাটি সরিয়ে নিচ্ছেন না।
স্থানীয় এক সাংবাদিকের ‘সচেতনতামূলক’ পোস্ট থেকে মূলত ওই গুজব ছড়ায়। সাংবাদিকের লেখায়ও ত্রুটি ছিলো বলে মনে করা হচ্ছে। ওই সাংবাদিক বিষয়টি বুঝতে পেরে তার পোস্ট সরিয়ে নিলেও ইতিমধ্যেই ফেসবুকে সেটি খুব বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ২২ মার্চ তার ফেসবুক পেজে পোস্ট দেন ‘ব্রেকিং নিউজ- এই শোক সইবার নয়। নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে বাস-ট্রাক খালে, ২৭ জন নিহত। গুরুতর আহত আরও ৪৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মা-বাবার চোখের সামনে সন্তানের আর সন্তানের সামনে মা-বাবার লাশ। স্বজনদের আহাজারিতে সয়লাব চারপাশ। এমন একটা সংবাদই হয়তো অপেক্ষা করছে নাসিরনগরবাসীর সামনে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো দ্রুত মেরামত করা না হলে যে কোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে এমন দুর্ঘটনা। তখন শোক প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। হাজার কোটি টাকা দিয়েও দুর্ঘটনায় নিহত কাউকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত চলাচল নিশ্চিত করবে।’
সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের এই স্ট্যাটাসের উপরের অংশ মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। অনেকে পোস্ট করতে থাকেন যে, ‘নাসিরনগরে ব্রিজ ভেঙে বাস-ট্রাক খালে, ২৭ জন নিহত। গুরুতর আহত আরও ৪৩ জনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’ এক্ষেত্রে ‘এমন একটা সংবাদই হয়তো অপেক্ষা করছে নাসিরনগরবাসীর সামনে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো দ্রুত মেরামত করা না হলে যে কোনো মুহূর্তেই ঘটতে পারে এমন দুর্ঘটনা। তখন শোক প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।’- এমন লেখা উহ্য করে যাওয়া হয়। কেউ কেউ আবার সাংবাদিকের পোস্টই শেয়ার করে সত্য ঘটনা মনে করে কিছু একটা লিখেন। 
এ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। জেলার সাংবাদিকরাও খোঁজ নিতে শুরু করেন। অনেকে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় স্বজন ও শুভাকাংখীদের কাছে ঘটনা জানতে চান। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সাংবাদিক মাহমুদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাস মুছে ফেলে আরেকটি পোস্ট দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করেন। কিন্তু ততক্ষণে শত শত ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়া হয়ে যায়। 
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এ বিষয়ে সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমার পোস্ট দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন। মূলত দুর্ঘটনার আগে যেন আমরা সচেতন হই সেই অর্থেই পোস্টটি দেওয়া হয়। কিন্তু লেখাটা পুরোপুরি না পড়ে অনেকে নানাভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান। পরে আমি পোস্টটি কেটে দিয়ে এর ব্যাখা দেই।’
নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সোহাগ রানা জানান, ওই সাংবাদিক শুরুতেই লিখেন ব্রেকিং নিউজ। যে কারণে অনেকে সম্পূর্ণ লেখা না পড়ে ঘটনা সত্য ধরে নিয়ে শেয়ার করেন কিংবা নিজেদের মতো করে লিখে ফেসবুকে পোস্ট। যে কারণে এ গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল অংশ থেকে শুরু হওয়া একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক নাসিরনগর হয়ে লাখাই উপজেলায় গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটির নাসিরনগর অংশে অন্তত চারটি ব্রিজ অতি ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি নাসিরনগরের বেনীপাড়া এলাকায় একটি ব্রিজের দু’পাশের মাটি সরে গিয়ে জোড়ার অংশ কিছুটা ফাঁকা হয়ে গেছে। ওই ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
বিষয়টি নজরে এলে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দ্রুত সংস্কারের জন্য গত ২০ মার্চ জেলা প্রশাসনের সভায় আলোচনা করেন নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবা উল আলম ভুইয়া। মূলত ওই ব্রিজের ঝুঁকির বিষয়টি ফেসবুকে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। আর এতেই ঘটে যায় বিপত্তি। গুজবটি এখন ফেসবুকে ভাইরাল।

কিউএনবি/আয়শা/২৫ মার্চ ২০২৪,/দুপুর ১:৩০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit