বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দিরে ছয়দিন ব্যাপি বাৎসরিক মহোৎসব শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে মহাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তিনশ’ বছরের পুরোনো এ মন্দিরে মহোৎসবের শুরু হয়। জীব ও জগতের মঙ্গল কামনায় শুরু হওয়া এ মহাযজ্ঞে হাজার হাজার ভক্ত পুণ্যার্থী অংশ নেয়।
বৈদিক পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে মহোৎসবের উদ্বোধন করেন মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি পলাশ ভট্টাচার্য। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় জীব জগতের কল্যাণ কামনায় সপ্তশতী চন্ডীযজ্ঞ শুরু হয়। চন্ডীযজ্ঞ অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই দেশ বিদেশের ভক্তবৃন্দরা যজ্ঞের আহুতি হিসেবে ঘি, ফুল, ফল, দূর্বা, বেলপাতাসহ বিভিন্ন পূজার উপকরণ দিয়ে অংশগ্রহন করেন।
ছয়দিন ব্যাপী বার্ষিক এ উৎসবে প্রতিদিন শ্রীমৎভগবৎ গীতাপাঠসহ ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আগামী মঙ্গলবার থেকে অষ্টপ্রহর ব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন শুরু হবে। আগামী বৃহস্পতিবার সকালে শেষ হবে ছয়দিন ব্যাপী উৎসব। সপ্তাহ ব্যাপী উৎসবকে কেন্দ্র করে মন্দির এলাকায় বসেছে লোকজ মেলা। সিলেট থেকে মন্দিরে আসা মিতা চক্রবর্তী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুমা বণিক জনান, কালভৈরব বাবার মন্দিরে তারা কয়েক বছর ধরে আসছেন। দেশ ও পরিবারের মঙ্গলের জন্য এখানে এসে তারা প্রার্থণা করেন। দেশ ভালো থাকলে সবাই ভালো থাকবে এই প্রত্যাশা তাদের।
যজ্ঞ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবিগঞ্জ থেকে আসা পুরোহিত মধুসুদন চক্রবর্তী জানান, প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানে সকলের মঙ্গল কামনায় ভক্তরা ভারত-নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসে সমবেত হন। জীব জগতের কল্যান কামনায় এই যজ্ঞের মধ্যদিয়ে মানুষের মনের বাসনা পূর্ণ হয়। এছাড়া এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানে দেশের মানুষের সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থণা করা হয়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে আসা পুরোহিত অনুপম ভট্টাচার্য জানান, রুদ্র চন্ডি মায়ের কাছে প্রার্থণা একটাই, সারাবিশ্বে যেন শান্তি বর্ষিত হয়। সব জায়গায় যেন শান্তি স্বস্তিতে ভরে ওঠে এ জন্যে মহাকাশ, বায়ু ও পঞ্চভূত এর কাছে প্রার্থণা।
শ্রী শ্রী কাল ভৈরব মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি পলাশ ভট্টাচার্য জানান, প্রায় তিনশ’ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ফুলবাড়িয়ার দূর্গাচরণ আচার্য্য নামে এক ব্যক্তি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মেড্ডা এলাকায় তিতাস নদীর তীরে কালভৈরব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে জীব জগতের কল্যাণ কামনায় প্রতিবছর যজ্ঞ হয়। তিনি আরো জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী মন্দিরটিকে ডিনামাইটের আঘাতে ক্ষতিসাধন করেছিলেন। পরে ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর প্রচেষ্টায় ভক্তরা মন্দিরটিকে পুন:প্রতিষ্ঠা করেন। এখনও নিয়মিত এখানে মহোৎসব হয়।