বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ন

পরিবারের অগোচরে ধর্ম পরিবর্তন মেয়ের, লাশ নিতে এসে বিপাকে বাবা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪
  • ১১২ Time View

ডেস্ক নিউজ : বৃষ্টি খাতুন নাকি অভিশ্রুতি শাস্ত্রী— এ দুই নামের জটিলতায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের মর্গে পড়ে আছে মরদেহ। হস্তান্তর নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। পরিবারের অগোচরেই নাকি ধর্ম পরিবর্তন করেন মেয়ে। তাই লাশ নিতে এসে বিপাকে পড়েছেন তার বাবা। শনিবার সকাল পর্যন্ত তার লাশ হস্তান্তর করা হয়নি।
 
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন এক নারী সাংবাদিক। প্রাথমিকভাবে যাকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে শনাক্ত করেন সহকর্মীরা। তিনি কাজ করতেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে।

জানা গেছে, তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বনগ্রামে। তার বাবার নাম শাবলুল আলম সবুজ।

সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের পরিবার, স্বজন ও বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ।

তার বাবা শাবলুল আলম সবুজ ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং তার মা স্ত্রী বিউটি বেগমও ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তবে অভিশ্রুতির বায়োডাটায় দেখা গেছে তিনি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী।

বৃষ্টির মা বিউটি বেগম ও তার খালা সাবানা খাতুন বলেন, বৃষ্টি কবে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে জানি না। সে মুসলিম পরিবারের মেয়ে। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। তার লাশ আমরা গ্রামের বাড়িতে দাফন করব। বৃষ্টি যতই ভুল করুক না কেন, আমাদের সন্তান আমরা দাফন করব।

তামিম নামে বৃষ্টির কাজিন জানায়, বৃষ্টি ধর্মান্তরিত হয়েছিল। তারপর স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সত্যতা মেলে।

৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি। তিনি মুসলিম। বৃষ্টি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করতেন। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি।

নিহত সাংবাদিকের বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দরিদ্র পিতার তিনটিই কন্যা সন্তান। বৃষ্টি খাতুন সবার বড়। মেজো মেয়ে শারমিনা সুলতানা ঝর্ণা রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে বর্ষা পড়ে দশম শ্রেণিতে।

বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে পড়েছেন। উচ্চশিক্ষা শেষ করার আগে বিসিএস কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

নিহতের ছোট বোন শারমিনা সুলতানা ঝর্না বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মায়ের সঙ্গে বৃষ্টির শেষ বার মোবাইল ফোনে কথা হয়। বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও বাড়ি থেকে মা টাকা পাঠাতেন। বড় বোনের মৃত্যুতে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।দুই মাস আগে অভিশ্রুতি সর্বশেষ গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন।

তার বোন হিন্দু ধর্মে গ্রহণ করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নে ঝরনা বলেন, এটা হতেই পারে না। আমার বোন মনে প্রাণে একজন মুসলিম। সে কখনই নিজ ধর্ম ত্যাগ করেনি। তবে সম্প্রতি তার বোন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে ফেসবুক আইডি খুলেছিলেন এবং ওই নামেই সাংবাদিকতা করতেন বলে স্বীকার করেন ঝর্না।

বেতবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ওই বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি করে বৃষ্টি। স্বাধীনচেতা ছিল। ছোট বেলা থেকে সে সরকারি বড় চাকরির স্বপ্ন দেখত।

বৃষ্টির ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি তিনিও অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগে ওর সঙ্গে রাজধানীর ফার্মগেটে দেখা ও কথা হয়। তার দাবি ধর্মান্তরের যে কথাটি বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

জানা গেছে, মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠলেও অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতো চলাফেরা করতেন, নিজেই নিজের নাম বদলে ‘অভিশ্রুতি’ রাখেন। সহকর্মীরাও তাকে অভিশ্রুতি হিসেবেই চিনতেন। হিন্দিতে কথা বলায় পটু ছিলেন তিনি। তার যাতায়াত ছিল রমনা কালী মন্দিরেও। তবে পারিবারিক পরিচয় গোপন করতেন। কর্মক্ষেত্রে জমা দেওয়া বায়োডাটায়ও নিজেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এই তরুণী।

রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা বলছেন, নিয়মিত মন্দিরে এসে হিন্দু ধর্ম চর্চা ও পূজা-অর্চনা করতেন ওই সাংবাদিক তরুণী। 

এসব কারণে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টির লাশ বুঝে পাননি শাবলুল আলম সবুজ শেখ। শুরুতে তাকে একবার প্রতারক সন্দেহ করে আটকও করা হয়েছিল। তবে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ লাশ হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে লাশ কুষ্টিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজের অগ্নিকাণ্ডে মারা যান অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টি। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের হয়ে নির্বাচন কমিশন বিট কভার করতেন। দুর্ঘটনার আগে এক বন্ধুর সঙ্গে গ্রিন কোজি কটেজের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন তিনি।

কিউএনবি/অনিমা/০২ মার্চ ২০২৪/সকাল ১১:২৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit