ডেস্কনিউজঃ সরকারের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আপনারা যেহেতু এতই উন্নয়ন করেছেন, সৎ সাহস থাকলে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। তখন দেখা যাবে, জনগণের কাছে কে জনপ্রিয়? এখন যেভাবে নির্বাচনের সিট ভাগাভাগি চলছে তাকে নির্বাচন বলে না। এটা পৃথিবীর কোথাও নেই। বিশ্বের কোথাও ভোট চুরি করে না। আজ দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র্যালি শুরুর পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
দীর্ঘ ৪৮ দিন পর নয়াপল্টনে বিজয় র্যালিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢল নামে। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের হাজার হাজার নেতাকর্মী বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। বিপুল সংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতাও অংশ নেন র্যালিতে। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের ঢল পূর্বদিকে ফকিরাপুলের মোড় ও পশ্চিমদিকে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে ঠেকে। এদিকে ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর দলীয় কার্যালয়ে দেয়া তালা আজও খোলা হয়নি। কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে মঞ্চ বানিয়ে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বেলা ২টা ২৫ মিনিটে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় র্যালি শুরু হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
মঈন খান আরও বলেন, আমরা ৫২ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ করেছিলাম। সেই বিজয় দিবসকে সরকার পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে। কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আমাদের মূলমন্ত্র ছিল ‘গণতন্ত্র’। সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ বিজয় দিবসকে ‘পরাজয় দিবসে’ পরিণত করেছে।
তিনি আরও বলেন, পকিস্তান সরকার ২২ পরিবার সৃষ্টি করে লুটপাট করেছিল। আমরা চেয়েছিলাম- সেই ২২ পরিবারের পরিবর্তে এমন একটি স্বাধীন দেশ হবে যেখানে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে। কিন্তু আজকে আওয়ামী লীগ ২২ পরিবারের পরিবর্তে ২২০টি পরিবার দিয়ে অলিগার্কি শ্রেণি বানিয়ে দেশের অর্থ লুণ্ঠন করেছে। তিনি বলেন, সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে, প্রতিবাদী মানুষকে জেলে পুরে রেখেছে। এভাবে তারা বিজয় দিবসকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে।
সরকারের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, সরকারের সৎ সাহস থাকলে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। যেমনটি ১৯৯৬ সালে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছুড়ে ফেলে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে না। জনগণের কল্যাণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে। আসুন আমরা সবাই শপথ গ্রহণ করি, চলমান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচন রাতেই হয়ে গেছে। এবারে নির্বাচনকে বলা হচ্ছে ডামি নির্বাচন। এই ডামি নির্বাচন করতে গিয়ে অযথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ নির্বাচনে কারা নির্বাচিত হবেন তা সবাই জানে। এত ভনিতা না করে এদের নাম ঘোষণা করে দিলেই হলো। হাজার কোটি টাকা খরচ করে ইলেকশন ইলেকশন খেলার কোনো প্রয়োজন নেই।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে শোভাযাত্রায় বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, মাহাবুব উদ্দিন খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল তাইফুল ইসলাম টিপু, কাদের গণি চৌধুরী, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, হাসান মামুন, অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, প্রকৌশলী মাহবুব আলমসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষকদল, মৎস্যজীবী দল, শ্রমিক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারও নেতাকর্মী অংশ নেয়। বিএনপির এই র্যালিকে ঘিরে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের পাশে ও মোড়ে মোড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কিউএনবি/বিপুল/১৬.১২.২০২৩/ বিকাল ৫.২০