বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

যেসব কারণে নারীরা রক্তশূন্যতায় বেশি ভোগেন

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ২১৩ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : দেখতে আপাতত সুস্থ মনে হলেও অনেকেই ভুগছেন রক্তশূন্যতায়। এর কারণে নানা ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। রক্তশূন্যতায় বেশি ভোগেন নারীরা। এর কারণে সারাক্ষণই শরীর খুব দুর্বল লাগা, বুক ধড়ফড় করা কিংবা অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় অনেকের। 

রক্তশূন্যতা মানে রক্ত কমে যাওয়া নয়, বরং বয়স ও লিঙ্গভেদে রক্তের লোহিত কণিকাতে উপস্থিত হিমোগ্লোবিন যদি কাঙ্ক্ষিত পরিমাণের চেয়ে কমে যায়, তখন তাকে বলা হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা। কেউ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত মানে তার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পাচ্ছে না। এটি একটি প্রচলিত ও গুরুতর বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বব্যাপী রক্তশূন্যতায় আক্রান্তদের বড় একটি অংশই শিশু ও নারী।

মূলত অল্পবয়সী শিশু, ঋতুস্রাবরত কিশোরী ও নারী, গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পর নারীরা এতে আক্রান্ত হয়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ছয় থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৪০ শতাংশ শিশু, ৩৭ শতাংশ গর্ভবতী নারী ও ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ৩০ শতাংশ রক্তশূন্যতা রোগে আক্রান্ত।

রক্তশূন্যতার কারণ

হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে অস্থিমজ্জার আয়রন বা লৌহ প্রয়োজন হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত আয়রন না পেলে শরীর ঠিকমতো হিমোগ্লোবিন বা রক্তকণিকা তৈরি করতে পারে না। রক্তশূন্যতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে রক্তশূন্যতার অন্যতম প্রধান ও সাধারণ কারণ দেহে আয়রনের অভাব। আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি।

এছাড়া রয়েছে ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা। আয়রন ছাড়াও রক্ত তৈরিতে দেহের ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি-১২ দরকার হয়। খাবারের তালিকায় ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ খাদ্য না থাকলে দেহে ভিটামিন-বি ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি তৈরি হয়। ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তবে অনেকেই ভিটামিন বি-১২ গ্রহণ করতে পারেন না। এটিও ভিটামিনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া লোহিত কণিকা ভেঙে গেলে এমনটি হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেমন–কিডনি কিংবা লিভার বিকল, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, যক্ষ্মাসহ নানা রোগে রক্তশূন্যতা হতে পারে ।

রক্তশূন্যতার লক্ষণ

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্যমতে রক্তশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো- শারীরিক দুর্বলতা, অবসাদ ও ক্লান্তি বোধ, স্বল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, হৃৎপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ বোধ করা ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া। মায়ো ক্লিনিকের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, রক্তশূন্যতা হলে কর্মশক্তি কমে যাওয়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে আসা, শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসা, বুকে ব্যথা, মাথা যন্ত্রণার মতো লক্ষণও দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হার্ট, লাং এ্যান্ড ব্লাড ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকি থাকে। যেমন: ঋতুস্রাব চলাকালীন ও গর্ভাবস্থায়, পর্যাপ্ত আয়রন ও নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অভাবে, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণ ও চিকিৎসা চলাকালীন রক্তশূন্যতা।

পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি রক্তশূন্যতায় ভোগেন, এর প্রধান কারণ নারীদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য। প্রতিমাসেই ঋতুস্রাবের ফলে নারীদের শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে এর মাত্রা অনেক বেশি হয়, আবার কখনো কখনো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লম্বা সময় ধরে চলে। ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। মূলত ঋতুস্রাব, মাতৃদুগ্ধ উৎপাদন প্রক্রিয়া ও গর্ভধারণের কারণে নারীদের মধ্যে রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। দেশে আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা সবচেয়ে বেশি হয়। নারীদের ঋতুস্রাব হয়, বাচ্চা হলে দুগ্ধ প্রদান প্রক্রিয়ায় আয়রনের ক্ষয় হয়, আবার বাচ্চা হওয়ার সময় অনেক রক্তক্ষরণ হয়।

প্রতিরোধে যা করণীয়

রক্তশূন্যতা এড়ানোর জন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। কচু, কচু শাক ও কচুজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এছাড়াও পালংশাক, শিম ও শিমের বিচি, কাঁচাকলা, ফুলকপি, কলিজা, সামুদ্রিক মাছ, দুধ, ডিম, খেজুর, মুরগির কলিজা, গরু-খাসির মাংসও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার। আয়রন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেইড ও ফাইবার সমৃদ্ধ বেদানা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আয়রন শোষণে সাহায্য করে। অন্যদিকে, খাবারে আয়রনের অভাব থাকলে কিংবা বেশি চা-কফি পান করলে আয়রন শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়।

কিউএনবি/অনিমা/১৩ ডিসেম্বর ২০২৩,/রাত ৯:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit