ডেস্কনিউজঃ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরকে বাংলাদেশ বিষয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের পর মন্তব্য করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভোলকার তুর্কের চিঠির জবাবে সরকার সম্প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছে। এর পাশাপাশি সরকার বিএনপির সহিংসতার তথ্য উপাত্তও পাঠিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভোলকার তুর্ক গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠান।
তিনি সেই চিঠিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বন্দি হিসেবে উল্লেখ করে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান। এ ছাড়া তিনি রাজনৈতিক সহিংসতা বিশেষ করে গত ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা ও বলপ্রয়োগের অভিযোগ তুলে উদ্বেগ জানান।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ভোলকার তুর্ককে ফিরতি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাঠামোর সঙ্গে অব্যাহত ও গঠণমূলক সম্পৃক্ততার তথ্য তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছাড়াই তড়িঘড়ি করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। নিরপেক্ষ সূত্র থেকে পাওয়া ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ, তথ্য উপাত্ত বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে দিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো আমলে না নিয়ে এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর তড়িঘড়ি একটি একটি প্রেস নোট দিয়েছে।
চিঠিতে সরকার বলেছে, সংবিধানের বাধ্যবাধকতার আলোকে সরকার বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে সভা, সমাবেশ, মিছিল করতে দিচ্ছে।
কিন্তু সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার রাস্তায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। চিঠিতে সরকার আরো বলেছে, বিএনপির উশৃঙ্খল কর্মীরা তাদের নেতাদের প্ররোচনায় গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ও ২৯ অক্টোবর হরতাল ডেকে অরাজনৈতিক পুলিশ সদস্য, সিসিটিভি ক্যামেরা, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, নিরাপরাধ নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অ্যাম্বুল্যান্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও সরকারি সম্পদের ওপর হামলা চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শতাধিক পুলিশ সদস্য বিএনপির হামলায় আহত হয়েছে।
চিঠিতে সরকার লিখেছে, ওই নৈরাজ্যের সময় একজন বাস কন্ডাক্টরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্য বিচারকদের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। এরপর দেশজুড়ে বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আতঙ্ক সৃষ্টির কর্মসূচিতে আরো কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে।
সরকারের চিঠিতে বলা হয়েছে, দায়িত্বরত গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর বিএনপির হামলা দূর্ভাগ্যজনক। তাদের টিভি ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্তত ২৫ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছে। তাদের কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (বিএফইউজে) বিএনপি কর্মীদের ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
চিঠিতে সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারকে বলেছে, ‘জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে বিএনপির হামলার বিষয়ে আপনার দপ্তরের নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত।’
সরকারের চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএনপির সহিংসতা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংযম দেখিয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত এই সরকারের আইনের শাসন ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে সরকার বলেছে, খালেদা জিয়া বন্দি নন। দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হওয়ার পর মানবিক বিবেচনায় তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। দেশে সর্বোচ্চ মানের হাসপাতালে তাঁর চিকিত্সা চলছে। তাঁর চিকিত্সার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিত্সক আনারও অনুমতি দিয়েছে সরকার।
কিউএনবি/বিপুল/১৪.১১.২০২৩/ সন্ধ্যা ৭.৫০