ডেস্ক নিউজ : সোনা-রুপার আংটি দিয়ে মোড়ানো লাল কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়েছে গরুর গলায়। সেই গরুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এলাকায়। যিনি প্রথমে ধরবেন গরুটি তার হবে। এ ছাড়া তিন দিনব্যাপী চলছে মাদারের (আঞ্চলিক ভাষা) গান। চলছে খাওয়া-দাওয়া। এর পর পালকীতে চড়ে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যান বর। পাড়া-প্রতিবেশীরাও হই-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে।
সরেজমিন গিয়ে সাইফুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইফুল ইসলামের বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। মা খোদেজা বেওয়া গৃহিণী। খোদেজা বেওয়া বিয়ের পর একে একে জন্ম দেন ৮ সন্তান। কিন্তু অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সব সন্তানই মারা যায়। একটা সন্তানের আশায় পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন খোদেজা বেওয়া। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন পরিবারের সবাই। এর পর খোদেজা বেওয়ার শাশুড়ি ময়না খাতুন পার্শ্ববর্তী গুরুদাসপুর উপজেলায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে জানতে পারেন সেখানকার ‘শীতলী চরলালি মসজিদে ভেজা কাপড়ে গিয়ে আল্লাহর কাছে মানত করলে মনোবাসনা পূরণ হয়’।
লোকমুখে শুনে ময়না খাতুন ওই মসজিদে গিয়ে ভেজা কাপড়ে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে বলেন, ‘যদি ছেলে বউয়ের কোনো সন্তান হয় এবং বেঁচে থাকে, তবে সেই সন্তানের বিয়ের সময় সোনা-রুপার আংটি দিয়ে মোড়ানো লাল কাপড় গরুর গলায় বেঁধে গ্রামবাসীর উদ্দেশে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে হবে মাদারের গান এবং পালকীতে চড়িয়ে পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে বিয়ে করানো হবে সেই সন্তানকে।
এর কিছু দিনের মধ্যেই সাইফুল ইসলামের জন্ম হয়। শুধু সাইফুলই নয়, তার মা খোদেজা বেওয়ার কোল আলো করে পর পর জন্ম নেয় মেয়েসহ আরও তিন সন্তান। পরিবারে বইতে থাকে খুশির বন্যা। এর মধ্যে কেটে গেছে ৩২ বছর। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন সাইফুলের দাদি ময়না খাতুন ও বাবা খাদেমুল ইসলাম। অবশেষে দাদির সেই ‘মানত’ রাখতেই নানা আয়োজনের মধ্য বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সাইফুল ইসলাম। কনে একই উপজেলার বরদানগর মরশিন্দা গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে মায়া খাতুন।
ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু যুগান্তরকে বলেন, বিয়ে মানেই উৎসব। তবে ব্যতিক্রমী এই বিয়েটা একেবারেই অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। গ্রামবাসী উপভোগ করেছেন সাইফুল ইসলামের বিয়ে।
কিউএনবি/আয়শা/২১ অক্টোবর ২০২৩,/বিকাল ৩:৫৮