আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কিন্তু দলের ভিতরে প্রভাব ও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় দফার বিতর্কে সাতজন প্রার্থী অংশ নিলেও কেউই ভোটারদের মধ্যে বড়ো ধরনের কোনো নাড়া দিতে পারেননি। যে কারণে প্রার্থী হিসেবে এখনো এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বিতর্কে ট্রাম্পের অনুপস্থিতির সমালোচনা করেন দুজন প্রার্থী। ফ্লোরিডার গভর্নর রনডিস্যান্টিস তাকে নিয়ে মশকরাও করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প তার নিজের কাজে অনুপস্থিত। বিতর্কে তার অংশ নেয়া উচিত ছিল। এতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, সেসবেরও জবাব দিতে পারতেন।
আর ট্রাম্প ভোটারদের মুখোমুখি হতে ভয় পান বলে অভিযোগ করেন আরেক প্রার্থী ক্রিস ক্রিস্টি। তিনি বলেন, ট্রাম্প কেবল দেশকেই বিভক্তির দিকে ঠেলে দেননি, তিনি সারা দেশের পরিবার ও বন্ধুত্বগুলোও নষ্ট করে দিয়েছেন।
মনোয়নপ্রার্থী বিবেক রামাস্বামী বলেন, ট্রাম্প একজন চমৎকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কিন্তু ‘আমেরিকাই ফার্স্ট’ এজেন্ডা কেবল এক ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। ট্রাম্পের ভালো কাজগুলোর জন্য তার প্রতি আমার সম্মান রয়েছে।
এ সময় বিভক্তির বদলে দেশকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথাই বলেন বিবেক রামাস্বামী। রিপাবলিকান পার্টির এ পর্যন্ত হওয়া দুটি বিতর্কেই অনুপস্থিত ছিলেন ট্রাম্প। বিতর্কে অংশ না নিয়ে তিনি মিশিগানে জনসমাবেশে বক্তৃতা করেন।
জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ট্রাম্প
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ট্রাম্পের আশপাশেও কেউ নেই।
বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও তার নিজস্ব সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে লিঙ্গ, সীমান্ত নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে যেসব কথা বলছেন, তা নিয়ে উদ্বেগের নানা কারণ আছে। অর্থাৎ তিনি তার বক্তব্যে কেবল বিভাজনের কথাই বলে যাচ্ছেন। দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এসব কিছুতে তার ভোটব্যাংকে খুব একটা ভাটা পড়ছে না।
এর আগেও সামাজিকমাধ্যমে তার ‘বিষাক্ত বার্তার’ কারণে ফেসবুক ও টুইটারে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। ওয়াশিংটন ডিসিসহ সারা দেশে রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা ট্রাম্পের সঙ্গে আছেন। কারণ, তারা যদি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরাসরি বিরোধিতা করেন, তাহলে দলে তাদের নিজেদের অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এই শঙ্কা থেকে তারা ট্রাম্প থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন না। দলে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এতোই বেশি যে, সরাসরি তার কড়া সমালোচনা করে ভোটারদের বিরক্ত করতেও ভয় পাচ্ছেন কোনো কোনো প্রার্থী। যদিও দলে তার আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব আছে। কিন্তু তারা যদি ট্রাম্প-পরবর্তী ভবিষ্যতের কথা ভাবেন কিংবা এমন কিছু করতে চান, তাহলে তাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। ট্রাম্পবিরোধীদের এমন কিছু করতে হবে, যাতে ট্রাম্পের প্রভাব ক্ষুণ্ণ হয়ে যায়।
এখন পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হচ্ছেন, সাবেক মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস, সিনেটর টিম স্কট, সাউথ ক্যারোলাইনার সাবেক গভর্নর নিক্কি হ্যালি, আরকানসাসের সাবেক গভর্নর আশা হাচিনসন, নর্থ ডেকোটার গভর্নর ডৌগ বার্গাম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত বায়োটেক উদ্যোক্তা বিবেক রামাস্বামীসহ বেশ কয়েকজন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মাইক পেন্সের অভিযোগ, সাবেক প্রেসিডেন্ট দেশের সংবিধানের প্রতি আস্থা রাখেন না এবং রক্ষণশীল মূল্যবোধ থেকেও তিনি সরে গেছেন। ট্রাম্পেরই ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন মাইক পেন্স। কিন্তু ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গার পর তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায় এবং পরস্পরকে কঠোর সমালোচনা করেন।
কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও টিকে আছেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট আদালতে ফৌজদারি অভিযোগের মোকাবিলা করছেন। রিপাবলিকানদের কেউ কেউ মনে করছেন, ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার অর্থ হচ্ছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথে তাকে এগিয়ে রাখা। তার বিরুদ্ধে যত বেশি অভিযোগ আসছে, তার জনপ্রিয়তার ভিত্তিও তত মজবুত হচ্ছে।
সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, ট্রাম্পকে শেষ করে দিতে অনন্ত চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব তার জন্য সহায়ক হবে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ও পরে বহু কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হয়েছেন ট্রাম্প। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গারও মুখ্য চরিত্র তিনি। কিন্তু এতে তার জনপ্রিয়তায় খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি।
দ্য টাইমসে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডেভিড লৌটার লিখেছেন, ১৯৮০ সাল থেকে মানুষের চোখে চোখে আছেন ট্রাম্প। কাজেই তার ব্যাপারে সবার একটি নির্দিষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে আছে।
ট্রাম্পের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভোটার রয়েছে। কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে হোয়াইট হাউস ধরে রাখতে তা যথেষ্ট ছিল না। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের খবরে বলা হয়, ২০২৪ সালের নির্বাচনে হোয়াইট হাউসে যেতে হলে ট্রাম্পকে তার জনসমর্থন বাড়াতে হবে। কিন্তু তিনি সেটা কতটা পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন ট্রাম্পের না থাকলেও বেশিরভাগ রিপাবলিকানই তার সমালোচনা করতে ভয় করেন। সম্প্রতি হুঁশিয়ারি করে ট্রাম্প বলেন, তাকে অভিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে দেশে মৃত্যু ও ধ্বংস নিয়ে আসা হবে। ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে হামলার সময়ও তিনি একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছিলেন।
সংবিধান অনুসারে ফের প্রার্থী কিংবা প্রেসিডেন্ট হতে কোনো বাধা নেই ট্রাম্পের। এমনকি কারাগারে গেলেও তিনি প্রার্থী হতে পারবেন। কাজেই রিপাবলিকান দলে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা ট্রাম্প আগামী নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখোমুখি হতে পারেন।
বাইডেন এখন অশীতিপর। তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের সামনে সুযোগ খোলা রয়েছে। তবে তার আগে নিজ দলের বাধা কাটিয়ে উঠতে হবে তাকে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডিস্যান্টিস খোঁচা দিয়ে বলেন, একজন পর্ন তারকাকে চুপ করিয়ে দিতে টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না।
পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে দেয়ার জন্য আইনজীবীকে টাকা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে ২০১৬ সালে যে অর্থ দিয়েছিলেন, তার পরিমাণ এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলারের মধ্যে।
কিউএনবি/আয়শা/২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ৮:১৮