রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি : রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ধর্ষণ মামলার এক আসামি। এ নিয়ে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের অন্যান্য পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ সভাপতি পদপ্রত্যাশী নেতার নাম সোহানুর রহমান সোহাগ। তার বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়।
সোহানুর রহমান সোহাগ রাজশাহী বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। গত বছর তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন তার প্রতিবেশী এক গৃহবধূ (২২)। মামলাটি এখনও চলমান আছে বলে জানান যায়, তবে মামলাটি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নেতা সোহানুর রহমান সোহাগ।
ওই গৃহবধূ তার অভিযোগে বলেন, গত-২৪/০৯/২০২২ইং তারিখে তার বাড়িতে এসে তাকে ধর্ষণ করে বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহানুর রহমান সোহাগ। বিষয়টি জানাজানি হলে ২ অক্টোবর কীটনাশক পান করে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালান বলে জানান গৃহবধূ। এরপর তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হলে ৪ অক্টোবর ঐ গৃহবধূ তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বাঘা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করতে যান। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়। এ কারণে রাজশাহীর আদালতে গিয়ে তিনি মামলা করেন।
মামলার বাদীপক্ষ সাথে কথা বলে জানান যায় যে আদালতে মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এই মামলা টির তদন্ত গুরুত্বের সাথে করেনি। তারপরে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিম্ন আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন বলেও জানান তিনি । অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে। সম্প্রতি উভয়পক্ষের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত মামলাটি চালু রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান বাদীপক্ষ
ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘প্রথমবার আমাকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ করে রেখেছিল বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহানুর রহমান সোহাগ। এটি দেখিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেল করছিল। ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে আরও বেশ কয়েক বার ধর্ষণ করে সে আমাকে। ধর্ষণের শিকার ঐ গৃহবধূ আরও বলেন, আসামি প্রভাবশালী বলে বাঘা থানা পুলিশ আমার মামলা নেয়নি। আদালতে মামলা করলেও পরে এমনভাবে প্রতিবেদন দেওয়া হয় যেন আসামি পার পেয়ে যায়। এখন আসামি চোখের সামনেই ঘোরাফেরা করছে, এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে।
বাদীপক্ষের উচ্চ আদালতের আইনজীবী মার্জিনা রায়হান মদীনা বলেন, মামলাটা নিম্ন আদালতে খারিজ করা হয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। কয়েকদিন দুইপক্ষের আইনজীবীকে নিয়ে উচ্চ আদালতে শুনানি হয়েছে। এতে মামলাটা চালু রাখার আমাদের যে আবেদন তা মঞ্জুর হয়েছে। উচ্চ আদালত বলেছেন, যে তদন্ত প্রতিবেদন নিম্ন আদালতে এসেছিল, তা দিয়েই মামলাটা চালু রাখা যেত। এখন মামলাটা চলমান আছে।
গৃহবধূর দায়ের কৃত ধর্ষণ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহানুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘ আমি বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি, আমার বিরুদ্ধে যে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে তা সম্পন্ন মিথ্যা তবে মামলাটা মিথ্যা ও বানোয়াট উদ্দেশ্য প্রনীত’ আমি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হয়েছি। এখন কমিটি ঘোষণার আগে এসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সভাপতি করা হয়েছিল সাকিবুল ইসলাম রানাকে। তার বাড়িও ছিল বাঘা উপজেলায়। তিনি সভাপতি থাকাকালীন সময়ে তার একটি ফোনকল রেকর্ড ফাঁস হয়েছিল। সেই ফাস হওয়া কল রেকর্ডে তিনি নিজেকে ‘চিটারের সর্দার’ দাবি করে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে দলের এক নারী কর্মীকে অশালীন প্রস্তাব দিতেও শোনা যায়।
একই সময় ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমিরও একটি ভিডিও ফাঁস হয়। এতে তাকে ফেনসিডিল সেবন করতে দেখা যায়। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাকিবুল ইসলাম রানাকে বহিষ্কার করে এবং জাকির হোসেন অমিকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়।
সেই সাথে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে জেলা ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই। বুধবার কর্মীসভার মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার কথা ছিল। তবে শেষ মূহুর্তে এই কর্মীসভা স্থগিত করা হয়েছে। ঢাকা থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। এর আগে সম্মেলনের জন্য জীবন বৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দুই শতাধিক জীবন বৃত্তান্ত জমা পড়েছে। এদের মধ্যে ডজনখানেক নেতা শীর্ষ পদ পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ করছেন। তাদের মধ্যে বাঘা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ধর্ষণ মামলার আসামি সোহানুর রহমান সোহাগ নামও আছে বলে জানান যায়।
কিউএনবি/আয়শা/২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৪:৪৩