আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালদ্বীপ আসলে কার? চীনের নাকি ভারতের? ১৯৬৫ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তির পরও নতুন এই গোলক ধাঁধাতেই আটকে আছে পুরো দ্বীপাঞ্চল। বড় বিনিয়োগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের ছোট ছোট কূটনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোও নির্ভর করে দুই আঞ্চলিক শক্তি ভারত-চীনের মর্জির ওপর। মালদ্বীপে বছরজুড়েই চীন-ভারতের হস্তক্ষেপ। কখনও প্রত্যক্ষ, কখন পরোক্ষ, সত্যিটা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। আর নির্বাচন আসলেই বেঁধে যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড। শুরু হয় চীন-ভারতের নিয়ন্ত্রণ নবায়নের দৌড়ঝাঁপ। মাঝে পড়ে হাঁপিয়ে ওঠে জনগণ। নিজ ঘরেই হয়ে যায় ‘তৃতীয় পক্ষ’। স্বাধীনতা লাভের পর শনিবার পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও সেই ‘ঘোড়দৌড়ই দেখছে মালদ্বীপ।
নির্বাচনে ৪৬ শতাংস ভোটে এগিয়ে আছেন পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের প্রধান চীনপন্থি নেতা মোহাম্মদ মুইজু (৪৫)। জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকলেও দেশটির ভারতপন্থি প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ (৬১) পেয়েছেন মাত্র ৩৯ শতাংশ ভোট। প্রেসিডেন্ট পদের শীর্ষ দুই প্রার্থীর কেউই প্রথম রাউন্ডে ৫০ শতাংশ ভোট অতিক্রম করতে পারেননি। যার ফলে পুনরায় ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। রোববার দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দ্বিতীয় রাউন্ডে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এপি, সিএনএন।
ভারত নাকি চীন, প্রকৃতপক্ষে কোন আঞ্চলিক শক্তি এ অঞ্চলটিতে প্রভাব বিস্তার করবে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটের পর তা বোঝা যাবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে আছে চীন। পিছিয়ে ভারত।
কারণ বর্তমান প্রেসিডেন্ট সোলিহ মূলত ভারতপন্থি। মালদ্বীপে ভারতের অনিয়ন্ত্রিত সেনা উপস্থিতির অনুমতি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে সোলিহের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কট্টর চীনপন্থি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মুইজ। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের আবদুল্লাহ ইয়ামিন মালদ্বীপকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি অংশ করেছিলেন।
নির্বাচনি ফলাফলে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মুইজ। ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রভাষক আজিম জাহির বলেন, আমি আশা করিনি যে মুইজ ইবুর (ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ) বিরুদ্ধে এই ধরনের নেতৃত্ব দেবেন। এটি সোলিহের জন্য একটি বড় আঘাত। নির্বাচনের এই ফলাফলকে কেউ কেউ তার সরকারের প্রত্যাখান হিসাবেও দেখতে পারেন। মালদ্বীপে ভারতীয় সেনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে মুইজের দৃঢ় অবস্থান নির্বাচনের এমন ফলাফলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
নির্বাচনি ইশতেহারে মুইজ বলেছিলেন, জয়ী হলে মালদ্বীপে অবস্থানরত ভারতীয় সৈন্যদের সরিয়ে দেবেন। তবে বাণিজ্য সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখবেন। মালদ্বীপের নিকটতম প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
মুইজের দলের একজন জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে মুইজের দলের ছিল কঠোর অবস্থান। ভারতীয় সৈন্যের সংখ্যা ও তাদের কার্যকলাপ মালদ্বীপবাসীর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে সোলিহ সরকারের প্রতি অভিযোগ জানান তিনি।
ভারত মহাসাগরে প্রায় ১২০০ প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত ছোট দেশ মালদ্বীপ। আকারে ছোট হলেও দেশটিতে প্রভাব বিস্তারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন। আর তার প্রধান কারণ মালদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান। পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে প্রধান শিপিং রুটে এই দেশের অবস্থান। চীনের সঙ্গে ইউরোপ ও আফ্রিকার জাহাজ যোগাযোগের প্রাচীন সমুদ্রপথের অবস্থান মালদ্বীপের পাশে। এছাড়া এই পথ দিয়ে আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৬২ শতাংশের পরিবহণ করে চীন। অন্যদিকে মালদ্বীপের পাশ দিয়েই পরিবহণ করা হয় সাগরপথে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের অর্ধেক ও জ্বালানি আমদানির প্রায় ৮০ শতাংশ।
কিউএনবি/অনিমা/১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ১০:১১