এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। উপজেলাবাসী এডিস মশার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন অন্তত চার জন। আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত অর্ধশত শিশু, নারী ও পুরুষ। চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬ জন। এর পরেও মশক নিধন কর্মসূচি কচ্ছপ গতি।
বুধবার (২ আগস্ট) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু বরণ করেছেন ৪ জন। এরা হলেন সদর ইউনিয়নের কয়ারপাড়া গ্রামের সম্ভু কামারের মেয়ে সাবিত্রী (১৮), পৌরসভার তার্নিবাস গ্রামের নাজমুল হোসেনের মেয়ে ও চৌগাছা সরকারি পাইলটমডেলস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী তানজিলা খাতুন (১৩), শহরের মৃধা পাড়ার ইনসান মৃধার মেয়ে জলি খাতুন (৩৫) ও পাতিবিলা গ্রামের রাশেদুল ইসলামের স্ত্রী সুমিতা খাতুন (৩০)।
চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স সবিতা জানান, আক্রান্ত হয়ে ৬ জন উপজেলা সরকারি মডেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন এরা হলেন উপজেলার দিঘলসিংহা গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা বেগম (৪০), একই গ্রামেরজহির উদ্দীনের ছেলে জুবাইর হোসেন (১৭), রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আবুসিদ্দীকের ছেলে আবির হোসেন (১৬),বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের সমসের আলীর স্ত্রী হামিদা বেগম (৩৫) ও কুলিয়া গ্রামের ইকবালের ছেলে আল জুবায়ের(১১)। এদিকে অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ যশোর শহরের বিভিন্ন হাসাপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চৌগাছা সরকারি কলেজের প্রভাষক জাফর ইকবাল লিটন বলেন, পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। গত কয়েকদিনে উপজেলায় বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু রোগি সনাক্ত হয়েছে। স্থানীয় হাসপাতাল ছাড়াও তারা অনেকে যশোর শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা সাধারণ মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী। এরপরেও চৌগাছা পৌরসভায় মশা নিধন কর্মসূচি চোখে পড়ছেনা। তাছাড়া পৌরসভার ড্রেন বিভিন্ন স্থানে নতুন করে নির্মান ও সংস্কার কাজের জন্য পানি প্রবাহে বাঁধগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে ড্রেনে জমে থাকা ময়লা পানিতে মশার বংশ বিস্তার ঘটছে।
চৌগাছা সরকারি মডেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আল ইমরান বলেন, অন্যান্য মশার সাথে এডিস মশাও বেড়েছে । এডিস মশা সাধারণত লোকজনকে দিনের আলোতে কামড়ায় । এই মশা কামড়নোর কয়েকদিন পরে প্রকাশ পায় ডেঙ্গু । তিনি বলেন, চৌগাছা হাসপাতালে ৬ জনরোগী ভর্তি রয়েছেন। অনেক রোগী সুস্থ্য হয়ে বাড়ীতে চলে গেছে আবার অনেক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্যযশোরে রেফার করা হয়েছে।
পৌরসভার বেশকয়েকজন নাগরিক জানিয়েছেন এবছরে পৌর এলাকার সকল ওয়ার্ডে এখনো একদিনও মশক নিধন স্প্রে করা হয়নি। এবছর সারা দেশের মত চৌগাছা উপজেলায়ও ডেঙ্গু রোগি বেড়েই চলেছে। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষের তেমন কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছেনা। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে তারপরেও পৌরসভার মশক নিধন কর্মসূচি চলছে কচ্ছপ গতিতে। ডেঙ্গু রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে দাবি করে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন রাজনৈতিক-পেশাজীবিসহ বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। তাদের দাবী সামিজিক স্বচেতনা বৃদ্ধিসহ পৌর কর্তৃপক্ষ মশক নিধনে বিশেষ নজর দেওয়া আশু প্রয়োজন।
চৌগাছা পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী আবুল কাশেম বলেন, মশক নিধন ঔষধে ভালো কাজ হচ্ছেনা। পৌরসভার যে সকল এলাকায় মশার প্রজননস্থল রয়েছে সে সকল এলাকায় হ্যান্ড স্প্রে মেশিন দিয়ে ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। মশক নিধনে আমারা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি বলে তিনি দাবি করেন ।
কিউএনবি/আয়শা/০২ অগাস্ট ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:৫৫