এম.এ.রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় কাঁচা মরিচের কেজি ২৫০ টাকা ও কমেনি পেঁয়াজ ও রসুনের ঝাঁজ। নিন্ম-আয়ের মানুষ সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। বিক্রেতাদের দাবি অতিখরা ও প্রচন্ড তাপদাহে মরিচের আবাদ ও ফলন কম হয়েছে। তাই বাজারে মরিচ আমদানি কম থাকায় দাম বেশী। রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। এদিকে ভারত থেকে আমদানির পরও দেশি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে শনিবার (২৪ জুন) চৌগাছা বড় কাঁচা বাজারে গেলে এমন চিত্র চোখে পড়ে। এ সময় কথা হয় তরকারি ব্যবসায়ী আবু তারেকের সাথে তিনি বলেন, মজুতদারদের কারসাজিতে দেশি পেঁয়াজেরদাম কমছে না। রসুন ও গোলআলুতেও তাদের নজর পড়েছে। মুদী ব্যবসায়ী সুশিল সরকার বলেন, সরকার ১২ দিন আগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারে ১০ টাকা কমালেও বাজারে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। আমাদের মোকাম থেকে আগের দামেই কিনতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে আগের বর্ধিত মূল্যেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
চৌগাছা বাজারে বাজার করতে আসা আনিছুর রহমান বলেন, পণ্যের দাম বাড়ার ঘোষণা দিলে তাৎক্ষণিক ভাবেবিক্রেতারা দাম কার্যকর করেন, অথচ দাম কমালে সেটা মানতে চাই না। তিনি বলেন আজ কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি ২৫০শ টাকা দরে কিনেছি। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজি, আর আমদানি করা ভারতীয়পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
বাজার করতে আসা ক্রেতা আর এক ক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, আমদানি করার পরও আমাদের বেশি দামে দেশি পেয়াঁজ কিনতে হচ্ছে। অথচ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দেশি পেঁয়াজের অবৈধ মজুত করে রেখেছেন। তাছাড়া সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমালেও বিক্রেতারা সেই আগের দামেই বিক্রি করছেন। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
চৌগাছা বাজারের কাঁচামাল আড়ৎ ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে এ এলাকার চাষীরা ভালো দামের আশায় বেশী বেশী মরিচের আবাদ করেন। কিন্তু প্রচন্ড তাপদাহে ও গরমে কৃষকের বিধিবাম হয়ে গেছে। তাদের ক্ষেতের মরিচ গাছ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া মাগুরা, ঝিনাইদহ ও ফরিদপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যে কাঁচা মরিচ আসতো তা বন্ধ হয়ে গেছে। এ এলাকার মরিচ কিনে বর্তমানে বেশি দামে বিক্রির আশায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরে নিয়ে যাচ্ছেন মধুখালী, শৈলকুপা ও ফরিদপুরের কাঁচা মরিচ পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বাজারে টান থাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে মরিচের।
চৌগাছা বাজারের বিশিষ্ট আড়ৎ ব্যবসায়ী রাসেল মল্লিক জানান, আমাদের আঞ্চলিক দেশি পেঁয়াজের মজুদ নেই তেমন। বড় ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই তা মজুত করে রেখেছেন বেশী দামে বিক্রির আশায়। দাম বেশী হওয়ায় বাজারে চাহিদা রেখে তারা অল্প-অল্প করে বাজারে ছাড়ছেন। এসব মজুদদারের কারণে সরকারি ভাবে পিঁয়াজ আমদানির পরও বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কমছে না।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশেও দাম কমিয়েছে। গত ১১ জুন বাণিজ্যসচিব তপন কুমার ঘোষ সবিালয়ে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটারে ১০ টাকা কমার ঘোষণা দেন। সেই মোতাবেক প্রতি লিটার বোতল ১৮৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ সরকার ১২ দিন আগে দাম কমালেও গতকাল শনিবারও বাজারে আগের বর্ধিত দামে ১৯৯ টাকায় সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হয়েছে।
সরকারের বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারাদের বাজার তদারকিও তৎপরতা নেই। তাই এসব মজুতদার ও অসাধু বিক্রেতারা ভোক্তাদের জিম্মি করে দাম হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন এমন অভিযোগ ভোক্তাদের।
কিউএনবি/আয়শা/২৪ জুন ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:৫৪