এম.এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ধান ক্ষেতের মাঠে ফুটবল খেলার উৎসব চলছে। ক্ষেতের বোরো ধান বেশ কিছুদিন আগেই কৃষক ঘরে তুলেছেন। এখন অপেক্ষা আমন রোপনের। কৃষক বর্ষার পানির জন্য চেয়ে আছেন অধীর অপেক্ষায়। কিন্তু ভারি বর্ষণ না হওয়ায় অপেক্ষার সময়টুকু উপজেলার বোরো ফসলের জমি এখন গ্রামের কিশোর-যুবকদের ফুটবল খেলার মাঠ। এই সময়ে গ্রামীণ ছেলেরা কখনও এপাড়া বনাম ওপাড়া, আবার কখনও গ্রাম বনাম গ্রামে ভাগ হয়ে ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেছে সেই ধান ক্ষেতের মাঠে। খেলার এই দল কখনও ভাগ হয় বিবাহিত-অবিবাহিত আবার ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা নামে।
এই খেলায় বিজয়ী দলের জন্য থাকে দুই পক্ষের খেলোয়াড়দের চাঁদার টাকায় কেনা জোড়া রাজহাঁস, মুরগি কিংবা ছাগল।
আর খেলা শেষে বাদ্য বাজিয়ে বিজয়ী দলের সদস্যদের মধ্যে চলে নাচ গান আর আনন্দ। সেই হাঁস, মুরগি বা ছাগল রান্না করে খাওয়ায় যোগ দেয় গ্রামের শিশু-কিশোর ও যুবকরা। এ খাওয়া দাওয়া চলে অনেক রাত পর্যন্ত। মঙ্গলবার ২০ জুন বিকেলে এমন একটি চিত্র দেখা গেল যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের দক্ষিণ মাঠে। বিকেলে কুলিয়া গ্রামের মাঠে পাশ্ববর্তী ঝিনাইদাহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রাম ও চৌগাছার কুলিয়া গ্রামের যুবক ও কিশোররা মেতে উঠেছে ধানের ক্ষেতে ফুটবল প্রতিযোগীতায়। মাঠের সীমানারবাইরে থেকে তাদের উৎসাহ দিচ্ছিল শত-শত দর্শক সারিতে দাড়িয়ে গ্রামবাসী। খেলা চলাকালীন সময়ে ধারা বর্ণনাওচলছিল বেশ সুন্দর ভঙ্গীতে।
যারা খেলোয়াড় ছিলেন, তারা সবাই বিভিন্ন পেশায় জড়িত। জীবিকার প্রয়োজনে কোনো না কোনো পেশায় কাজ করেন তারা। কেউ কৃষি শ্রমিক, কেউ ছোট কোনো ব্যবসায় জড়িত বা দোকানের কর্মচারী। তাদের মধ্যে ভান চলাক বা প্রবাসীও ছিলেন। এ সময় খেলাদেখতে আসা দর্শক কুলিয়া গ্রামের পঞ্চাশউর্ধ্ব আলতাফ হোসেন আলতা বলেন, বর্তমানে ছেলেরা মাঠে ফুটবল নিয়ে খেলতে পছন্দ করেনা। তারা ঘরে বসে স্মার্ট ফোনে সময় কাটাতে স্বাছন্দবোধ করে। গ্রামের কিছু যুবক যারা স্কুল কলেজে লেখা পড়া করেনা তারা এই আয়োজন করেছে।
বৈশাখজুড়ে অধিকাংশ পরিবার ধান তোলা নিয়ে মহাব্যস্ত ছিল। ঘরে ধান উঠানোর সময় খেলাধুলা করার এক মুহুর্তের সময়ও থাকে না। ইরি ধান কাটে ঘরে তোলার পর সবাই অবসর হয়ে যায়। তখন আর বেশি কাজ থাকে না। এই সময়ে বর্ষার পানির জন্যসবাই অপেক্ষায় থাকে। এর মধ্যে তিন বা চার সপ্তাহ ইরি ধানের ক্ষেতের মাঠে ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় গ্রামের শিশু-কিশোররা। বোরো ক্ষেত থেকে ফসল উঠানোর পর এইভাবে ফুটবল খেলা গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ বলে মন্তব্য করেন কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম।
কুলিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য লাল্টু হোসেন বলেন, আমরাও যখন ছোট ছিলাম, ২০-৩০ বছর আগে, তখন ফুটবল নিয়ে এভাবেই ধান ক্ষেতের মাঠে খেলতাম। তিনি বলেন,কয়েক সপ্তাহ ফুটবল খেলা শেষে যখন বর্ষার পানিতে পুরো মাঠ থৈ থৈ করবে তখন আবার জাল নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়তাম। বর্তমানে সবই রুপ কথার কাহিনীর মতো। এখন শিশু-কিশোরা মোবাইলেরপ্রতিবেশী ঝুকে পড়েছে। তবে এ ধরনের খেলা কোন-কোন এলাকায় এখনো চোখে পড়ে।
কিউএনবি/আয়শা/২০ জুন ২০২৩,/রাত ৮:২৫