আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঐতিহাসিক জয়ের পর শনিবার তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। এর মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশটির শাসনভার সামলাতে যাচ্ছেন ৬৯ বছর বয়সী এই নেতা। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও স্থানীয় মুদ্রা লিরার দরপতনের কারণে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন এরদোয়ান। একই সঙ্গে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির আকাঙ্ক্ষা এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার কারণে তিনি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন বলে মত বিশ্লেষকদের। এসব সংকট থেকে উত্তরণে শপথ নেওয়ার পরই নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন এরদোয়ান।
তুরস্কের রাজধানী আংকারার পার্লামেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন এরদোয়ান। এ সময় তিনি বলেন, ‘মহান তুরস্ক জাতির সামনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি আমার সম্মান ও সততার শপথ করছি—আমি আমার সব ক্ষমতা ব্যবহার করে তুরস্ক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং নিরপেক্ষভাবে আমার দায়িত্ব পালন করব।’ শপথ অনুষ্ঠানে আইনের শাসন এবং কামাল আতাতুর্কের শত বছর আগের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি থেকে বিচ্যুত না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এরদোয়ান।
এরপর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিশ্বের অন্তত ৭৮ জন নেতার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তাদের মধ্যে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবের, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, রুশ আইনসভার নিম্নকক্ষের স্পিকার ভিয়াচেস্লাভ ভোলোদিন অন্যতম।
অর্থনৈতিক সংকট, ভয়াবহ প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ও বিরোধীদের একতা সত্ত্বেও গত ২৮ মে রানঅফ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগলুকে হারিয়ে জয় পান এরদোয়ান। গবেষণা সংস্থা বিসিএ রিসার্চের প্রধান ভূ-রাজনৈতিক কৌশলবিদ ম্যাট গার্টকেন বলেন, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, এই নির্বাচনের ফলে তুরস্কের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অর্জনের সাম্প্রতিক আকাঙ্ক্ষা আরো দৃঢ় হবে। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো পূর্বাঞ্চলীয় ও স্বৈরাচারী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নেওয়া এবং পশ্চিমা গণতন্ত্রপন্থী দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ফাটল রোধ করা।
অর্থনৈতিক সংকট
তুরস্কে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৪৩.৭ শতাংশ। সুদহার কমিয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সংক্রান্ত এরদোয়ানের অপ্রথাগত নীতিই এর জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মত বিশ্লেষকদের। তাই এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবেলাই হবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোয়ানের প্রধান অগ্রাধিকার। এরদোয়ানের অপ্রথাগত নীতির বিরোধিতা করে এসেছেন অর্থনীতিবিদ সিমসেক।
তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী এবং এর পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। লিরার ব্যাপক দরপতনের কারণে ওই বছরই পদত্যাগ করেন তিনি। ইস্তাম্বুলের কাদিও হাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আল্প ইরিঞ্চ ইয়েলদান বলেন, ‘মনে হচ্ছে এরদোয়ানের সরকার একটি প্রচলিত অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে।’
ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি
আগামী জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আংকারার সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছেন জোটের অন্য নেতারা। নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে সুইডেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তিতে সম্মতি দিচ্ছেন না এরদোয়ান।
সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা
কিউএনবি/আয়শা/০৪ জুন ২০২৩,/দুপুর ১২:৪৫