রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ০৮:৪২ অপরাহ্ন

রাজশাহী শহিদ মিনারের স্থানে মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত, মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্ষোভ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩
  • ২৩০ Time View

ডেস্ক নিউজ : রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের স্থানে রাজশাহী জেলা পরিষদ কর্তৃক মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মানববন্ধন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বুধবার সকালে সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে রাজশাহী জেলা কমান্ড, মহানগর কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সোনাদীঘি সংলগ্ন পুরাতন সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি ভাষাসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন অনুষ্ঠানে ছিলেন তৎকালীন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশাসহ রাজশাহীর সর্বস্তরের জনসাধারণ।

সেই আন্দোলন ও ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল নিজেও ছিলেন। অথচ রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে মীর ইকবাল এসব ভুলে গেছেন। আমরা হুঁশিয়ার দিয়ে বলতে চাই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। সেখানে মার্কেট নির্মাণের অপচেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মানববন্ধন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি প্রদানকারী রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

মানববন্ধনে রাজশাহী জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ইয়াসিন আলী বলেন, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার যেখানে হওয়ার কথা সেখানেই হবে। কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করতে চাচ্ছেন। তিনি কার স্বার্থে মার্কেট নির্মাণ করতে চাচ্ছেন, সেটি আমরা জানতে চাই।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বলেন, আপনার ক্ষমতা নেই শহিদ মিনারের স্থানে মার্কেট নির্মাণ করার। আমরা সেখানে শহিদ মিনার করেই দেখাব। রাজশাহী মহানগর ইউনিট কমান্ড এর কার্যকরী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপিকা জিনাতুন নেসা তালুকদার বলেন, যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে জেনে বুঝে কিভাবে মার্কেট বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের বুঝে আসে না। ১৯৪৮ থেকে ৫২ ভাষাশহিদ, ১৯৭১ সালের ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মা বড় কষ্ট পাচ্ছে আপনার বর্তমান কর্মকাণ্ডের জন্য।

সেক্টরস কমার্ন্ডাস ফোরামের বিভাগীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খন্দকার বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক মার্কেট নির্মাণ এই সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জাজনক। মীর ইকবাল মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কিভাবে শহিদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণের কথা চিন্তা করলেন অথচ আগের চেয়ারম্যানের সময় তিনিও আন্দোলন করেছিলেন। তার আশেপাশের লোকেরা মীর ইকবালকে বিপথগামী করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

মানববন্ধনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক মহানগর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এর জায়গায় মার্কেট অথবা শপিং মল অথবা অন্য যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের চিন্তা করেছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। আমাদের ভাষা আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের শ্রদ্ধায় শহিদ মিনার নির্মিত হয়েছে অনেক স্থানে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এতদিনেও রাজশাহীতে কেন্দ্রীয়ভাবে শহিদ মিনার নির্মিত হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা।

মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট সাইদুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কামরুল ইসলাম মিঠু, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযোদ্ধা একাত্তর রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক শাবান আলী দিলীপসহ রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল।

এদিকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল বুধবার বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমান্ড এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন সম্পর্কে রাজশাহী জেলা পরিষদ অবহিত হয়েছে। মানববন্ধনে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের জায়গায় রাজশাহী জেলা পরিষদ কর্তৃক মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিনীতভাবে এই মর্মে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের স্থলে কোনোভাবেই মার্কেট নির্মাণের কোনো সিদ্ধান্ত জেলা পরিষদ গ্রহণ করেনি।

বরং প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা পরিষদের মাসিক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই স্থানে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্তের আলোকে জেলা পরিষদ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সন্তান হিসেবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করতে চাই যে, জেলা পরিষদের ওই জমিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারই নির্মিত হবে। ওই স্থানে বাণিজ্যিক কোনো ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের সিদ্ধান্ত পরিষদের নেই এবং এ সিদ্ধান্তের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। আপনাদের এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৪ মে ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:১৯

সম্পর্কিত সকল খবর পড়ুন..

আর্কাইভস

June 2023
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
© All rights reserved © 2022
IT & Technical Supported By:BiswaJit
themesba-lates1749691102