এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় বেশিরভাগ নলকূপে পানি উটছে না। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওঠানো যাচ্ছে না পানি। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও তোলা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পানি। তীব্র তাপদাহে এ অবস্থা আরও প্রকট হওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক কারণ ও দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, উপজেলায় সাধারণত পানির স্তর গড়ে ৩০ থেকে ৮০ ফুট গভীরে। কিন্তু কয়েক বছরধরে উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় অস্বাভাবিক ভাবে পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। প্রাকৃতিক নানা প্রতিকূলতার কারণে প্রতি বছর তীব্র তাপদাহে পুড়ছে প্রকৃতি ও নীচে নামছে পানির স্তর। বিশেষ করে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত এ অবস্থার আরও প্রকট আকার ধারণ করে। প্রতি বছরের মতো এবারও উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার নলকূপ অকেজো হয়ে গেছে উঠছেনা একবিন্দু পানি ।দীর্ঘ দিনের প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে জনজীবন ও প্রাণীকুল। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি শুষ্ক মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত নলকূপে উঠছে না পানি। এছাড়া হাজার হাজার টিউবওয়েলের পানি উঠা বন্ধ রয়েছে। এদিকে শেষ মূহুর্তে বোরো ধানের ক্ষেতে সেচকাজেও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে না। ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের কোনো নিয়ম না মানাই এমনটা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় ব্যাপক দুর্ভোগে পড়ছে গৃহস্থালিরা। প্রাকৃতিক এ পানি সংকটে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। চলতি শুষ্ক মৌসুমে উপজেলার বেশির ভাগ বিল-ঝিল, জলাশয় ও পুকুর-নদ ও নদীর পানি শুকিয়ে গেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, পৌরশহর ও উপজেলার সিংহঝুলি, ফুলসারা, জগদিশপুর, পাশাপোল, পাতিবিলা, নারায়নপুর ও হাকিমপুর ইউনিয়নে পানি সংকট চরমে পৌঁছেছে। পানির স্তর নিচে নামায় অকেজো হয়ে পড়েছে পানির কল। হাহাকার দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির। শুধু অগভীর নলকূপেই নয়, কোনও কোনও এলাকায় পানি উঠছেনা অগভীর নলকূপেও। পানির সংকট কাটাতে কেউ কেউ বাড়িতে নতুন করে সাবমার্সিবল পা¤প বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছেন। তবে দেড়শ থেকে দুইশ ফুট গভীরেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী ফারুক হোসেন জানান, উপজেলায় গভির ও অগভির মোট ৪ হাজার টি সরকারি টিউবওয়েল রয়েছে। সুপেয় পানির অভাব পূরনের জন্য চৌগাছার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১০৫ টি গভির নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলায় ১০০ ফুটের নিচে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি হওয়ায় সেগুলো সব পরিত্যাক্ত। তিনি বলেন, সম্প্রতি ৫শ ৭২টি সাবমার্সেবল গভির নলকূপ স্থাপনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পাওয়া গেলে এগুলো উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে প্রায় ১৭ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষ হয়েছে। উপজেলায় মোট ১১ হাজার ৪শ ১৩ টি সেচ পা¤প রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ চালিত ৭৫০ টির মধ্যে গভীর নলকূপ রয়েছে ১৫৬ টি। ডিজেল চালিত সেচপা¤প ১০ হাজার ৫শ টি এবং সোলার পা¤প রয়েছে ৭টি। দেড়শ থেকে দুইশ ফুট গভীরেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা না গেলে, অদূর ভবিষ্যতে পানি সংকট আরও তীব্র হতে পারে।চৌগাছা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি রহিদুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের গ্রাম সিংহঝুলীতে গ্রীষ্মে কোনও অগভীর নলকূপে পানি উঠে না। অন্য এলাকা থেকে খাবারপানি আনতে হয়। ব্যয়বহুল হওয়ায় সবার পক্ষে গভীর নলকূপ স্থাপন সম্ভব হয় না। এলাকার মানুষের অনেক কষ্ট করে পানি সংগ্রহ করতে হয়।
পাশাপোল ইউনিয়নের মৎস্যরাঙ্গা গ্রামের আব্দুল খালেক, সিংহঝুলী গ্রামের বাদল, টনিরাজ, কাজলসহ উপজেলার অনেকেই জানান, তাদের নলকুপে পানি উঠছে না। পানির স্তর এতটাই নীচে নেমে গেছে যে, গভীর নলকূপ ছাড়া পানি পাওয়া সম্ভব নয়।উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ফেরদৌসি খাতুন বলেন, চৌগাছা কৃষি সমৃদ্ধ একটি উপজেলা। কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনের প্রয়োজন পড়ে। ফলে পানির স্তর দিন দিন আশঙ্কা জনক ভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে। আরো কয়েক বছরে এ অবস্থা আরও প্রকট হতে পারে। তবে নদ-নদী ও খাল খনন এবং ভূ-উপরস্থ পানির দূষণ রোধ ও ব্যবহার বাড়ানো হলে, এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে। এছাড়া বৃষ্টিপাত হলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, পানির সংকট হচ্ছে। বৃষ্টি হলে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে। তবে পানির জন্য যে কোন ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় সহায়তা করবেন।
কিউএনবি/অনিমা/১৮ এপ্রিল ২০২৩,/দুপুর ২:৩০