শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
মাটিরাঙ্গা জোনের উদ্যােগে  বিশেষ মানবিক সহায়তা ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান। মাটিরাঙ্গায় পলাশপুর জোনের বিশেষ অভিযানে  ভারতীয় পিস্তল ও তাজা গুলি উদ্ধার। শিবিরের নতুন সভাপতি সাদ্দাম, সেক্রেটারি জেনারেল সিবগাতুল্লাহ কুষ্টিয়া সীমান্তে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে পুশইনে বিজিবি’র বাঁধা : পতাকা বৈঠকে ফেরত ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির কৌশল ও কংগ্রেসের বিপর্যয়: বাংলাদেশের বিএনপির জন্য শিক্ষণীয় ভারত থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে ম্যান সিটির মালিকপক্ষ মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ: ঝালকাঠিতে অ্যাডভেঞ্চার-৯’ কর্মী আটক ৪ শহীদ ওসমান হাদীর স্মরণে রাঙ্গামাটিতে নওগাঁর পত্নীতলায় তৃণমূলে গণমানুষের নেতৃত্বে গড়ে উঠছে পুষ্টি সমৃদ্ধ গ্রাম বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড

পৃথিবীজুড়ে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই: হুমায়ূন কবির

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৮৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : যুক্তরাষ্ট্রে আমার এক মৃত্যুপথযাত্রী রোগী স্বেচ্ছায় লাইফ সাপোর্টে যেতে চাইলেন, যদিও আগেই তার পক্ষ থেকে বলা ছিল—কখনো যেন তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া না হয়। শেষমুহূর্তে তার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ হলো, ছেলের সাথে তার দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি চাচ্ছিলেন ছেলেটা তাকে হাসপাতালে দেখতে আসা পর্যন্ত তিনি যেন বেঁচে থাকতে পারেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন চার্চের একজন যাজক। অবশ্য কয়েকদিন পরই তিনি কিছুটা সেরে ওঠেন এবং তাকে লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। এরপর হঠাৎ একদিন হাসপাতাল থেকে ফোন এলো আমার বাসায়। সেদিন আমি সস্ত্রীক এক জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছিলাম। ফোনে জানতে পারলাম, আমার সেই রোগী মৃত্যুশয্যায় এবং তিনি আমাকে তার পাশে চান। স্ত্রীকে বললাম, ‘আজ আমার আর কোথাও যাওয়া হবে না! আমাকে আমার এক রোগীর কাছে যেতে হবে।’

হাসপাতালে গিয়ে যখন তার পাশে বসলাম, তিনি আমাকে ফিসফিস করে তার শেষ ইচ্ছাটা জানালেন—‘আমি তোমার হাতটা ধরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চাই!’

আরেকটি অভিজ্ঞতার কথা বলব। টেনেসির জেলিকোতে আমেরিকান এক নার্স আমার কাছে এসে বললেন, তুমি যে বাংলাদেশি এটা জেনে আমার খুব ভালো লেগেছে। কিছুটা বিস্মিত হয়ে এর কারণ জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন, বাংলাদেশের দুটো শিশু তার খরচে পড়ালেখা করছে, বড় হচ্ছে!

ঘটনাটি আমাকে খুব নাড়া দিল—কত দূরের দেশ আমেরিকা থেকে তিনি অর্থ পাঠাচ্ছেন বাংলাদেশের দুটো শিশুকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দেয়ার জন্যে! এই যে মানবিক স্পর্শ, এটা সব দেশে সবখানে একইরকম।

এমন অনেক অভিজ্ঞতায় আমি জেনেছি, পৃথিবীজুড়ে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে আর আমেরিকায় বসবাসরত দুজন মানুষের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য আছে বলে আমার মনে হয় না। পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন, মানুষ হিসেবে আমরা প্রত্যেকে একই।

ডা. হুমায়ূন কবির বলেন, “প্রাণিজগতে একমাত্র মানুষই জন্মমুহূর্ত থেকে অন্যের সাহায্য নিয়ে বেড়ে ওঠে। তাই বলা যায়, জন্মের পর থেকেই আমরা পরাধীন এবং অন্যের কাছে ঋণী। আবার বার্ধক্যেও আমাদেরকে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। মধ্যবয়সে যদিও কিছুটা স্বাধীন, কিন্তু এসময় আমরা আসলে অধিকারের কেনাবেচা করি অর্থাৎ লেনদেন করার চেষ্টা করি। অন্যদের ঋণশোধ করার এই চেষ্টাই জীবন।”

তিনি আরো বলেন, “আমার প্রথম প্রকাশিত বই ‘তীর্থযাত্রী তিনজন তার্কিক’ লেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি—জীবনের বড় প্রশ্নগুলো সামনে রাখাই যথেষ্ট। উত্তর ধরিয়ে দিতে নেই। যদি আপনাকে ম্যাপ দিয়ে দেয়া হয়, আপনার পথচলা সহজ হবে কিন্তু আরো যে-সব অনিশ্চয়তা থাকতে পারে, সেটা সম্পর্কে আপনার জানা হবে না। তাই গন্তব্যটা বড় কথা নয়, বরং গন্তব্যের পথে হাঁটাই বড় কথা।”

এ কথাগুলো বলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী, ঘুম বিশেষজ্ঞ, লেখক ও যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিস্থ জেলিকো কমিউনিটি হসপিটালের ডিপার্টমেন্ট অব কার্ডিও-পালমোনারি সার্ভিসেস এন্ড আইসিইউ-র ডিরেক্টর এবং অ্যাপালেচিয়ান স্লিপ ডিসঅর্ডারস সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ডা. হুমায়ূন কবির। – বক্তৃতা থেকে অনূদিত

হুমায়ূন কবিরের পরিচয়:
১৯৫৬ সালের ১৬ নভেম্বর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার চরনাল গ্রামে তার জন্ম। বাবার চাকরিসূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কাটে সিলেটের একাধিক মফস্বল শহরে। বাংলাদেশের মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষে ভর্তি হন সিলেট এম. এ. জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজে। এরপর বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশ বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। অতঃপর চাকরিসূত্রে পাড়ি জমান ইরানে। দুবছর ওখানে অবস্থান করার পর উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণাকাজে দীর্ঘকাল কাটান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, শিকাগো, সানফ্রান্সিসকো ও বোস্টন এবং যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। ইনটার্নাল মেডিসিন, পালমোনারি মেডিসিন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ও স্লিপ মেডিসিন চিকিৎসাবিজ্ঞানের এ চারটি শাখায় ‘আমেরিকান বোর্ড সার্টিফাইড’ হওয়ার বিরল সাফল্য অর্জন করেন ডা. হুমায়ূন কবির।

চিকিৎসক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন টেনেসি অঙ্গরাজ্যের অ্যাপালাচিয়ান পর্বতমালার পাদদেশের নৈসর্গিক শহর জেলিকোর স্থানীয় হাসপাতালের কার্ডিও-পালমোনারি ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর হিসেবে। বর্তমানে তিনি জেলিকো কমিউনিটি হসপিটালের ডিপার্টমেন্ট অব কার্ডিও-পালমোনারি সার্ভিসেস এন্ড আইসিইউ-র ডিরেক্টর এবং টেনোভাইস্ট টেনেসি সিস্টেমের দুটো হাসপাতালের আইসিইউ-র ডিরেক্টর। এ-ছাড়াও তিনি আমেরিকান কলেজ অব ফিজিশিয়ানস, আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিশিয়ানস, সোসাইটি অব ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন, আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন, আমেরিকান এসোসিয়েশন অব ওবেসিটি মেডিসিনের একজন সম্মানিত ফেলো।একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে প্রায় দুদশক তিনি সেবা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের প্রান্তিক শহর জেলিকো-র বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষকে।

কিউএনবি/অনিমা/০৯ জানুয়ারী ২০২৩/বিকাল ৪:২৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit