শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৯ অপরাহ্ন

মুজিবুর রহমান নাম হওয়ায় মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, কুড়িগ্রাম
  • Update Time : শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১০২ Time View

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, কুড়িগ্রাম : ১৯৭১ সাল। চারিদিকে যখন মুহুরমুহ গুলির শব্দ। একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। সে সময় হানাদার বাহিনীর টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে নিলুর খামার গ্রামের ২১জন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায় পাকবাহিনী। একে একে নাম শুনে সবাইকে ছেড়ে দিলেও শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর সাথে নামের মিল থাকায় গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পায়নি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি।অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ^রী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নে পাকহানাদার বাহিনীর টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে মুক্তিযোদ্ধারা। সন্দেহের দৃষ্টি পড়ে নিরীহ এলাকাবাসীর উপর।

পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় সূর্যকুটি এবং নিলুরখামার গ্রামের ২১জন ব্যক্তিকে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হয় প্রত্যেককে। যাদের মধ্যে ছিল ময়ছার আলী, মিজানুর ও হবিবুল্লাহ সহ আরো অনেকে। একে একে নাম জানার পর জিজ্ঞাসা করা হয় সর্বশেষ যুবককে। পাকবাহিনী যখন শোনে যুবকের নাম মুজিবর রহমান। তখনই মাথায় গুলি চালিয়ে খুলি উড়িয়ে দেয় হানাদাররা। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মুজিবুর রহমানের সহকর্মীদের উপর বন্দুক তাক করে তার মরদেহ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় পাকিস্তানি সেনারা। সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা থাকলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় ময়ছার আলী ও মিজানুর রহমান। যারা এখনো পাকহানাদার বাহিনীর হাতে সেদিনের নির্মম হত্যাকান্ডের স্বাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে।

পাকিস্তানি বাহিনীর টেলিফোন সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করায় কিছুদিন পর নিলুর খামার গ্রামে ভোর রাতে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর হামলে পড়ে পাকসেনারা। গুলি চালিয়ে ৭৯জন ব্যক্তিকে নিমর্মভাবে হত্যা করে। যে গ্রাম এখন নিলুরখামার বদ্ধভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে মুজিবুর রহমানের মত হাজারো পরিবারগুলিকে অবিলম্বে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ-এমনটাই দাবি যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া এখানকার মানুষদের।যুদ্ধে নিহত মুজিবুর রহমানের পুত্র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বাবাকে হারাবার ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও তাকে শহীদের মর্যাদা না দেয়া সত্যি দুঃখজনক। আমি অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানাচ্ছি আমার বাবাকে শহীদের স্বীকৃতি দিলে তার আত্মা শান্তি হবে।

এ ব্যাপারে কথা হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ছমির আমিনুল বলেন, ১৯৭১ সালে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর সাথে মিল থাকায় মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। যে নাগেশ^রী উপজেলার ইতিহাসের অংশ। আমি যুদ্ধে নিহত মুজিবুর রহমানকে শহীদ স্বীকৃতি দাবি জানাচ্ছি।এ বিষয়ে বীর প্রতীক (যুদ্ধকালীন কমান্ডার) আব্দুল হাই সরকার বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত নাম নাজানা পরিবারগুলোকে তালিকাভূক্ত করা না গেলেও বঙ্গবন্ধুর সাথে নামের মিল থাকায় যেহেতু মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে এজন্য তাকে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

 

কিউএনবি/অনিমা/১৬ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:৪৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit