শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০১ পূর্বাহ্ন

রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৪ বছরে নগদ সহায়তা পেয়েছে ৩০৪০ অস্বচ্ছল রোগি

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি প্রতিনিধি
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৪৫ Time View

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি প্রতিনিধি : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক সরকারি অর্থায়নে সেবাদান কার্যক্রমে গতি সঞ্চার হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রাঙামাটিস্থ একমাত্র জেনারেল হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা প্রার্ন্তিক জনগোষ্ঠির লোকজনকে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এতে করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে রাঙামাটির স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠছে পাহাড়ের মানুষজন।

 

রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডাঃ বিপাশ খীসা জানিয়েছেন, গত চার বছরে রাঙামাটি জেনারেল হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অসচ্ছল রুগীদের মাঝে ৩০ লাখ ৩১হাজার ৫২৬ টাকা নগদ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। রোগি কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ে অসচ্ছল ৩ হাজার ৪০ জন রোগীকে এই সহায়তা প্রদান করা হয়।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে রুগী কল্যাণে নেওয়া বেশ কয়েকটি বিশেষ উদ্যোগ দুর্গম পাহাড় থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সেবাপ্রার্থীদের মাঝে আসার সঞ্চার করেছে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে হাসপাতাল বিমুখ মধ্যম আয়ের মানুষের মাঝেও।

হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা: শওকত আকবর খান জানান, শুধু চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই গবীর রুগীদের ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অসুস্থ হওয়ার পর মানুষ দৌড়ে হাসপাতালে চলে আসে। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা ও জরুরী ঔষধসমূহ এবং রুগীর পথ্য বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু রুগীর সাথে যিনি থাকেন তার খরচ বা কিছু বিশেষ ঔষধ ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কিছু জিনিসের সাপ্লাই হাসপাতালে সাধারণত থাকে না।

যারা দরীদ্র এবং অসচ্ছল রুগী, এ ক্ষেত্রে তারা বিপদে পড়ে যায়, এই বিষয়টি মাথায় রেখেই রুগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে দরিদ্র রুগীদের নগদ সহায়তা সুযোগ চালু হয়েছে। তিনি জানান এই সুবিধা অনেক আগে থেকেই চালু রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা সুবিধাটির পরিধি বৃদ্ধি ও সহজতর করেছি।হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছ সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিগত ২১ সালের ডিসেম্বর মাসে চালু হওয়া শেখ রাসেল স্কেন্যু সেবা অন্যতম। এর মাধ্যমে নবজাতকের জন্য বিশেষ সেবার ব্যবস্থা করা হয়। গত নয় মাসে এই বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৮২৮ নবজাতককে সেবা প্রদান করা হয়েছে।

এ ছাড়াও চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরো কিছু সংষ্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে রাঙামাটি হাসপাতালে করোনা মহামারির মাঝামাঝি স্বতন্ত্র কোভিড ইউনিট চালুর পর একটি বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। কোভিড রোগীদের স্বতন্ত্র চিকিৎসা, ফ্লু কর্নার, আরটি পিসিআর ল্যাব, বেড সাইড সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ, বহি:বিভাগ সেবা : জেনারেল বহি:বিভাগ শিশু বহি: বিভাগ সার্জারি বহি:বিভাগ গাইনী বহি:বিভাগ, শিশুবিকাশ কেন্দ্র (অটিজম রোগীদের সেবা সহ), দন্ত বহি: বিভাগ,চক্ষু বহি: বিভাগ (রবি ও সোম বার), চর্ম বহি: বিভাগ (সোম ও বুধবার), নাক, কান ও গলা বহি: বিভাগ (দৈনিক), অন্ত:বিভাগ সেবা, জরুরী বিভাগ সেবা,সার্জারী,মেজর সার্জারী, মাইনর সার্জারী ,নবজাতকের জন্য শেখ রাসেল স্কেন্যু সেবা, মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা,প্রসব পূর্ব ও পরবর্তী সেবা,নরমাল ডেলিভারী (২৪ ঘন্টা), সিজারিয়ান সেকশন (২৪ ঘন্টা) সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

এর পাশাপাশিও রোগ নির্ণয়, প্যাথলজি বিভাগ,এক্স-রে বিভাগ, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, জরায়ু ক্যান্সার সনাক্ত করন (ভিআইএ), নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, সম্প্রসারিত টিকা দান কার্যক্রম,পুষ্টি সেবা(আইএমসিআই),সমাজ সেবার রোগী কল্যান কার্যক্রম,ওসিসি (সারভাইবলদের সহায়তা) প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন আরএমও ডা: শওকত আকবর খান।সেবার আওতা বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ বিপাস খীশা জানান, রাঙামাটি হাসপাতালে চলতি ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নাক-কান ও গলা বিভাগেও ৬,৩৯৮জন প্রাপ্ত বয়স্ক রুগীকে ও ৫,২৩৮জিন শশুকে সেবা প্রদান ছাড়াও চক্ষু বিভাগে ১,০২২ জন রোগীকে বিশেষায়িত সেবা প্রদান করা হয়েছে।

এতদ্বসত্ত্বেও রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে বেশ কিছু জনবল সঙ্কট রয়েছে বলে জানা গেছে। যেমন : জনবল প্রয়োজন উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক-১, নার্সিং সুপারভাইজার-৪ জনের স্থলে আছে-৩জন। সহকারী নার্স-৬জনের মধ্যে আছে মাত্র-১জন। বাকি ৫টি পদই খালি। ফার্মাসিস্ট-৪জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব)-৪জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (রেডিও)-২জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ডেন্টাল)- দু’টি পদে রয়েছে-১জন, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট(ইপিআই) পদটি শূন্য। পাশাপাশি  প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক-১, কোষাধ্যক্ষ-১, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর-২, ভান্ডার রক্ষক-১, ওয়ার্ড মাষ্টার-১, গাড়ি চালক-২, অফিস সহায়ক-২০জনের মধ্যে রয়েছে ৬জন, বাকি ১৪টি পদ খালি। ষ্ট্রেচার বেয়ারার পদে ২টি পদই শূন্য। কুক মশালচী পদে ৬জনের স্থলে রয়েছে ৪জন। পরিচ্ছন্নকর্মী ১৬টি পদে রয়েছে মাত্র ৯জন। বাকি ৭টি পদ খালী। সাপোর্ট পারসোনাল কম্পাউন্ডার-১, গার্ডেনার/হারবাল এ্যাসিটেন্ট-১জন। অটোক্ল্যাব, ইসিজিসহ এখনো অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ন যন্ত্রপাতির সঙ্কট রয়েছে বলে জানা গেছে। এ সঙ্কটগুলো দুর হলে পাহাড়ি এ জেলায় স্বাস্থ্যসেবার গতি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।

কিউএনবি/অনিমা/১০.১১.২০২২/সকাল ১১.১০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit