শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন

নববধুকে জিম্মি করে জরিমানা আদায় করলেন চেয়ারম্যান

খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি ।
  • Update Time : সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০২২
  • ২৩০ Time View

খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের কোয়ারপুর সওদাগর কান্দি গ্রামের মৃত লতিফ মোল্যার ছেলে মানিক মোল্যা (২৫)। মানিক একজন দিনমজুর। গত ১৬ অক্টোবর জাজিরা উপজেলার অনামিকা নামে এক কণের সাথে আানুষ্ঠানিক ভাবে মানিকের বিয়ে হয়। স্থানীয় আত্মীয়-স্বজন ও কণে পক্ষের আত্মীয়-স্বজনদের আমন্ত্রণ করে ১৮ অক্টোবর বউ ভাতের আয়োজন করা হয় মানিকের বাড়িতে। সুন্দরভাবে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠান শেষে কণে পরিবার ও তাদের আত্মিয়-স্বজন সহ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ডোমসার বাজারে ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর রহমান খানের ব্যক্তিগত ক্লাবের সামনে পৌঁছামাত্র নববধু সহ মেহমানদের জিম্মি করে ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নববুধকে চেয়ারম্যানের বাস ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে বন্ধি করে রাখে। এদিকে প্রতিবাদ করায় নতুন মেহমানদেরও মারধর করা হয়। এতক্ষণে কি হচ্ছে বা কেন এমন হচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারেনি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই জানতে পারে সামসুন নাহার নামে এক বৃদ্ধা মহিলা বর মানিক মোল্যার প্রথম পক্ষের স্ত্রী দাবী করে চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছে। তাই চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় নববধু-বর ও নতুন মেহমানদের আটক করেছে। বর-কনে ও মেহমানদের পক্ষে কেউ কথা বললেও তাদের অপমান করা হতো সেখানে। পরে সেখানে ভ্রাম্যমান আদালতে আদলে কথিত স্ত্রীকে তালাক বাবদ বরকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। উচ্চ হারে সুদে এনে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মুক্তি পায় তারা। মুক্তি পেয়ে নববধু শুধু কান্না করতেছিল। নববধুকে মুক্ত করে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় তারা।

অদ্যবধি স্বামীর ঘরে ফিরেনি নববধু। সেই থেকে মানিকও ঢাকায় চলে গেছেন। ক্ষোভে-দুঃখে আর বাড়ি ফিরেনি কেউ।
স্থানীয় ও বর মানিক ম্যোলার পরিবার জানায়, সামসুন নাহার (৫৫) একজন বিধবা মহিলা। তার ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। তার নাতি-নাতনিও আছে। ২ বছর পূর্বে তার স্বামী হারুন ছৈয়ালের মৃত্যু হয়। গত নির্বাচনে সওদাগর কান্দির তিনটি পরিবার বাদে সকলে একজোট হয়ে চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পক্ষে আমরা ভোট দিয়েছি। আমাদের প্রার্থীর পরাজয় হয় আর বিজয় হয় মজিবর রহমান খানের। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমাদের উপর বিভিন্ন ভাবে জুলুম অত্যাচার শুরু করে। এবার নির্বাচনি প্রতিহিংসায় নববধু-বর ও মেহমানদের আটকে রেখে নির্যাতন ও জরিমানা করেছে।

মানিকের চাচাতো ভাই আক্তার বলেন, বৌভাত অনুষ্ঠান শেষে বর-কণে সহ মেহমানদের বিদায় দেই। ১৮ অক্টোবর মাগরিবের নামাজের সময় চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ক্লাবের সামনে তাদের আটক করে। পরে সেখান থেকে নববধুকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। কোথায় নেয় তা আমরা জানতে পারিনি। আমরা চেয়ারম্যানকে অনেক অনুরোধ করি নববধু ও নতুন মেহমানদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আর যে কাবিননামা দিয়ে বিবাহ দাবি করছে তা মিথ্যা প্রমান করার জন্য ১ দিন সময় চাই। চেয়ারম্যান আমাদের কোন পাত্তা দেয় না। নববধু-বর ও মেহমানদের আটকে রেখেই ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে। পরে উচ্চহার সুদে সেই টাকা পরিশোধ করি।

মানিকের মা চন্দ্রবান বিবি বলেন, ছোট ছোট ৯টি ছেলে মেয়ে রেখে ওর বাবা মারা যায়। পাটখড়ির বেড়ার ঘরে রেখে অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছি। কেউ কোনদিন আমার সন্তানদের কোন বদনাম বলতে পারে নাই। এবার চেয়ারম্যান যা করেছে তার কোন প্রতিবাদ করার ভাষা নাই। প্রতিবাদ করলে আবার আরেকটা ঘটনা ঘটাইবে। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এমদাদ মুন্সী সহ বাজারের কয়েক ব্যবসায়ী জানায়, সংবাদ পেয়ে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে যাই। সেখানে চেয়ারম্যান আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে।

পরে আমরা চলে আসি। শুনেছি চেয়ারম্যান তার নির্বাচনী প্রতিহিংসা উদ্ধারের জন্য একটি ভুয়া কাবিন নামার ভিত্তিতে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। পরে কথিত একটা তালাকও রেজিষ্ট্রি করেছে। তবে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি কাবিনটা মিথ্যা ছিল। মহিলার বয়স ৫৫ বছর। তার ছেলে মেয়েও মানিকের চাইতে ১০ বছরের বড় হবে। তার বিয়ের কাবিনে বয়স দেখানো হয়েছিল ২৫ বছর। তাহলে এই কাবিন কিভাবে সঠিক হয়। কাবিন করতে হলে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা পরিচয় পত্র লাগে। সেখানে তারও কোন ব্যবহার করা হয় নাই।

তালাক রেজিষ্ট্রি কারক কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, চেয়ারম্যানের কল পেয়ে সেখানে যাই। উভয় পক্ষের সম্মতিতে একটি কাবিন নামার ভিত্তিতে তালাক রেজিষ্ট্রি করি। সেখানে কনেকে বিধবা দেখানো হয়েছে। কনের বয়স দেখানো হয়েছে ২৫ বছর। সেই কাবিন রেজিষ্ট্রি করেছিলেন নারায়নগঞ্জ সিটি করর্পোরেশনের আসলাম মিয়া নামে এক কাজি। চেয়ারম্যান মজিবর রহমান খান বলেন, সামসুন নাহারের ছেলে শাহিন লোকজন নিয়ে তাদের আটক করে আমার চেম্বারে নিয়ে আসে। আমি মাগরিবের নামাজ পড়তে যাইতেছিলাম।

তখন তারা বলে চেয়ারম্যান এই ঘটনার বিচার করতে হবে। তাদের বলে নামাজে যাই। নামাজ শেষে এসে বিচারে বসি। ক্লাবে অনেক মানুষ ছিল তাই নববধুকে আমার বাসায় নিয়ে রাখি। তার সাথে কথাও বলেছি। বর-বধু ও মেহমানদের ছেড়ে দিলে আর এই বিচার করা যাবে না তাই তাদের যেতে দেইনি। তাদের সামনেই রায় দিয়েছি। বরের প্রতি অন্যায় না বরং ন্যায় করা হয়েছে। ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যেত। সেখানে ৩ লাখ টাকার সিদ্ধান্ত দেই। তার পরেও ক্ষমা চেয়ে ৩০ হাজার টাকা কমিয়েছে। এখানে নির্বাচনী কোন প্রতিহিংসা উদ্ধার করা হয়নি।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৭ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:৪৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit