শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন

মনিরামপুর ওলামা লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হাফেজ মফিজুর এখন ভিক্ষুক!

স্টাফ রিপোর্টা,মনিরামপুর(যশোর)
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৫১ Time View

স্টাফ রিপোর্টা,মনিরামপুর(যশোর) : যশোরের মনিরামপুর উপজেলা ওলামা লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হাফেজ মফিজুর রহমান(৬৫) কয়েক বছর আগেও ছিলেন বেশ স্বচ্ছল। বাজারে ছিল তার বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মফিজুর রহমান মনিরামপুরের তিনবারের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খান টিপু সুলতানের ছায়াতলে থেকে দাপটের সাথে রাজনীতি করতেন। ওই সময় মফিজুর রহমান ঢাকায় যাতায়াত করতেন বিমানে করে। কিন্তু ২০১৭ সালে খান টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর থেকে হাফেজ মফিজুর রহমানের রাজনীতিতে নেমে আসে চরম ভাটা। এখন তিনি ব্যবসায় দেউলিয়া হয়ে মানষিকভাবে হয়ে পড়েছেন বিপর্যস্থ। ফলে এখন তিনি সব হারিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছেন। মফিজুর রহমানের আক্ষেপ, দলের কোন নেতাই এখন আর তার তেমন খোজখবর নেননা।

জানাযায়, উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাফেজ মফিজুর রহমানের মনিরামপুর পৌরশহরে ‘শোভা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ফার্ণিচারের বড় দোকান ছিল। এলাকায় ফার্ণিচার ব্যবসায়ী হিসেবে তার যতেষ্ঠ সুনাম ছিল। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে বেশ সক্রীয় ছিলেন। তিনি ছিলেন উপজেলা ওলামা লীগের সাধারন সম্পাদক। সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা খান টিপু সুলতানের ঘনিষ্ট হিসেবে তার ছায়াতলে থেকে এলাকায় অত্যন্ত দাপটের সাথে রাজনীতি করতেন। অর্থনৈতিকভাবেও তিনি ছিলেন বেশ সচ্ছল। দলের নেতৃত্ব ধরে রাখতে নিজের ব্যবসার দিকে নজর না দিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায়। সু-সংগঠিত করেছেন দলকে। ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মুক্তিযোদ্বা খান টিপু সুলতানের পক্ষে অবদান রেখেছেন। টিপু ভক্ত হাফেজ মফিজুর রহমান দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে ধীরে-ধীরে তার ব্যবসায় ভাটা পড়ে। কমতে থাকে ব্যবসার পরিধি। পরবর্তীতে ব্যবসায় ঘুরে দাড়াবার জন্য অনেক চেষ্টার করেও তিনি ব্যর্থ হন।

২০১৭ সালের ১৭ আগষ্ট মৃত্যুবরন করেন তার প্রিয় নেতা খান টিপু সুলতান। টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর দলিয় গ্রুপিংয়ে তিনি হয়ে পড়েন কোনঠাসা। রাতারাতিই তিনি রাজনীতি থেকে দুরে সরে যান। এ দিকে ব্যবসায় ভাটা পড়ে তিনি অর্থনৈতিকভাবে হয়ে পড়েন বিপর্যস্থ। পরবর্তিতে হাফেজ মফিজ শাররীক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। টাকার অভাবে ভাল চিসিৎসা করাতে পারেনি। বর্তমান কিছুটা সুস্থ্য হলেও কাজকর্ম করতে পারেন না। তার স্ত্রীয় বর্তমান অসুস্থ্য। তার পাঁচ সন্তানকেই বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। আর তিন মেয়ে আছেন শ্বশুর বাড়িতে। বড় ছেলে ইয়াসিন মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালায় এবং ছোট ছেলে টিটুল হোসেন কাঠমিস্ত্রীর কাজ করেন। ছেলেদেরও সামর্থ নেই পিতাকে দেখভাল করার। ফলে কোন উপায়ন্তু না পেয়ে হাফেজ মফিজুর রহমান এখন ভিক্ষার ঝুলি হাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান।

তিনি একজন শিক্ষানুরাগীও ব্যক্তিও বটে। প্রথম জীবনে মনিরামপুরের ঐতিহ্যবাহি মাদানী নগর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। স্থানীয় বালিয়াডাঙ্গা খানপুর মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন মফিজুর রহামন। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সব কিছু হারিয়ে তিনি এখন ভিক্ষুক। দিন চলে তার ভিক্ষাবৃত্তি করে। হাফেজ মফিজুর রহমানের ছেলে টিটুল ও ইয়াসিন জানান, অসুস্থ্যতার কারণে তার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বার বার নিষেদ করা সত্ত্বেও উনি(পিতা) ভিক্ষা করে বেড়ান। জোর করে বাড়ীতে রাখলে বেশি অসুস্থ হতে পারে, তাই তাকে এখন আর বাইরে বের হতে বাধা দেওয়া হয়না।

খানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিলন বলেন, হাফেজ মফিজুর রহমান আওয়ামী পরিবারের অত্যন্ত পরিশ্রমী নেতা। উপজেলা ওলামা লীগের পাশাপাশি তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। খান টিপু সুলতান মারা যাবার পর থেকে রাজনীতিতে তার পতন হয়। মফিজুর রহমান এখনও খানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদে আছেন। কিন্তু তার এই দূর্দীনে দলের জনপ্রতিনিধিসহ নেতারাও খোঝখবর রাখেননা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান ও সাধারন সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, হাফেজ মফিজুর রহমান একজন খাটি আওয়ামী প্রেমি মানুষ। তার বাড়িতে না গেলেও মাঝেমধ্যে আমরা সাধ্যমত সহযোগিতা করে থাকি।

এ দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মফিজুর রহমানের ভিক্ষবৃত্তির ছবি ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়। এ দৃশ্য দেখে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন চাল ডাল ফলমুলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তার বাড়িতে পাঠান। এ চিত্র দেখে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য যশোরের সিটিপ্লাজার চেয়ারম্যান এসএম ইয়াকুব আলী ফলমুল নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে মফিজুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে তার খোজখবর নেন। এ সময় তিনি মফিজুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন চিকিৎসার জন্য।অবশ্য ইয়াকুব আলী সমকালকে জানান, এখন থেকে মফিজুর রহমানের চিকিৎসার খরচ তিনি বহন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০১ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৩৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit