ডেস্ক নিউজ : চলমান বৈশ্বিক মন্দা আগামী দিনে আরও প্রকট হবে। এই মন্দা মোকাবিলা করতে হলে বাংলাদেশকে এখন থেকেই জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। এজন্য সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বমন্দায় বাংলাদেশের দুটি খাতে প্রভাব পড়বে। প্রথমত, রপ্তানি কমবে। কারণ, বাংলাদেশের রপ্তানির বেশির ভাগই ইউরোপ-আমেরিকায় যায়। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। এতে চাহিদা কমবে। ফলে তারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেবে। ফলে গার্মেন্ট খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দ্বিতীয়ত, রেমিট্যান্স কমবে। যদিও বাংলাদেশের বেশির ভাগ রেমিট্যান্স আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। কিন্তু মন্দা এলে ওইসব দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে তেলের চাহিদা কমবে। ফলে প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ও কমবে।
তিনি আরও বলেন, আরব দেশগুলো ইতোমধ্যে তেলের উৎপাদন কমিয়ে দাম আবার বাড়িয়ে দিচ্ছে। তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের বিদেশ নির্ভরতা কমাতে হবে। কীভাবে দেশের ভেতরের উৎপাদন ও চাহিদা ঠিক রাখা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
ড. মির্জ্জা আজিজ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমবে বলে আভাস দিয়েছে। যদিও প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে রাখা হয়েছে। কিন্তু তা আগের চেয়ে কম। এ অবস্থায় বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও বাড়াতে হবে।
বিশ্বমন্দার বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা এলে বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়া খুবই স্বাভাবিক। কেননা বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বহুপাক্ষিকভাবে জড়িত। আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের বিষয়ে বৈশ্বিকভাবে জড়িত।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। ডলারের মূল্য ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে রিজার্ভে চাপ পড়েছে। কেননা পণ্যমূল্য ডলারের ওপর নির্ভরশীল। যে কারণে আমাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ। বেসরকারি হিসাবে তা আরও বেশি। দ্বিতীয়ত, আমাদের রপ্তানি আয় কমেছে। আগামী ৪/৫ মাসে তা আরও কমবে। তৃতীয়ত, রেমিট্যান্স কমেছে। যদিও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়।
এ অবস্থায় বিশ্বমন্দা এলে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তার মতে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুটি পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, ডলারের দাম যৌক্তিক জায়গায় রাখা। দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা। এটি করতে না পারলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
কিউএনবি/আয়শা/০৮ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:২৭