মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন

নোয়াখালীতে আশ্রয়ণের জরাজীর্ণ ঘরে ৪’শ পরিবারের দুর্ভোগ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১০৩ Time View
নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের মুকিমপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০টি ঘর এবং আন্ডারচর ইউনিয়নের পূর্ব মাইজচরা গ্রামের দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০টি ঘর জরাজীর্ণ হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুধু আশ্রয়ণের ঘরই নয়, পুকুরের চার পাড় ও খালের অংশে ভেঙে বাসিন্দাদের বসবাসের জায়গাও অনেকটা ছোট হয়ে গেছে। ফলে এসব আশ্রয়ণের ৪০০ পরিবারের সদস্যদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ।

উপজেলার মুকিমপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০০টি ও পূর্ব মাইজচরার ৫০টি ঘর দীর্ঘ ২২ বছর সংস্কারহীন রয়েছে। অপরদিকে গত ৯ বছর সংস্কারহীন রয়েছে পূর্ব মাইজচরার ১৫০টি ঘর। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি ঘরের টিনগুলো মরিচা ধরে ঝরে পড়ছে। অনেক আগেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে শৌচাগারগুলো। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারা সমাজের নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষ তার পরও ছাড়তে পারছে না আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। এখানে থেকে সন্তানদের নিয়ে বৃষ্টির দিনে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন তারা। মাঝেমধ্যে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রকল্প পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দিলেও উদ্বোধনের পর আর কোনো সংস্কারকাজ এখানে হয়নি বলে দাবি বাসিন্দাদের।

এতে প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী সহস্রাধিক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। বর্ষার পানি ঘরে পড়ে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। ঘর ও শৌচাগার সমস্যার বাহিরে রয়েছে পুকুর ও খাল পাড় ভেঙে বসবাসের জায়গা ছোট হওয়ার বেদনাও। উদ্বোধনের সময় বসবাসের যতটুকু জায়গা ছিল, পাড় ভেঙে এখন তার অর্ধেকে চলে এসেছে। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন, গৃহহীন এবং হতদরিদ্র মানুষের জন্য ১৯৯৯-২০০০ সালে নোয়াখালী সদরের অশ্বদিয়া ইউনিয়নের মুকিমপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২০০টি পরিবার মাথাগোঁজার ঠিকানা পায়। একই বছর সদরের আন্ডারচরের পূর্ব মাইজচরা গ্রামে মাথাগোঁজার ঠাঁই হয় ৫০ পরিবারের। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আন্ডারচরের পূর্ব মাইজচরা গ্রামে আরো ১৫০টি পরিবারের জন্য আশ্রয়ণের ঘরের ব্যবস্থা করে সরকার। তৎকালীন সময়ের অন-উন্নত এসব এলাকায় নানা সূচকে এখন উন্নয়ন হচ্ছে। পাল্টে যাচ্ছে মানুষের জীবনের গতি ও আয় রোজগার। কিন্তু সুদিন ফিরছে না আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী হতদরিদ্র এসব মানুষের।

তারা এখনো আশ্রয়ণের ঝরাজীর্ণ ঘরে জোড়াতালি ও প্লাষ্টিক টাঙ্গিয়ে কোনোরকম পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করছেন। ঘরের বাহিরে গিয়ে যে কিছু একটা করবে, সেই উপায়ও নাই। কারণ দীর্ঘ সময় বৃষ্টির স্রোতে পুকুর ও খালের গর্ভে চলে গেছে বসতের জায়গা। মুকিমপুর আশ্রয়ণের সভাপতি মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ঘরে একটি করে পরিবারকে সংস্থাপন করা হয়। তৎকালীন সময়ে পৃথক শৌচাগার ও সুপেয় পানি জন্য টিউবওয়েল বসানো ছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মাথায় ঘরের টিনগুলো মরিচা ধরে ঝরে ঝরে পড়তে থাকে। শৌচাগারগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়। পানি না ওঠায় চাপকলগুলোও পরিত্যক্ত হয়ে যায়। পুকরের চার পাড় ভেঙে বসতের জায়গা ছোট হয়ে গেছে।

কোথাও কোথাও চলাচলের রাস্তাও পুকুরে ভেঙে পড়ে গেছে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবাসন প্রকল্প এলাকায় সংস্কারের দাবি জানিয়েও  কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এ অবস্থায় নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ঘরগুলো জোড়াতালির সংস্কার করে কোনো রকম দিনাতিপাত করছে বাসিন্দারা। বর্ষার মৌসুমে নিজেদের উদ্যোগে পুকুর ঘাট ও রাস্তায় মাটি ফেলে কোনরকম চলাচলের উপযোগী করা হয়। পূর্ব মাইজচরা আশ্রয়ণের বাসিন্দা শাহ আলম, নুর জাহান, বিবি কুলসুম বলেন, আমাদের আশ্রয়ণের ঘরগুলোর টিনসব মুইচ্চা (মরিচা) ধরি ঝরি হরছে। আমরা প্লাষ্টিক ও তেরপাল (তাবু) টাঙ্গিয়ে কোনরকম থাকছি। হইরের হাড় (পুকুর পাড়) ও খালের পাশে ভেঙে আমাদের বসবাসের জায়গা ও চলাচলের রাস্তা ছোড (ছোট) অই গেছে। মেলা বার (অনেক বার) অফিসাররা আইছে, হেতারা কইছে ঠিক করি দিবো। কিন্তু অনও ঠিক করে নো। আমরা অসহায় মানুষ, কোনাই যামু, কার কাছে যামু। আঙ্গো এগুলা কি দেখার কেউ নাই।

অশ্বদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বাবলু বলেন, আশ্রয়ণের ঘরগুলো সংস্কার ও পুকুর পাড় ভরাটের জন্য একাধিক বার উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এই বিষয়টি উপজেলা সমন্বয় সভায়ও উপস্থাপন করেছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। একই কথা বললেন, আন্ডারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিনও। তিনি বলেন, ভুলুয়া খালের পাশের আশ্রয়ণটির বেশিরভাগ জায়গা পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। গাইড ওয়াল নির্মাণ করে মাটি ভরাটের জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাব রেখেছি। তা করা না হলে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটির ঘরগুলো বিলীন হয়ে যাবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ অবস্থার কথা স্বীকার করে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেছি। ঘরগুলো সংস্কারের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘরগুলো সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া, জেলা প্রশাসক মহোদয় পুকুর ও খাল পাড় মাটি ভরাটের মাধ্যমে সংস্কারের জন্য২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি পূর্ব মাইজচরার দুটি আশ্রয়ণের দুটি প্রকল্প এবং ২৪ মার্চ মুকিমপুর আশ্রয়ণের একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। প্রকল্পগুলো অনুমোদন হলে মাটি ভরাটের সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:২৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit