শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৪ অপরাহ্ন

মিয়ানমারে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ২৮১ Time View

ডেস্কনিউজঃ মিয়ানমারে অভ্যন্তরে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনীর তুমুলযুদ্ধ চলছে। সীমান্তরেখা বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সূত্রে এমন পরিস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মতে ইতোমধ্যে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে অনেক এলাকা। সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের কাউয়ার পাড়া, ফকিরাপাড়া, বলিবাজার, ঢেঁকিবনিয়া এলাকার বেশি ভাগ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। এসব এলাকার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহীরা ক্রমাগত শক্তি বাড়াচ্ছে। ফলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও আক্রমণ বাড়াচ্ছে। গেল ১ মাসের বেশি সময় ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এ পারের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি এলাকার ২৪ হাজার মানুষ মারাত্মক আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এসব গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ শোনা যায়।

৫ নম্বর পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে একটানা গোলাগুলি ও মর্টারের গোলার বিকট শব্দ হচ্ছে। এসব গোলাগুলি ও মর্টারের গোলার শব্দে কেঁপে উঠছে উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়ার সীমান্তবর্তী বসতিগুলো। এর ফলে সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে। সকালে ৪৫ মিনিট গোলাগুলির পর আর কোনো শব্দ পাইনি। গোলাগুলি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, সীমান্তে শূন্যরেখার ৩০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা আসে। এরই মধ্যে জরিপ করে ঝুঁকিতে থাকা ১০০ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। যদি সীমান্তে কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে ঝুঁকিতে থাকা এসব পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পালংখালী ইউনিয়নের ধামনখালী, পূর্ব জমিদার পাড়া ও পূর্ব বালুখালী সীমান্ত এলাকায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের তালিকা প্রশাসনের
কাছে দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে মিয়ানমারের ছোড়া কয়েকটি মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের কোনারপাড়ায় ও শূন্যরেখার আশ্রয় শিবিরে। কোনারপাড়ার মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত না হলেও শূন্যরেখায় পড়া মর্টার শেলটি বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায় এক রোহিঙ্গা। এ সময় আহত হয় আরো ৫ জন। পরিকল্পিতভাবে মিয়ানমারের বাহিনী মর্টার শেল নিক্ষেপ করছে বলে দাবি রোহিঙ্গাদের।

এদিকে ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল সবচেয়ে বেশি ছিল এই ইউনিয়ন দিয়ে। ওই সময় ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিলেও ব্যতিক্রম ছিলেন ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। যারা ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর কোনারপাড়ার বিপরীতে শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নিকটেই অবস্থান নিয়ে ছিলেন। গত পাঁচ বছর ধরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এই শূন্য রেখায় অবস্থান করে মিয়ানমার সীমান্তের সকল পরিস্থিতি কাছ থেকে দেখে আসছেন। উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রয়রত রোহিঙ্গার ত্রাণ সহ সকল সহায়তার দায়িত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়। কিন্তু শূন্য রেখার রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। গত মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে সংঘাতময় পরিস্থিতি চলছে তার সবচেয়ে কাছের সাক্ষী শূন্য রেখার এসব রোহিঙ্গারা। এই শূন্য রেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নেতা দিল মোহাম্মদ।

তিনি জানান, তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মেদিপাড়ার বাসিন্দা। টানা ১০ বছরের বেশি সময় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মিয়ানমারের এসব সীমান্তবর্তী এলাকা তার চেনা-জানা রয়েছে। রোববার মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত টানা গোলাগুলি হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকলেও সোমবার সকাল ৯টা থেকে আবারো থেমে থেমে ছোড়া হচ্ছে আর্টিলারি ও মর্টারের গোলা। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, গোলাগুলি হচ্ছে একতরফাভাবে।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কী হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে শূন্য রেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের অপর নেতা মোহাম্মদ আরিফ জানান, মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের চেহারা ও পোশাক মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মতো। এখানে কে বিদ্রোহী কে সেনা সদস্য বোঝা মুশকিল। এতে বিদ্রোহীদের সুবিধা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কোনো রোহিঙ্গা ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখছেন না তিনি। তিনি জানান, যে এলাকায় সংঘাত সেখানে আগে থেকে রোহিঙ্গা শূন্য। যেখানে রোহিঙ্গা নেই সেখানে অনুপ্রবেশ কিভাবে করবে। যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তারা মংডুর কাছাকাছি। তারা মিয়ানমারের এ সীমান্তে পৌঁছার সুযোগ নেই।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি বা গোলার শব্দ হচ্ছে। এটা যদি উখিয়া সীমান্তের কাছে বসবাসরত বাসিন্দা বা জনপ্রতিনিধিরা বলে থাকে তাহলে সেটা ঠিক আছে। তবে আমরা সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছি। আর সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

কিউএনবি/বিপুল/২০.০৯.২০২২/ রাত ৯.২৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit