সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন

কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও ইবাদত

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ২১১ Time View

ডেস্ক নিউজ : সুযোগ থাকলে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। এতে মানুষের বেশি উপকার হয়। এর মাধ্যমে বহু মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা হয়। তাদের পরিবারে সচ্ছলতা আসে। তাদের পরিবারের সন্তান-সন্ততিরা শিক্ষিত হতে পারে। এ জন্য বলা যায়, অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারা অত্যন্ত মহৎ ইবাদত। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাতে নামাজে দণ্ডায়মান এবং দিনে সিয়ামকারীর মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)

কারো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দ্বারা শুধু ব্যক্তিবিশেষের খাদ্যের জোগাড় হয় না, বরং একটি পরিবার, তাদের আত্মীয়-স্বজনসহ বহু মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা হয়। যার সওয়াব কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকারীও পাবে ইনশাআল্লাহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো উত্তম পন্থার প্রচলন করল এবং লোকে তদনুযায়ী কাজ করল, তার জন্য তার নিজের পুরস্কার রয়েছে, উপরন্তু যারা তদনুযায়ী কাজ করেছে তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও সে পাবে, এতে তাদের পুরস্কার মোটেও হ্রাস পাবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৩)

এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যেকোনো ভালো কাজের সূচনা করলে বা কাউকে ভালো কাজের শিক্ষা দিলে, ভালো কাজ করার সুযোগ করে দিলে তার সমপরিমাণ সওয়াব সূচনাকারীও পাবে। অতএব কোনো ব্যক্তি সওয়াবের আশায় পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করলে যেমন সদকার সওয়াব পাবে, তেমনি যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য সদকায়ে জারিয়ার নিয়তে তাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবে, সেও সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। উপরন্তু উপকারভোগী ব্যক্তি যদি দ্বিনদার পরিবারের হয়, তাহলে তো এর সওয়াব আরো বেড়ে যাবে, তাদের দান-সদকাসহ সব আর্থিক ইবাদতের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াবও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকারী ব্যক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। তবে শর্ত হলো, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় করতে হবে।

তা ছাড়া অসহায়ের খাবারের ব্যবস্থা করা, সামর্থ্য থাকলে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। তিনি কাউকে ভিক্ষা দেওয়ার চাইতে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়াকে বেশি পছন্দ করতেন। আনাস ইবনে মালেক (রহ.) থেকে বর্ণিত, একদা নবী (সা.) এর কাছে এক আনসারি ব্যক্তি এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমার ঘরে কিছু আছে কি? সে বলল, একটি কম্বল আছে, যার কিছু অংশ আমরা পরিধান করি এবং কিছু অংশ বিছাই। একটি পাত্রও আছে, তাতে আমরা পানি পান করি। তিনি বলেন, সেগুলো আমার কাছে নিয়ে এসো, লোকটি তা নিয়ে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তা হাতে নিয়ে বলেন, এ দুটি বস্তু কে কিনবে? এক ব্যক্তি বলল, আমি এগুলো এক দিরহামে নেব। তিনি দুইবার অথবা তিনবার বলেন, কেউ এর অধিক মূল্য দেবে কি? আরেকজন বলল, আমি দুই দিরহামে নিতে পারি।

তিনি ওই ব্যক্তিকে তা প্রদান করে দিরহাম দুটি নিলেন এবং ওই আনসারিকে তা প্রদান করে বলেন, এক দিরহামে খাবার কিনে পরিবার-পরিজনকে দাও এবং আরেক দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে নিয়ে এসো। লোকটি তা-ই করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বহস্তে তাতে একটি হাতল লাগিলে দিয়ে বলেন, যাও, তুমি কাঠ কেটে এনে বিক্রি করো। পনের দিন যেন আমি আর তোমাকে না দেখি। লোকটি চলে গিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করতে লাগল। অতঃপর সে এলো, তখন তার কাছে ১০ দিরহাম ছিল। সে এর থেকে কিছু দিয়ে কাপড় এবং কিছু দিয়ে খাবার কিনল। রাসুল (সা.) বলেন, ভিক্ষা করে বেড়ানোর চেয়ে এ কাজ তোমার জন্য অধিক উত্তম। কেননা ভিক্ষার কারণে কিয়ামতের দিন তোমার মুখমণ্ডলে একটি বিশ্রী কালো দাগ থাকত। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৪১)

অতএব বোঝা গেল যে মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও মুমিনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি না হলে অভাবের তাড়নায় মানুষ বহু গুনাহের কাজেও লিপ্ত হতে পারে। মানুষের ঈমান ও চরিত্র নিলামে উঠতে পারে। তাই আমাদের উচিত সুযোগ পেলেই মানুষের উপকার করা। বেশি বেশি দান-সদকা করা। সামর্থ্য থাকলে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১১ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ১২:৪৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit