রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন

‘আমার কেউ নাই, কে করে দেবে ঘর?’

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২২
  • ২৬১ Time View

ডেস্ক নিউজ : চারিদিকে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। হেলে পড়েছে টিনের চাল। ভাঙ্গাচোরা জরাজীর্ণ ঘরের মধ্যে পুরনো একটি চৌকির ওপর শুয়ে আছেন পঁয়তাল্লিশ বছরের এনামুল হক। চৌকির ওপর ছেঁড়া কয়েকটা জামাকাপড়, কাদামাখা কয়েকখানা কাঁথা আর ধুলোর আস্তরণে ভরা বালিশ পড়ে রয়েছে মাথার পাশেই। মাথায় বাবরি চুল, মুখ ভরা দাড়ি নিয়ে এভাবেই প্রায় একযুগ ধরে সেই জরাজীর্ণ টিনের ঘরে বসবাস মানসিক ভারসাম্যহীন এনামুলের। 

সরেজমিন গিয়ে এনামুলকে কেমন আছেন? এমন প্রশ্ন করতেই তার সোজাসাপ্টা উত্তর ছিল ‘জানি না’। এমন জরাজীর্ণ ঘরে থাকতে কষ্ট হয় না? এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘কী করবো? এই ঘরেই থাকা লাগবি! কোথায় যাবো? আমার কেউ নাই! কে করে দেবে ঘর?’

দেখা যায়, ভাঙ্গাচোরা একটি চৌকির ওপর বিধ্বস্ত অবস্থায় শুয়ে আছেন এনামুল। রাস্তার পাশেই জরাজীর্ণ সেই ঘর। সূর্যের আলো ভাঙ্গাচোরা ঘরের ভেতরটা আলোকিত করলেও কিন্তু অন্ধকার হয়ে গেছে এনামুলের জীবন। সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী চলে যাওয়ার পর এখন সে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন! স্বজনরা একবার পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে দায় সেরেছেন। এর মধ্যে মারা যান এনামুলের বাবা-মা।

এরপর আর কখনই এনামুলের চিকিৎসা করানো হয়নি। সারা দিন শুয়ে শুয়ে প্রায় একযুগ কাটিয়ে দেওয়া এনামুল এখন সবার বোঝা! এক সময়ের কর্মঠ এই যুবকের কাছে জীবনের ভালো মন্দের বিবেচনা করার সময় নেই। কেউ খাবার দিলে তবেই খাবার জোটে, নয়তো কখনো সখনো না খেয়েই কাটিয়ে দেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা!

প্রতিবেশীদের গোয়ালঘর যতটা সুসজ্জিত ততোটাই জরাজীর্ণ এনামুলের শোবার ঘর। ঝড়-বৃষ্টি এলেও নির্লিপ্তভাবে বৃষ্টিতে ভিজে শুয়ে থাকে। এনামুলের এমন দুরবস্থা দেখে এলাকাবাসীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার একটি নতুন ঘরের কথা বলেছেন। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি।

শাহেদ হোসাইন নামে স্থানীয় এক যুবক যুগান্তরকে বলেন, এনামুল নামের এই মানুষটা এক সময় খুব পরিশ্রমী ছিলেন। কিন্তু সন্তানকে নিয়ে স্ত্রীর চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি! এক সময় সন্তানের জন্য খুব কাঁদতেন। পরবর্তীতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে সব ভুলে গেছেন। তবে বর্তমান সময়ে একজন মানুষ এমন দুরবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করবেন এটা ভাবতেই কষ্ট হয়। মানুষের গোয়াল ঘরও এর চেয়ে সুন্দর হয়। অসহায় এই মানুষটির জন্য একটা ঘর খুবই প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাণ্ডিয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল করিম মাস্টার যুগান্তরকে বলেন, সত্যিই এনামুল খুব কষ্টে জীবনযাপন করে। ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে ঘরের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ মহল যুগান্তরকে বলেন, আমি এই উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি আমি জেনে অসহায় ওই মানুষটির জন্য যা যা প্রয়োজন সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৮ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit