ডেস্কনিউজঃ গম ও ভুট্টা চাষীদের উৎপাদন বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই প্রণোদনা প্যাকেজে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ০.৫ শতাংশ সুদ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই স্কিমের মেয়াদ আগামী ৩০ই জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তবে প্রয়োজনে এই মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়।
সার্কুলারে বলা হয়, দেশে গম ও ভুট্টার পর্যাপ্ত চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উক্ত শস্যগুলোর উৎপাদনের পরিমাণ যথেষ্ট নয়। এ কারণে দেশে গম, ভুট্টা ও এগুলো হতে উৎপাদিত খাদ্য দ্রব্যাদির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে প্রতি বছর গম ও ভুট্টা আমদানি করার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। এপ্রেক্ষিতে দেশে গম ও ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে এক হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতাভুক্ত ব্যাংকসমূহের মধ্যে ইচ্ছুক ব্যাংকসমূহকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের সাথে একটি অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। অংশগ্রহণ চুক্তি সম্পাদনকারী ব্যাংকসমূহের অর্থবছর ভিত্তিক চাহিদার ভিত্তিতে উক্ত ব্যাংকসমূহের অনুকূলে তহবিল বরাদ্দ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনের নিরিখে বরাদ্দের পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের পর পেশকৃত পুনঃঅর্থায়ন দাবী পর্যালোচনাপূর্বক পর্যায়ক্রমে বরাদ্দকৃত তহবিলের সমপরিমাণ পুনঃঅর্থায়ন করা হবে।
কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের বিষয়ে সার্কুলারে বলা হয়, এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহকে নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।
গম ও ভুট্টা চাষের উপযোগী অঞ্চলসমূহে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় উল্লেখিত গম ও ভুট্টা চাষের ঋণ নিয়মাচার অনুযায়ী ব্যাংকসমূহ কৃষকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা’র ৬.১৯.৬ অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত ভূমিহীন কৃষক (যাদের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একরের কম), ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক (যাদের জমির পরিমাণ ০.৪৯৪ একর থেকে ২.৪৭ একর) এবং বর্গাচাষিদেরকে এ স্কিমের আওতায় এককভাবে জামানত বিহীন (শুধুমাত্র ফসল দায়বন্ধনের বিপরীতে) সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা যাবে। এছাড়া উপরে বর্ণিত কৃষক ব্যতিত অন্যান্য কৃষকের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক এ স্কিমের আওতায় বিতরণ করতে পারবে। এ স্কিমের আওতায় গৃহীত ঋণ দ্বারা কোনভাবেই পুরাতন ঋণ সমন্বয় করা যাবে না। সিআইবি রিপোর্ট অনুযায়ী কোন কৃষক/গ্রাহক খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে এ স্কিমের আওতায় ঋণ প্রাপ্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে।
সুদ বা মুনাফা হারের বিষয়ে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, এ স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নির্ধারিত ০.৫০ শতাংশ সুদ বা মুনাফা হারে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাবে। কৃষক পর্যায়ে সুদ বা মুনাফা হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ (সরল হারে)। উক্ত সুদ/মুনাফা হার সকল গ্রাহকের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য হবে।
ঋণের মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়, কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ফসল উৎপাদনের পঞ্জিকা ও ঋণ পরিশোধ সূচিতে উল্লিখিত গম ও ভুট্টা চাষের উৎপাদন পঞ্জিকা ও পরিশোধ সূচি অনুযায়ী কৃষক পর্যায়ে বিতরণকৃত ঋণের মেয়াদ নির্ধারিত হবে। অংশগ্রহণকারী ব্যাংকসমূহ পুনঃঅর্থায়ন গ্রহণের তারিখ হতে অনধিক ৮ মাসের মধ্যে আসল এবং সুদ বা মুনাফা (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ০.৫০ শতাংশ সুদ বা মনাফা হরে) পরিশোধ করবে।
এর আগে করোনায় সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল। ঋণ বিতরণের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছিল। এই স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব এ তহবিল থেকে জামানতবিহীন ও সহজ শর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ নিতে পারছেন কৃষকরা। তহবিলের আওতায় অংশগ্রহণকারী ব্যাংক নিজস্ব কৃষক ও গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ করবে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের জন্য এককভাবে জামানতবিহীন সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ঋণ পাবেন কৃষক।
কিউএনবি/ বিপুল/২৫.০৮.২০২২/ বিকাল ৪.১১