এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় অবৈধ ভাবে সরকারি খালে ব্রীজের মুখে কংক্রিটের ঢালায়ের বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার ২৪ আগস্ট উপজেলার বইশাগাড়ি খালে গিয়ে সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। ওই বাঁধ তিনদিনের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
আদালত সুত্রে জানা যায়, স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা ও স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেক্সগুরপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা বইশাগাড়ি খালেরহাজারাখানা বিজ্র এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অবৈধ ভাবে রড-সিমেন্ট দিয়ে ব্রীজের মুখে ঢোলাই করা বাঁধ আগামী তিন দিনের মধ্যে নিজ দায়িত্বে মাসুদ আহাম্মেদকে অপসারণের নির্শেদ দেন তিনি। একইসাথে ওই জলাকারের মাছ বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।এ সময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ, স্বরুপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা বলেন, এ সময় অবৈধভাবে কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে দখল করে মাছ চাষকারী মাসুদ আহমেদ আদালতকে বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথকে টাকা দিয়ে তিনি সেখানে মাছ চাষ করছেন, যা তাদের যশোরের উপ-পরিচালকও জানেন। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করলেও মাসুদ আহমেদ তার দাবিতে অটল থাকেন এবং মৎস্য কর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ এক পর্যায়ে নিরব হয়ে যান। এমনকি মাসুদ আদালতের সামনেই মৎস্য বিভাগের যশোরের উপ-পরিচালককে মোবাইলে কল করেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার স্বরুপদাহ ও নারায়নপুর ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারনকারী বইশাগাড়ি খালটি দিয়ে স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা, আন্দারকোটা, খড়িঞ্চা নওদাপাড়া, বাজে খড়িঞ্চা, টেক্সগুরপুর, নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা ও বুন্দেলীতলা, পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার ১৫/২০টি গ্রামের মাঠের অতিরিক্ত পানি চৌগাছার টেক্সগুরপুর হয়ে কপোতাক্ষ নদে নিস্কাশন হয়।
গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারি একটি প্রকল্প দিয়ে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে খালের টেক্সগুরপুর পাশের প্রায় ৫০০ মিটার খনন করা হয়। এরপরই সেটি দখলে নেন জনৈক মাসুদ আহম্মেদ। তিনি আরো কয়েকজনকে নিয়ে খালের ওই অংশকে ভেড়ীতে রুপান্তর করে অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করে আসছেন। খালে স্থানীয়দের গোসল করতেও নামতে দেননা তিনি। খালের ওই অংশে তার মাছ চাষের সুবিধার্থে টেক্সগুরপুর অংশের হাজরাখানা ব্রিজের নিচে তিনি রড-সিমেন্ট দিয়ে কংক্রিটের ঢালাই করে বাঁধদিয়েছেন। যেন পানি কোনোভাবেই কপোতাক্ষ নদে পড়তে না পারে। এতে গত কয়েক বছর ধরে উজানের গ্রামের মাঠের বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত পানি এসে অপেক্ষাকৃত ভাটির হাজরাখানা গ্রামের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। গত বছর আমনের মৌসুমে এই জলাবদ্ধতায় ওই মাঠের প্রায় একশ একর জমির ধান নষ্ঠ হয়ে যায়। মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টিতে একই অবস্থার সৃষ্টি হয় চলতি বছর বোরোতে। তখনও হাজরাখানা ও আন্দারকোটা গ্রামের কয়েকশ একর জমিতে চাষের জন্য করা বীজতলা অতিরিক্ত জলাবদ্ধ হয়ে স¤পূর্ণ নষ্ঠ হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সে সময় স্থানীয়রা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত এবং মৌখিকভাবে অভিযোগও দেন। তবে সেসময় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তিনজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ায় কোন সমাধান হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, ওই খালে প্রতি মৌসুমেই সরকারিভাবে মাছ অবমুক্ত করা হয়। সে সময় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। অথচ তারা দখলমুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা নেন না। তবে উপজেলা মৎসকর্মকর্তা হরিদাস দেবনাথ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তারা অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করছেন। খাল খননের পর ওইস্থান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইজারা দিলে শুধুমাত্র তারাই ইজারা দিতে পারেন। ঘটনাস্থলে ওই ব্যক্তি বলেছেন এডি স্যারও বিষয়টি জানেন।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, সেখানে ব্রীজের মুখে অবৈধভাবে রড-সিমেন্ট দিয়ে কংক্রিটের বাঁধ দেয়া ছাড়াও কপোতাক্ষ নদের আরো কাছে অস্থায়ী পাটা বাঁধওদিয়েছেন তারা। বাঁধ দুটি তিনদিনের মধ্যে উঠিয়ে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাওই অবৈধ জলাকারের মাছ ধরে বিক্রি করে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারি খাল স্থানীয় জনসাধারণের জন্য। কোনোভাবেই সেখানে অবৈধ দখলদারদের মাছ চাষ করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/২৪ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:১৫