ডেস্ক নিউজ : ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে নিজের মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে পারলেও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে সেই মুক্তিযোদ্ধা নিজের পৈতৃক ভূমি রক্ষা করতে পারছেন না প্রভাবশালীদের কারণে। অসহায় এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প বীরনিবাস প্রকল্পে একটি ঘর পেলেও তা নির্মাণে বাধা দেওয়ায় অবশিষ্ট থাকা ভিটেমাটিও হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের আষ্টা গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা খোকন চন্দ্র সরকারের পরিবারের চিত্র এটি।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, বীরনিবাস নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ সকল কাগজাদি দেখেই বীর নিবাসের ঘর তৈরির অনুমোদন দেন। কিন্তু প্রভাবশালী আনোয়ার চৌধুরী গংরা আদালতকে এটি প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার প্রকল্প বীরনিবাস বিষয়ে কিছুই জানায়নি। ফলে গত ১১ আগস্ট থেকে ভবন নির্র্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের অস্তিত্ব । সরেজমিন জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্ব থেকে খোকন চন্দ্র সরকার গংরা বসবাস করছেন গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের আষ্টা গ্রামে (আষ্টা মৌজা খতিয়ান ৫৬৪ দাগ নং ৬৭০ জমির পরিমাণ ৬ শতক) তার নিজ সম্পত্তির ওপর। বীরনিবাস প্রকল্পের নির্মাণ কাজ গত ৬ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত চললেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা বন্ধ রয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা খোকন চন্দ্র সরকার বলেন, আমরা স্বাধীনতার পুর্বে থেকে এখানে বসবাস করি। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের প্রতিপক্ষ প্রভাশালী আব্দুল আওয়াল চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আব্দুল রহিম চৌধুরী গংরা পুরো বাড়ি দখল করার জন্য আমার এক ভাইয়ের জমি কৌশলে ক্রয় করে। তারপর থেকেই তারা আমাদের বাড়ি ছাড়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় এবং আদালতে মামলাও করে। আদালতে আমি তিনবার রায় পেয়েছি। তারপরও তারা বসে থাকেনি বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমাদের ঘর না থাকার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস প্রকল্প দেয়।
সম্প্রতি ভাঙাচোরা ঘর সরিয়ে ভবন তৈরির সময়ে তারা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের হয়রানি শুরু করেছে। আমাদের কাজে বাধা প্রদান করে বন্ধ রেখেছে। তিনি আরও বলেন, আবাসন প্রকল্প যখন আসে, তখন ভুমি অফিস থেকে যাচাই বাছাই করেই চুড়ান্ত করা হয়েছে। কিন্তু অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে প্রভাবাশালীরা আমাকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছেন। আমি ইতিমধ্যেই চাঁদপুর জেলা প্রশাসক ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দারস্থ হয়েছি। যুদ্ধ করেছি দেশের মাটি রক্ষায়, এখন নিজেই ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় রয়েছি।
এ ব্যাপারে আনোয়ার চৌধুরী গংদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সরোয়ার হোসেন জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে সহকারী কমিশনারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে শুনানির সময়ে প্রভাবশালীদের এ হীনকাজের বিরোধিতা করেছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমুন নেছা জানান, সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিউএনবি/আয়শা/২০ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:৩৪